ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

সত্যিই কি কৃচ্ছ্রসাধন

-

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৬ জুলাই ২০২৪

সত্যিই কি কৃচ্ছ্রসাধন

সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আবারও সরকারি সব ধরনের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। সব ধরনের যানবাহন ক্রয়ও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃচ্ছ্রসাধন কোনো সাধনার বিষয় নয়, এর জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। মিতব্যয়িতা বিচক্ষণতার লক্ষণ।

অপচয়, অপব্যয় কখনোই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতিতে ব্যয়সাশ্রয়ী নীতিমালা উপকার বয়ে আনবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যক্তি ও পরিবারের বেলায় ব্যয় সংকোচন ও কৃচ্ছ্রসাধন যেমন জরুরি, তেমনি আবশ্যক হচ্ছে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে সব ধরনের ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া। নতুন অর্থবছর মাত্র শুরু হয়েছে। এই সময়েই যদি মিতব্যয়িতার শুভ সূচনা করা সম্ভব হয়, তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বার্ষিক বাজেটে। জাতীয় জীবনে যেমন উন্নতি পরিলক্ষিত হবে, তেমনি সমাজেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। 
সরকারি কর্মকর্তাদের খরচে লাগাম টানার নীতি আগেও গ্রহণ করেছে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর হবে এ সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, সরকারি খরচ কমাতে বিগত দুটি অর্থবছরেও যানবাহন, বিদেশ ভ্রমণসহ বেশ কয়েকটি খাতে ব্যয় স্থগিত করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণে যেতে দেখা গেছে।

তখন এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। আশা করা যায়, এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। এ বিষয়ে মনিটরিং জোরালো করতে হবে। সরকার কঠোর বটে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কতটা আন্তরিক হবে, সেটি বড় প্রশ্ন। নিকট অতীতে খুব এটা ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়নি।
পরিপত্রে বিদ্যুৎ, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নিজ পকেট থেকে অর্থ সংকুলানের সময়ই আমরা সতর্ক ও সচেতন থাকি। বাতি জ্বালানো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার ও ব্যক্তিগত মোটরগাড়ির জ্বালানি কেনায় থাকি মিতব্যয়ী। কিন্তু সরকারি কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং গাড়ির ব্যয়ে যথেচ্ছ থাকতে দেখা যায় অনেককে। এটাই যেন হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি। 
দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকার থাকলে এমনটি কখনোই ঘটতে পারে না। প্রতিটি সরকারি কার্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে আলাদাভাবে কৃচ্ছ্রসাধননীতি নিশ্চিত করায় উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমনেও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ করা গেলে সত্যিকারের অর্জন হবে।

×