ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

বাউল-ফকিরদের সুরক্ষা

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৩ জুলাই ২০২৪

বাউল-ফকিরদের সুরক্ষা

সম্পাদকীয়

এবারে বাউল মত তথা লালনের অনুসারী এক বৃদ্ধার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২৬ জুন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামে লালন সাঁইয়ের অনুসারী বৃদ্ধা চায়না বেগমের বসতঘর ভেঙে দেওয়াসহ তাকে হেনস্তার খবর পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা ওই বৃদ্ধাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। চায়না বেগম এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বারসহ ৪৫-৫০ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

তবে যেটা দুঃখজনক তা হলো, কুষ্টিয়া সদর থানা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার না করে তথাকথিত সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছে, যা কাম্য নয় কোনো অবস্থাতেই। এর পেছনে আসামিদের বৃদ্ধার বসতভিটা দখলের হীন উদ্দেশ্য কাজ করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদকসহ ২৬ বিশিষ্ট নাগরিক এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

অপর এক বিবৃতিতে ৫৬ জন সংস্কৃতিসেবী দেশের বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন সময়ে বাউল ফকির ও অনুসারীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ এবং তাদের সুরক্ষা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন, থানা-পুলিশসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। তাদের দাবি- প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাউল-ফকিরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইনি সুরক্ষা, সাংস্কৃতিক সম্মান দেখানোসহ সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। 
বাউলদের ওপর বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে নিকট অতীতেও। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের ড্রাগন বাগানের এক কোনে গড়ে ওঠা আশ্রমে সাধুসঙ্গে আসা ১০-১২ জন বাউল শিল্পীর ওপর ঘটেছে হামলার ঘটনা। নরসিংদীর ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে বাউলদের ওপর হামলাসহ এসব ঘটনা ঘটছেই। এই হামলা প্রকারান্তরে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। 
বাউলরা সহজিয়া মতের অনুসারী। বাউল মতের অনুসারীদের সঙ্গে কোনো ধর্মমতের আদৌ কোনো বিরোধ নেই। সুমহান সৃষ্টিকর্তার পাশাপাশি তারা মানবধর্মকেও শ্রেষ্ঠ মনে করেন। বলা হয়, ফকির লালন শাহ এই ধর্মমতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রচারক। বাউল গান এবং এর সুর সর্বদাই মানবধর্ম ও মানবাত্মার মুক্তির গান গায় এবং দেহ থেকে দেহাতীতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানায় মানবসমাজকে।

ঘটনা পরম্পরায় প্রতীয়মান হয় যে, গত কয়েক বছরে দেশে মৌলবাদী ও জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নস্থানে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা   বাহিনী জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সর্বস্তরের মানুষ একে স্বাগত জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সর্বস্তরের মানুষের গণপ্রতিরোধই পারে দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে। দেশীয় শিল্পÑসংস্কৃতির ওপর ন্যক্কারজনক হামলা ও আঘাত যে কোনো মূল্যে চিরতরে উৎখাত করতে হবে।

×