ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৬ জুলাই ২০২৪

দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা

দুর্নীতি এখন গরম সংবাদ

দুর্নীতি প্রতিরোধ শুরু করতে হবে ঘর থেকে। নিজেকে সংশোধন, স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সকল সদস্যকে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন দিতে হবে। এজন্য পাঠ্যবইয়ে দুর্নীতিবিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়

প্রচার মাধ্যমে দুর্নীতি এখন গরম সংবাদ। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউব, ফেসবুকসহ সকল প্রচার মাধ্যমে ঘুরছে বেনজীর, মতিউর কাহিনী। প্রতি দিনই প্রকাশ হচ্ছে নতুন সম্পদ বিবরণীসহ নতুন নতুন কিচ্ছা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানাজন, নানা প্রতিষ্ঠান। এদের সঙ্গে সঙ্গত থাকায় আসছে অনেকের কাহিনী। এমন কি মতিউরপুত্র যে প্রতিষ্ঠান থেকে ছাগল ক্রয় করেছিল, তারাও বাদ যাচ্ছে না। অবৈধ জমি দখল করে গরু-ছাগল চাষের জন্য উচ্ছেদ হয়ে গেছে তাদের প্রতিষ্ঠান।

ফেঁসে যাচ্ছেন এদের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাও। এসব সংবাদের পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন আসছে ঘুরে ফিরে। বিশেষ করে টেলিভিশন টকশো এবং বিরোধী দলের নেতারা প্রতিনিয়ত এসব প্রশ্ন তুলছেন, এসব ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে কিনা। সরকার সমর্থকরা এর জবাব দেওয়ারও চেষ্টা করছেন। কিছু জবাব গ্রহণযোগ্য হচ্ছে, আবার কিছুটা হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক।
বেনজীর আহমেদ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। জঙ্গিবাদ দমন, বিরোধী দলের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন মোকাবিলা এবং কিছু জাতীয় ইস্যুতে তার ভূমিকাও অনস্বীকার্য। অবসর গ্রহণের পর একটি পত্রিকা খুঁজে বের করে তার বিশাল সম্পদের পরিমাণ। দ্বিতীয় ঘটনা কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর। ফেসবুকে দামি কোরবানির ছাগল পোস্ট দেওয়ার পর শুরু হয় এর মালিক খোঁজার পালা। সামনে আসে মতিউর। শুরু হয় তার সম্পদ বিবরণী প্রকাশের প্রতিযোগিতা। বাদ যায়নি তার পারিবারিক কিচ্ছা কেলেঙ্কারি। মাঝখানে আসে আরও দু’একজন। সম্পদের পরিমাণ ভারি না হওয়ায় তারা চলে যান সাইডলাইনে। 
শুরু থেকে সরকার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক। দুর্নীতিবাজদের পক্ষ অবলম্বন দূরের কথা, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নেমে পড়ে তাদের অবৈধ সম্পদ খোঁজার কাজে। সরকারি দলের নেতারা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ যারাই হোক সরকার কাউকে প্রশ্রয় দেবে না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী নিজে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। সে যেই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে তাদেরই ধরা হবে। আমাদের জনগণ অত্যন্ত কর্মঠ, অত্যন্ত সৃজনশীল।

কিছু কিছু দুষ্ট প্রকৃতির থাকে, এদের ছাড়া হবে না।’ এর আগে ভারত সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি বিষয়ে তাঁর সরকারের অবস্থান বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘একজন মানুষের কত টাকা লাগে? এটা এক ধরনের নেশায় পরিণত হয় মনে হয়। লাভ কী হলো, এখন দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে, এই টাকা ভোগ করবে কে?’
প্রধানমন্ত্রীর দুটি বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, দুর্নীতি নিয়ে তার সরকারের অবস্থান স্পষ্ট।

