ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

বাড়ছে প্রবাসী আয়

-

প্রকাশিত: ২০:২৮, ৩ জুলাই ২০২৪

বাড়ছে প্রবাসী আয়

সম্পাদকীয়

সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৫৪ কোটি ২ লাখ ডলার, যা গত ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। গত তিন বছরের মধ্যেও সর্বোচ্চ। মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স। মে মাসের তুলনায় জুনে এসেছে বেশি ২৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি এসেছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের জুন মাসে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স। 
সরকার সম্প্রতি বৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে। এতে রেমিটেন্স বাড়লেও দীর্ঘদিন আশানুরূপ ছিল না। অন্যদিকে, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অভিবাসীদের দিচ্ছে আকর্ষণীয় বিনিময় হার, যাতে পরবর্তী সময়ে তারা মুদ্রা পাচারকারীদের কাছে উচ্চ দরে বিক্রি করতে পারে। প্রবাসীদের ব্যাকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশী কাজ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছেন। তবে দেশের সিংহভাগ রেমিটেন্স (প্রবাসী) আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে পাড়ি জমালেও সে তুলনায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়েনি। এসব অভিবাসী মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। তাই যে মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময় হার বেশি পাবেন, সেই মাধ্যমেই তারা অর্থ পাঠাবেন- এটাই স্বাভাবিক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভারসাম্য রক্ষার্থে রেমিটেন্স আয়কে অফিসিয়াল চ্যানেলে নিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।

প্রবাসীদের রেমিটেন্স ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার পর গ্রস হিসেবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। আর আইএমএফের বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে ২২ বিলিয়ন ডলার। গত মে মাসে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত এক মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে তিন বিলিয়ন ডলার। এতে অর্থনীতিতে স্বস্তি শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে।

অভিবাসীদের নিজেদের রেমিটেন্স যোদ্ধা ভাবেন। বিশ্বাস করেন, তারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অথচ দেশে ফিরলেই তারা শিকার হন নানা রকম হয়রানির। এসব তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে এবং রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বহুল আলোচিত এসব বিষয়ের জরুরি সমাধান দরকার। সরকার সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যা প্রবাসীদের ডিজিটাল মানি ট্রান্সফারের সুবিধা দিচ্ছে। এই পদ্ধতি প্রবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে কিছু সময় লাগবে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবাসীদের দেশে বৈধপথে অর্থ পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করবে।

রেমিটেন্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী রাখতে অর্থ স্থানান্তরের পদ্ধতিকে ডিজিটাল করতে হবে, যাতে প্রবাসী কর্মীরা ঘরে বসে মোবাইল থেকে সহজেই দেশে অর্থ প্রেরণ ও অন্যান্য সেবা পেতে পারেন। প্রবাসীদের শুধু রেমিটেন্স প্রেরণকারী শ্রমিক হিসেবে না দেখে তাদের মর্যাদার সঙ্গে সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও প্রয়োজনীয় সেবা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

×