ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

চামড়া শিল্প কর্তৃপক্ষ

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৮ জুলাই ২০২৪

চামড়া শিল্প কর্তৃপক্ষ

সম্পাদকীয়

অনেক বিলম্ব হলেও সরকার তথা শিল্প মন্ত্রণালয়ের বোধোদয় ঘটেছে শেষ পর্যন্ত। পোশাক খাতের পরেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৪’ শীর্ষক একটি আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে নিয়মিত দেখভালসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

এর ফলে, চামড়া শিল্প ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হবে। বিদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়বে বহুলাংশে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। উল্লেখ্য, এরকম একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী ও কার্যকর পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন দেশের চামড়া খাতের ব্যবসায়ী, শিল্প মালিকসহ সুবিধাভোগীরা। চামড়া ও  চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে আইনটি। তবে যত তাড়াতাড়ি এটি প্রণয়ন এবং একক চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে, দেশের জন্য তত তাড়াতাড়ি সুফল বয়ে আনবে।

দেশে সারাবছর যে পরিমাণ চামড়া পাওয়া যায়, তার ৫৫ শতাংশ পাওয়া যায় কোরবানির ঈদে। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রায়ই অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে  চামড়ার বাজারে। সে অবস্থায় একক কর্তৃপক্ষের অধীনে কোরবানির চামড়ার বেচাকেনা নির্ধারিত দামেই হবে বলে আশা করা যায়। তবে সবটা ছাপিয়ে যে বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়া শিল্পের স্বীকৃতি তথা সনদ না পাওয়া। মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় প্রক্রিয়াজাত চামড়াসহ পাদুকা শিল্পের বিশ্ববাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যসব দেশে বাংলাদেশী চামড়ার ক্রেতা ও কদর নেই বললেই চলে। চামড়া শিল্প পোশাক খাতের মতো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক কমপ্লায়েন্স বা পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত চামড়া। পাদুকা শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক দামও জুটছে না। বৈশ্বিক কমপ্লায়েন্স অর্জনে দেশের চামড়া খাতে আরও বিনিয়োগসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনকে। 
সাভারে ১৯৯ একরের বেশি জমির ওপর চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠলেও সেটির অবস্থা মোটেও ভালো নয়। পরিবেশ দূষণ রোধে বিসিকের উদ্যোগে ৫৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের সহায়তায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মিত হলেও তা অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত ও অকার্যকর। একদিকে যেমন কঠিন বর্জ্য স্তূপীকৃত হচ্ছে, অন্যদিকে তরল বর্জ্য তথা দূষিত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। ফলে, ঢাকার বুড়িগঙ্গার মতো পরিবেশ দূষণ চলছেই। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি।

শ্রমিকদের মজুরিসহ কর্মপরিবেশও অনুকূল নয়। এ নিয়ে উতোর চাপান খেলা চলছে চামড়া শিল্প মালিক ও বিসিকের মধ্যে। এ বিষয়ে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, চামড়া শিল্পনগরীর দায়-দায়িত্ব বিসিকের পরিবর্তে বেপজার অধীনে ন্যস্ত করা হোক। তবে শেষ পর্যন্ত একক একটি চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করা সম্ভব হবে বলেই প্রত্যাশা।

×