ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১

সুন্দরবনের মধু

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২ জুলাই ২০২৪

সুন্দরবনের মধু

সম্পাদকীয়

সুন্দরবন বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনিবার্য অংশ। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষাও বটে। বর্তমানে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত। সর্বোপরি সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ, তা সে বনজ ও জলজÑ যাই হোক না কেন, এর ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা। সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উৎসও বটে। বন সম্পদের বাইরে সুন্দরবনের মাছ ও মধুর ওপর অনেকেরই জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল।

মধু একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টিকর পানীয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ প্রাকৃতিক নিরাময়ও বটে। শ্লাঘার বিষয় এই যে, বিলম্ব হলেও ভৌগোলিক জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে সুন্দরবনের মধু। তবে এখানে একটি কথা আছে। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। অথচ সুন্দরবনের ক্ষুদ্র একটি অংশমাত্র ভারতে অবস্থিত। সুন্দরবন থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ মধু আহরিত হয়ে থাকে, তার দুই-তৃতীয়াংশই আহরণ করা হয় বাংলাদেশ থেকে। তদুপরি এই মধু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। চাষকৃত নয়। সেই হিসেবে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। 
দুঃখজনক হলো, সুন্দরবনের  মধুকে ভারত জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করার পরেই টনক নড়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্যাটেন্ট শিল্পনক্সা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের। অথচ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন পাঠিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। রহস্যজনক কারণে এতদিন পর্যন্ত লালফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে ছিল ফাইলটি।

তাও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডি কর্তৃক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পরেই উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। অথচ ভারত বাংলাদেশের চার বছর পর ২০২১ সালে আবেদন করেই সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বত্ব পেয়ে গেছে। এমনটি ঘটেছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির ক্ষেত্রেও। যার ফলে, সহজ একটি স্বীকৃতি প্রাপ্তি জটিল হয়েছে। যেটি সময় সাপেক্ষ। এখানেই সরকারি প্যাটেন্ট অফিসের অদক্ষতা অযোগ্যতা ও গাফিলতি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সরকারের মনে রাখা উচিত, বহির্বিশ্বে মেড ইন বাংলাদেশে যেতে এবং ব্র্যান্ডিং করতে হলে দেশীয় পণ্যের মেধাস্বত্বকে সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে বিদেশী বিনিয়োগ ও পর্যটক আকর্ষণ করা হবে দুঃসাধ্য।

জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে দেশের মোট ৩১টি পণ্যকে। এ তালিকায় স্থান পেয়েছে জামদানি, ইলিশ, ক্ষীরশাপাত আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম ইত্যাদি। ৬৪টি জেলা থেকে এক বা একাধিক পণ্য বা বস্তু খুঁজে বের করে আবেদন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। যা আরও অনেক আগেই নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ক্রমান্বয়ে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির পর এগুলোকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে। তবে দেশের জনপ্রিয় পণ্যগুলোর জিআই স্বীকৃতি হাতছাড়া হওয়া অভ্যন্তরীণ ‘পলিসিগত’ দুর্বলতাই প্রকাশ করে, যা কাম্য নয়।

×