ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্বমানের চিকিৎসা কবে

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৬ জুলাই ২০২৪

বিশ্বমানের চিকিৎসা কবে

সম্পাদকীয়

দেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন-অগ্রগতির অসামান্য কিছু নিদর্শন দৃশ্যমান হলেও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকমানের কোনো হাসপাতাল গড়ে ওঠেনিÑ যা দুঃখজনক। ফলে সর্বস্তরের মানুষ সাধারণ মানের চিকিৎসা সেবা পেলেও বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্বমানের চিকিৎসা প্রাপ্তি থেকে। সমাজের সচ্ছল ও ধনী ব্যক্তিরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে সক্ষম হলেও সাধারণ মানুষ এ ক্ষেত্রে বড় অসহায়।

দীর্ঘদিনের এই প্রতীক্ষার অবসানকল্পে ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগে সুবিশাল, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি গড়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত এটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে এর ১৪টি বিভাগে রোগী দেখা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা। ব্যস্্! ওই পর্যন্তই। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় সামান্য কিছু রোগী এবং চিকিৎসক-নার্সের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও সুবিশাল হাসপাতালটির অন্যান্য ফ্লোর ফাঁকাই পড়ে আছে। ফলে সেখানে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ। নতুন কোনো জনবলই নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বিএসএমএমইউর জনবল দিয়েই চলছে কোনোমতে। দুই বছরেও শুরু হয়নি নিয়োগ কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও আদৌ কোনো অগ্রগতি নেই। অলস পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ২৮৩ কোটি টাকার আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি।
দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক, সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি সর্বোপরি বিশেষজ্ঞ বিশেষায়িত চিকিৎসক ও নার্সের প্রকট সংকটের বিষয়টি সুবিদিত। কোভিড-১৯ অতিমারির দুই বছরে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অব্যবস্থা-অবহেলা-দুর্নীতি-অনিয়মসহ দুর্বলতাগুলো উন্মোচিত হয়েছে দেশবাসীর সামনে। এর বাইরেও ভালো ও উন্নত চিকিৎসাসহ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে।

এসব সমস্যা-সংকটের সমাধানে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে পাঁচ তারকাবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে অবকাঠামোগত নির্মাণের কাজ কোরিয়ান হুন্দাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়। পঞ্চাশ শতাংশ বিদেশী যন্ত্রপাতি বসানোর কাজও শেষ। বাকি পঞ্চাশ শতাংশ বসছে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং-এর সহায়তায়। ৭৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিতে অর্থ সহায়তা করেছে কোরীয় সরকার।

বিশাল হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সেই দেশের সরকার দিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। বলা হয়েছে, এটি দেশে আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। বাস্তবে সকলই গরল ভেল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি ব্যর্থ প্রকল্প।

নবনিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ দক্ষ জনবল সংকট। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে জনবল নিয়োগের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। সেটি পাওয়া গেলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষায়িত হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হবে। যত দ্রুত এটি সম্পন্ন হয়, দেশবাসীর জন্য ততই মঙ্গল।

×