দুর্নীতিবাজ যত প্রভাবশালী হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেমনটি দেওয়া হয়নি প্রভাবশালী সাবেক আইজিপি, ডিজি র‌্যাব এবং ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদকে। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না অনেক বিত্ত বৈভবের মালিক মতিউর রহমানকে। বেনজীর মতিউরের পথ ধরে আরও অনেক দুর্নীতিবাজ বের হয়ে আসবে। সমাজে উন্মোচিত হবে তাদের চেহারা। সরকারের এই অবস্থানে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার প্রশ্ন আসে না।
সাধারণত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে এক সময় দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছিল। দেশ দুটোতে এখনো দুর্নীতি রয়েছে তবে তা সহনীয় পর্যায়ে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণাপত্রের ২০২৩ সালের রিপোর্টে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের স্কোর ছিল যথাক্রমে ৫০ এবং ৪৩।

এই বছর ৯০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ নির্বাচিত হয়েছিল ডেনমার্ক এবং ১১ স্কোর পেয়ে সর্বোচ্চ দুনীতিবাজ দেশ হয়েছিল সোমালিয়া। এই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪। দুই দশক আগেও সোমালিয়া ছিল বিশে^র সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশ। বর্তমানে দেশটি দ্রুত উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। ক্রমশ দেশটির নাম যুক্ত হচ্ছে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক রাষ্ট্রের তালিকায়। এ কারণেই বেড়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরেও এক সময় দুর্নীতি হয়েছে।

১৯৮৬ সালে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের জাতীয় উন্নয়নমন্ত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন। সিঙ্গাপুর এখন প্রায় দুর্নীতিমুক্ত দেশ। গত বছর টিআইবির ধারণাপত্রে তাদের স্কোর ছিল ৮৩।
এসব তথ্য কোনোমতেই দুর্নীতিকে সমর্থন জানিয়ে নয়, বরং দুর্নীতি রোধের উপায় খোঁজার চেষ্টা। কোনো রাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়ে যায়, তখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কিছুটা কমে আসে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি পর্যায়ে প্রশাসনিকভাবেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়। প্রণয়ন করা হয় দুর্নীতিবিরোধী নানা ধরনের আইন। কেউ দুর্নীতি করলে মুখোমুখি হতে হয় মারাত্মক শাস্তির। অনেক দেশে দুর্নীতি কমাতে প্রাণদ-ের বিধানও চালু রয়েছে।

সৌদি আরবে দুর্নীতি ধরা পড়লে প্রকাশ্যে হাত কেটে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরের দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করেছিলেন লী কোয়ান, যাকে আধুনিক সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রের জনক বলা হয়। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের দুর্নীতিও কমে আসছে ধীরে ধীরে। দেশ দুটি উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শরিক হলে হয়তো সিঙ্গাপুরের মতোই দুর্নীতিমুক্ত হয়ে যাবে।
দুর্নীতির একটি মনোদৈহিক কারণও রয়েছে। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডার মতো রাষ্ট্রগুলোতে মানুষ দুর্নীতির চিন্তাও করে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, দুর্নীতি করে তাদের অর্থ উপার্জনের প্রয়োজন হয় না। ‘ওয়েল ফেয়ার স্টেট’ এর ধারাণায় ‘সামাজিক নিরাপত্তা’র সুবিধা পান প্রত্যেক নাগরিক। নিজের শেষ বয়সে কিংবা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তাদের অর্থ-সম্পদ রেখে যাওয়ার তাগাদা নেই।

রাষ্ট্রই নাগরিকের ভরণ-পোষণের সকল দায়িত্ব নিয়ে থাকে। সপ্তাহের পাঁচ দিন তারা টাকা উপর্জন করে, বাকি দুই দিন তা খরচ করে ফেলার ফর্মুলায় চলে অধিকাংশ মানুষ। উন্নত সমাজে তাই দুর্নীতিও কম হয়। তবে অর্থ উপার্জনের নেশায় যাদের পেয়ে বসে, তাদের কথা আলাদা। প্রধানমন্ত্রী তাই যথার্থই প্রশ্ন করেছিলেন, ‘একজন মানুষের কত টাকা প্রয়োজন?’ 
দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের দেশেও দুর্নীতির ডানা মিলেছে মারাত্মকভাবে। উন্নয়ন কর্মকা-ের কাজ বিতরণ, সরকারি ক্রয়, প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠানগুলোর চতুর্থ শ্রেণির কমর্কচারী নিয়োগেও দুর্নীতির সংবাদ পাওয়া যায়। এর সঙ্গে জড়িত দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কিংবা রাজনীতিক। প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে দুর্নীতির নানা সংবাদ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কারণে এগুলো প্রকাশিত হচ্ছে বাধাহীনভাবে।

