ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

সম্পদের হিসাব

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৪ জুলাই ২০২৪

সম্পদের হিসাব

সম্পাদকীয়

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব বিবরণী সময় সময় দাখিল সংক্রান্ত সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিধিমালা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ৩ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিবাদীদের। উল্লেখ্য, এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন একজন আইনজীবী।

রিট মামলার শুনানিতে সাম্প্রতিককালের সরকারি অনেক কমকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টি উঠে আসে। এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নের অন্তরায়। যে কোনো মূল্যে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের লাগাম টেনে ধরতে হবে। যদি এটি জরুরিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হয়, তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
অবশ্য বিষয়টি যে নতুন তা নয়। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ১৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সময়ে সময়ে ওই সম্পদ বিবরণীর হিসাব পুনরায় দাখিলের নিয়মও রয়েছে। তবে তা প্রকাশের বিধান নেই। বিধিমালা থাকলেও প্রায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই তা আদৌ আমলে নেন না। বিপরীতে গড়ে তোলেন বিপুল সম্পদের পাহাড় বিভিন্ন অনিয়ম-ঘুষ-দুর্নীতিসহ বেআইনি কার্যকলাপের আড়ালে।

গত কয়েক বছরে প্রায় সর্বস্তরে দুর্নীতি-অনিয়মসহ বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েই চলেছে। জাতীয় সংসদে এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রয়াত এক সাবেক অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলারা বিদেশে অনেক বেশি অর্থ পাচার করেন। সম্প্রতি সংঘটিত কয়েকটি চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে থলের কালো বিড়াল। এ রকম এক সময়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ গভীর তাৎপর্য বহন করে নিশ্চয়ই।

এ প্রসঙ্গে দুদকের কৌসুলী যথার্থই বলেছেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় যাদের বাইরে রাখা হয়েছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে এটার সংশোধন জরুরি। মনে রাখতে হবে যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার অর্থ আসে জনগণের করের অংশ থেকে। সেজন্য তাদের সম্পদ বিবরণী সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। 
দেশে সম্প্রতি সংঘটিত বহুল আলোচিত কয়েকটি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মকে কেন্দ্র করে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কালো বিড়ালের পদচারণার বিষয়টি সামনে এসেছে। এ সবের পেছনে এমনকি আমলাতন্ত্রসহ রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির অপচ্ছায়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সহায়-সম্পত্তিসহ বিত্তবৈভব অর্জনের বিষয়টি আলোচিত সর্বত্র। এসব কারণে কেউ কেউ ইতোমধ্যেই সপরিবারে দেশত্যাগ করেছেন। আবার কারও কারও পরিবারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কিছু তৎপরতা পরিলক্ষিত হলেও সেসব তেমন জোরালোÑতা বলা যাবে না। সংস্থাটি যেন কোনো বড় ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেই কেবল নড়েচড়ে বসে। তাদের কাজ তো অনেকটা গোয়েন্দা সংস্থার মতোÑ বিভিন্ন পদস্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ ও অর্থবিত্তের অনুসন্ধান করা। দেশে দুর্নীতির বিষয়টি একরকম ওপেন সিক্রেট। এ নিয়ে রাখঢাক ও গোপনীয়তার কিছু নেই। ফলে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। এর জন্য শুধু দুর্নীতিবাজদের ধরলেই হবে না বরং তাদের পেছনের ইন্ধনদাতা তথা মদতদানকারীদেরও খুঁজে বের করা আবশ্যক। 

×