ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

অনুসরণীয় পথ চলা

শাহজালাল হোসেন

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৩ জুলাই ২০২৪

অনুসরণীয় পথ চলা

সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স দেখে ক্রিকেটবিশ্ব

সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স দেখে ক্রিকেটবিশ্ব বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজাকে মনে রাখবে। সংবাদ সম্মেলন করে কিংবা অনলাইনে এসে তাদের অনুরোধ করতে হবে না, ‘আমাকে মনে রাইখেন, ভুলে যাইয়েন না।’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরে এই তিন ভারতীয় ক্রিকেটার অবসর নিয়েছেন। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে দেখা গেলেও দেশের জার্সিতে আর টি-টোয়েন্টি খেলা হবে না কোহলি-রোহিত-জাদেজাদের। তারা সর্বোচ্চ সফলতা ছুঁয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রতিবেশী দেশের এই ক্রিকেটারদের ঈর্ষণীয় সাফল্য বাংলাদেশের টাইগারদের কতটুকু প্রলুব্ধ করে, নাকি করে না? ২০১০ সাল থেকে ভারতের হয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেট শুরু করেছিলেন কোহলি। তার তিন বছর আগে রোহিত ও এক বছর আগে জাদেজা যাত্রা শুরু করেছিলেন। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি খেলা শুরু করেন ২০০৬ সালে। পরের বছর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুরু করেন। হিসাব অনুযায়ী রোহিতের আগেই তারা পথচলা শুরু করেছেন।

অবসর নেওয়ার আগে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিজের ঝুলিতে পুরেছেন রোহিত। কোহলি-জাদেজাদের থলেতে ঢুকেছে একটি করে। সাকিব-রিয়াদরা কী পেয়েছেন? অভিজ্ঞতার দিক থেকে ভারতের এই তিন ক্রিকেটার থেকে এগিয়ে তারা। আগে শুরু করেছেন পথচলা। তবে হতাশা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি। কোহলি ১২৫টি ম্যাচ খেলে ৪ হাজার ১৮৮ রান করেছেন। রোহিত ১৫৯ ম্যাচে ৪ হাজার ২৩১ রান। সাকিব-রিয়াদরা প্রায় কাছাকাছি ম্যাচ খেলে রান তোলার গতিতে নেই ধারেকাছে।

১২৯ ম্যাচে সাকিব করেছেন ২ হাজার ৫৫১ ও রিয়াদের সংগ্রহ ১৩৮ ম্যাচে ২ হাজার ৩৯৪ রান। তাদের থেকে কম ম্যাচ খেলা জাদেজা পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও সফলভাবে হাতে তুলেছেন শিরোপা। বাংলাদেশের এই দুই তারকা ক্রিকেটার তাহলে কী করলেন? ব্যক্তিগত সাফল্য বলতে সাকিব হয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বর্তমানে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে রয়েছেন তিনি। শীর্ষস্থান হারিয়ে ধুঁকতে হচ্ছে, অপেক্ষা তলানিতে যাওয়ার!

অথচ তাদের পরে শুরু করা ভারতীয় এই তিন ক্রিকেটার দলকে দেখিয়েছেন সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়। কেবল নিজেদের বড় করে নয়, দলকে বড় করে তারা ক্ষান্ত হয়েছেন। ভারতের হয়ে আরও অনেক তারকা তৈরি হবেন, দলকে সাফল্য এনে দেবেন। কিন্তু সেই জায়গায় খোদাই করে লেখা থাকবে কোহলি-রোহিত-জাদেজাদের নাম।

যারা এ দেশের ক্রিকেটকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মনে রেখেছেন সবাই, রাখবেন। কিন্তু এরপরে এগিয়ে নেওয়ার কাজটি কেউ করতে পারেননি। যেন গোলকধাঁধার মতো ঘুরেফিরে এক জায়গাতেই শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। কেবল টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্ট-ওয়ানডে কোথাও স্মরণীয় কিছু করতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কেবল কিছুদূর গিয়েই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ফিরতে হচ্ছে। যারা এলেন দলকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য, তাদের স্বপ্নটাই যখন ফিকে হয়ে যায় তখন ভক্তদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।

সমসাময়িকে থেকে কোহলি-রোহিত-জাদেজারা গর্বসহকারে যখন অবসরের কথা জানান, ভক্তদের অশ্রু বের করে আনেন, তখন সাকিব-রিয়াদরা নতুন স্বপ্ন দেখানোর পথে পা বাড়ান। সেই স্বপ্ন যে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে না, তার নিশ্চয়তাও নেই। তবু ছুটে চলা আছে। সাফল্যের ঝুলি কেবল অট্টহাস্যে তাকিয়ে থাকে।
যশোর থেকে

×