ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার বিদায়

প্রকাশিত: ২১:১৪, ৭ জুলাই ২০২৪

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার বিদায়

.

মানুষের মৃত্যু অবধারিত। তবু কোনো কোনো মৃত্যু আমাদের নাড়া দিয়ে যায়। কিভাবে কখন মৃত্যু হলো, এসব বিষয় নিয়েও আমাদের কৌতূহল থাকে। ভিন্নরকম কিছু হলে অজান্তেই আমাদের কণ্ঠ দিয়ে ধ্বনি নিঃসৃত হয়ে ওঠে- আহা! অশ্রুসজল হয়ে ওঠে চোখ। দেশের প্রতিভাবান দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের প্রস্থান যেন তেমনই। শুধু সতীর্থ নিকটজনই নয়, তাকে হারিয়ে কেঁদেছেন বহু মানুষ। কেউ তাকে চিনতেন, কেউ চিনতেন না। একইসঙ্গে আশ্চর্যের পীড়াদায়ক বিষয় হচ্ছে, তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তার জীবনের প্রিয়প্রাঙ্গণ, বলা যায় তার একান্ত নিজের স্থান দাবা খেলার মঞ্চেই। দাবা ছিল জিয়ার নেশা পেশা। মৃত্যুও হলো দাবা খেলতে খেলতেই

৪৮তম জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা চলছিল পল্টনে দাবা  ফেডারেশনে। জিয়া ১২ রাউন্ডে লড়ছিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের সঙ্গে। পাশের ঘরেই জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা বসে আছেন। অপেক্ষা কখন খেলা শেষ হবে। অকস্মাৎ চিৎকার শোনা গেল, ‘জিয়া ভাই ফ্লোরে পড়ে গেছেন।সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছুটে যান দাবার কক্ষে। গিয়ে দেখা গেল, জিয়া  মেঝেতে পড়ে আছেন অচেতন অবস্থায়। দ্রুত গাড়িতে করে শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে নেওয়া হয় তাকে। চিকিৎসকরা জিয়ার পালস (স্পন্দন) খুঁজে পাননি। দাবা খেলতে খেলতেই আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে তার।

১৯৭৯ সালে নিয়াজ মোরশেদ মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টারও। জিয়া ১৯৮৮ সালে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন ১৪ বছর বয়সে। জিয়া সর্বোচ্চ ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জাতীয় দাবায়। মানুষ হিসেবে জিয়া ছিলেন ভদ্র-নম্র। নানা অপ্রাপ্তির মধ্যেও জিয়াই ছিলেন বাংলাদেশের দাবার লড়াকু সৈনিক। নিজে প্রায় সব টুর্নামেন্টে খেলতেন, ফাঁকে ফাঁকে কোচিং করাতেন। জিয়া চলে  গেলেও দাবায় তার অবদান কীর্তি ক্রীড়াঙ্গন স্মরণ করবে বহুদিন। জিয়ার ছিল অনেক ছাত্র। শুধু তাদের স্মৃতিতে নয়, জিয়া বেঁচে থাকবেন দাবাপ্রিয় সবার স্মৃতিতেই। আগামী দিনের দাবা খেলোয়াড়রাও জিয়ার খেলার ধরন কৌশল থেকে প্রেরণা পাবেন।

জাতীয় দাবায় সর্বোচ্চবার শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি দাবা অলিম্পিয়াডেও জিয়াই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশিবার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার। ৫০ বছরের জীবনে তিনি বাংলাদেশী দাবাড়ুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিদে রেটিং অর্জন করেছিলেন। এবারের জাতীয় দাবায় সেরা পাঁচে থেকে সেপ্টেম্বরেই হাঙ্গেরিতে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে তার যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তিনি চলে গেলেন সব বন্ধন ছিন্ন করে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন আহমদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুব ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানসহ অনেকেই। শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দাবা ফেডারেশন। আমরাও শোকাহত পরিবারকে জানাই আন্তরিক সমবেদনা।

×