সম্প্রতি মফস্বলের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গে। সরকারের দুর্নীতি দমন অভিযানে সংবাদগুলো কাজে লাগছে। শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রধান বাধা। উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রকে দুর্বল করে দেয় দুর্নীতি। আইনের শাসনকে বিঘিœত করে এবং দারিদ্র্যকে উস্কে দেয়। সশস্ত্র সংঘাতে দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে সমাজের শান্তি প্রক্রিয়া বিনষ্ট করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাড়া সরকারের কাছে বিকল্প নেই।  
মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে এমন সুযোগ নেই। স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করার ক্ষমতা দুই দেশের সংবাদ মাধ্যমের নেই। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কিছু কিছু রাজ্যে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথা ভাবা হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে দেশ দুটিকে। বিষয়টি সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশ সরকার অবাধ সংবাদ প্রবাহ উৎসাহিত করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার গঠনমূলক ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রচারে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

কিছু সংবাদ সরকারকে বিব্রতও করছে। তারপরও সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে না। উপরন্তু এসব সংবাদের সূত্র ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই সুযোগে অবশ্য কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম অসত্য, অতিরঞ্জিত কিংবা সম্পূর্ণ গুজবও প্রকাশ করছে। এসব সংবাদের বিরুদ্ধেও সরকারের কঠোর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। 
পরিস্থিতি যাই থাকুক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের সময় এসেছে। এভাবে দুর্নীতি চলতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ৪১ বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে। সরকারের সামনে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কারণে বাংলাদেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরের চেয়ে সহজ হবে। দুর্নীতি দমনে সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ অনেকটা এগিয়ে দিচ্ছে সংবাদ মাধ্যম।

তবে সংবাদ মাধ্যমকেও আর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তথ্য প্রবাহের স্বাধীনতার যেন অপব্যবহার না হয়, সেদিকে নজর রেখেই সংবাদ মাধ্যমকে চলতে হবে। তথ্যভিত্তিক সংবাদ যেমন- সরকারকে সাহায্য করতে পারে, তেমনি অসত্য, অতিরঞ্জিত তথ্য সরকারের কাছে বাধা সৃষ্টি করবে। বিভ্রান্ত হবে দেশের মানুষ। 

দুর্নীতি দমনে সরকার ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রণয়ন করা হয়েছে অনেক আইন। ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১’ শীর্ষক দলিলে দুর্নীতি দমনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল। দুর্নীতি দমনে গত এক দশকে প্রণীত হয়েছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’, ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’, ‘সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯’, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’, ‘জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’, ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’, ‘প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২’ ইত্যাদি।

এসব আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়। দুর্নীতিকে কেবল আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং সামাজিক আন্দোলন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’ জাতির পিতার আন্তরিক ইচ্ছার কারণেই স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বহুবিধ আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয়। দুর্নীতি প্রতিরোধ শুরু করতে হবে ঘর থেকে। নিজেকে সংশোধন, স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সকল সদস্যকে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন দিতে হবে।

এজন্য পাঠ্যবইয়ে দুর্নীতিবিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। শুধু পরিবার বা শিক্ষাঙ্গন নয়, দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি মানুষকে নৈতিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তুলে ধরতে হবে দুর্নীতির কুফলগুলো। বিদ্যমান আইনকানুন, নিয়মনীতির সঙ্গে দুর্নীতি দমনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে সবাইকে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×