ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

দরিদ্রজনের ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ২০:২৩, ৫ জুলাই ২০২৪

দরিদ্রজনের ভবিষ্যৎ

.

জগতের প্রতিটি মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলোয় কোনো বৈষম্য নেই। আয়বৈষম্যের ফলেই মানুষে মানুষে ব্যবধান। ব্যয় করার সক্ষমতা থেকেই ধনী-গরিব পৃথকত্ব। জাগতিক নিয়মেই একদিন ব্যক্তি বৃদ্ধ হন, তার কর্মশক্তি তথা উপার্জনশক্তি কমে আসে। এক পর্যায়ে বয়সজনোচিত সংকটে পড়েন। সে সময়ে অর্থের জোগান আসবে কোথা হতে? অন্যের গলগ্রহ হয়েই কি তিনি বেঁচে থাকবেন? অবসর জীবনের জন্য যদি তার সঞ্চয় থাকে, তিনি যদি পেনশন পান, তাহলে তিনি আত্মসম্মান বজায় রেখে জীবন সায়াহ্নে জীবন উপভোগে সক্ষম হন। দেশে গত বছর থেকে যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে তাতে দরিদ্রের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এর পেছনের কারণ হলো এই স্কিমের সম্ভাবনা সম্পর্কে মানুষ আস্থাশীল হয়ে উঠছে।

প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে অবসর ভাতার আওতায় আনার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর যে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন সেটি নিঃসন্দেহে দেশের সামাজিক সুরক্ষা খাতে একটি মাইলফলক। প্রথম দিনেই দেশবাসীর মধ্যে পেনশন স্কিম নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, এই পেনশন স্কিম দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। দিনে দিনে প্রধানমন্ত্রীর কথাটির তাৎপর্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে একটি ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রসঙ্গটি এসেছিল। অবশেষে সরকার গত বছর আগস্ট মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর কার্যক্রম শুরু করেছে।

সম্প্রতি সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাস্তবায়নে আরও গতি আনার লক্ষ্যে ৭টি ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নিঃসন্দেহে স্বস্তিকর সংবাদ। দরিদ্রদের জন্য করা সমতা স্কিমে পর্যন্ত আড়াই লাখ প্রান্তিক মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিজীবীরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চাঁদা দিয়েছেন। পেনশন  কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্নকারীদের ৭৬ শতাংশই দরিদ্র, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। মানুষ বুঝতে পারছে ৫০০ টাকা দিলে সরকার আরও ৫০০ টাকা দেবে, এতে ভবিষ্যৎ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মানুষ বুঝতে পারছে বলেই করছে। এদিকে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সবচেয়ে বেশি চাঁদা জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। এই স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৭৯৩ জন। তবে বলা দরকার, ‘প্রত্যয়পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে কর্মবিরতি পালন করছেন।

আমরা আগেও বলেছি, বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা  ধারণাটি নতুন এবং বাস্তবায়নেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার সংক্রান্ত বিশেষ কর্তৃপক্ষ গঠন, তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং পেনশন ব্যবস্থার যেসব শর্ত দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তাই এটি সব শ্রেণির মানুষের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা জরুরি। পুরো ব্যবস্থাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার আবশ্যকতা রয়েছে। সর্বোপরি সর্বস্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে জোর দিতে হবে।

×