ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:১৩, ৭ জুলাই ২০২৪

যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী

.

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। এর ফলে দীর্ঘ ১৪ বছর পর দেশটিতে যথার্থ অর্থেই ইতিহাস গড়া নির্বাচনে লেবার পার্টির পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৪১২টি আসনে জিতেছে লেবার পার্টি। নিঃসন্দেহে নিরঙ্কুশ বিজয়। আসন সংখ্যায় লেবার পার্টি টনি ব্লেয়ারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে বিজয়ী হলেও দলটির সাফল্যের ঔজ্জ্বল্য কমেছে কিছুটা হলেও। জাতীয়ভাবে দলটির মোট ভোট প্রাপ্তির হার টনি ব্লেয়ার জেরিমি করবিনের নেতৃত্বে নির্বাচনগুলোতে পাওয়া ভোটের চেয়ে কম। দ্বিতীয়ত, লেবার পার্টি বরাবরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট বেশি পেলেও এবার তা কমেছে, বিশেষ করে মুসলিম ভোট। কিয়ার স্টারমার নির্বাচনের আগে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণায়, যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশও, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম ভোট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে লেবার পার্টি। কিয়ার স্টারমার নিজেও তার এলাকায় গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার ভোট কম পেয়েছেন।

অন্যদিকে, পরাজিত কনজারভেটিভ পার্টি গত প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে। এর প্রধান কারণ নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলটি একের পর এক পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। যাতে প্রমাণ হয় যে, দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দিনে দিনে প্রকট হয়েছে। তাদের শাসনামল চাপিয়ে দেওয়া কৃচ্ছ্রনীতি, দুর্দশাগ্রস্ত অর্থনীতি, জেঁকে বসা বৈষম্য এবং হতাশা থেকে মুক্তি লাভের কোনো পথ দেখাতে পারেনি জনসাধারণকে। ফলে, যুক্তরাজ্যবাসী সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল।

তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিয়ার স্টারমারের আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুব একটা সহজ হবে না। এমনিতেই তার টনি ব্লেয়ারের মতো তারকাদ্যুতি নেই। অন্যদিকে, বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও আগে কখনো মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পালন করেননি। নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা সুবিধাগুলো পুনর্বহালের অঙ্গীকার সম্পর্কে তার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। কৃচ্ছ্রের অবসান ঘটানোর কথা বললেও এর অর্থায়ন কিভাবে হবে, তা তিনি বলেননি। সেই হিসেবে লেবারের সরকার এখন যুক্তরাজ্যবাসীর কাছে মন্দের ভালো। তবে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে যখন জনতুষ্টিবাদের জয়জয়কার, তখন বাম প্রবণতার মধ্যপন্থি কিয়ার স্টারমারের সাফল্য কিছুটা হলেও স্বস্তির।

এই নির্বাচন গাজায় গণহত্যা, ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাজ্যের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি মূল ধারার রাজনীতির জন্য একটি কড়া বার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পর থেকে লেবার পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। দল হিসেবেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে এক ধরনের নৈকট্য। ফলে আশা করা যায় যে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি সংকট মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যা দূরীকরণ এবং অর্থনীতি সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধাবস্থা তিনি কিভাবে মোকাবিলা করেন, সেটাও দেখার বিষয়। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি বাণিজ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল থাকার নীতি অব্যাহত থাকছে অদূর ভবিষ্যতেও।

×