.
চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। এ সফর বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে গভীর করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও। বলা দরকার, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। এর ফলে চীনের সঙ্গে রফতানি বহুমুখীকরণ এবং সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)সহ আলোচনার জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত হয়। ২০১৪ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে কূটনৈতিক দক্ষতা প্রদর্শনের ফলস্বরূপ কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেল অর্থায়নে চীনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শেখ হাসিনার অনুরোধে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সরাসরি অনুমোদনে বাস্তবতার মুখ দেখে কর্ণফুলী টানেল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অনন্য এক অর্জন হয়ে আছে। পরে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করে। ওই সফরে দুই দেশ প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ২১টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীর আন্ডারওয়াটার টানেল ইত্যাদির মতো বড় প্রকল্পে সহযোগিতা করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে ওঠে। এ পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে ২১টি সেতু, ১১টি মহাসড়ক নির্মাণে সহায়তা করেছে। এছাড়া ২৭টি জ্বালানি শক্তি ও বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অসংখ্য প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে চীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার খুলতে চলেছে, বলা যায়। সুযোগ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও। এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বেজিংয়ে ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শুধু অবকাঠামো, জ্বালানি ও লজিস্টিক খাতেই নয়, সেই সঙ্গে আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতেও বড় পরিসরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকালে চীনের সঙ্গে ২১টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি এবং ৭টি ঘোষণাপত্রে সই করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২টি সমঝোতা স্মারক নবায়নও হয়েছে। এক বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া বড় প্রাপ্তি। এখন এটা পরিষ্কার যে, চীনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ভুগছে। বিষয়টি সম্পর্কে চীনের প্রেসিডেন্ট সম্পূর্ণ অবগত এবং আন্তরিকভাবে সহানুভূতিশীল। তিনি নিজ থেকেই জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে, চীন বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চীনের বহু পণ্য এদেশে আমদানি হয়ে থাকে। সে তুলনায় আমাদের দেশের পণ্য সেদেশে রপ্তানি হয় কম। বাণিজ্য ভারসাম্য কমাতে তাই চীনে রপ্তানি বৃদ্ধির দিকে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। চীন অর্থায়ন করেছে পদ্মা রেলসেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বড় প্রকল্পেও। কাজেই এ ধারাবাহিকতা শুধু ধরে রাখাই নয়, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলে প্রকৃতপক্ষে তা বাংলাদেশের জন্য সুফলই বয়ে আনবে।