ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

শ্বাসরুদ্ধকর দৃষ্টিনন্দন

প্রকাশিত: ২১:০১, ১ জুলাই ২০২৪

শ্বাসরুদ্ধকর দৃষ্টিনন্দন

সম্পাদকীয়

ক্রিকেটকে বলা হয় চরম ও পরম অনিশ্চয়তার খেলা। এই খেলায় ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়ে কখন যে কার দিকে ঝুঁকে পড়বে, তা শেষ বল মাঠে না গড়ানো পর্যন্ত বলতে পারে না কেউ। সর্বোপরি এটি দলগত খেলা হলেও খেলার দিন মাঠে ব্যক্তিগত দক্ষতা ও নৈপুণ্য কখন যে কার ঝলসে ওঠে অথবা মুহূর্তে নিষ্প্রভ হয়ে যায়, সেটিও অদৃষ্টপূর্ব। সেই সুদূর বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে গত শনিবার সেটি প্রত্যক্ষ করা গেছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে অনুষ্ঠিত টি২০ ক্রিকেটের ফাইনালে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন সমাপ্তি ক্রিকেটের ছোট সংস্করণ কেবল টি২০তেই সম্ভব।

এদিন বিশ্ববাসী উপভোগ করেছেন ক্রিকেটের সেই মনোমুগ্ধকর বুনো উল্লাস, যা ভারতীয় দলকে এনে দিয়েছে বাঁধভাঙ্গা আনন্দাশ্রু মিশ্রিত উদ্যাপন। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকাকে করেছে চরম হতাশার সাগরে নিমজ্জিত। অগণিত ক্রিকেটভক্ত অন্তত এবারে দক্ষিণ আফ্রিকার ললাট থেকে ‘চোকার্স‘ অপবাদ ঘোচার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পরিণত হয়েছে এক গভীর অনিশ্চিত হতাশা ও বিষাদে। 
অবশ্য ভারতের জন্য এই বহুল প্রতীক্ষিত বিজয় খুব সহজে সম্ভব হয়েছে, তা নয়। টান টান উত্তেজনাকর ফাইনালে মাত্র ৭ রানের নাটকীয় এক জয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পর টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল। এর আগে মহেন্দ্র সিং ধোনীর নেতৃত্বে ২০০৭ সালে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জিতে বাজিমাত করেছিল ভারত।

এবার দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছে, যার জন্য সান্ত¡না শব্দটিও যথেষ্ট নয়। সত্যি বলতে কি বিশ্বকাপ ট্রফিটি তাদের হাতের মুঠো থেকে এবারে যেন ছিটকে বেরিয়ে গেছে ভারতের দুর্ধর্ষ বোলার হার্দিক পান্ডিয়া ও যশপ্রীত বুমরার দুর্দান্ত বোলিংয়ের তোপের মুখে। 
উৎসবমুখর পরিবেশে টস জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারত। প্রথমেই তিনি নিজে এবং পরে ঋষভ পন্থ ও সূর্যকুমারের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দেশটি। সে অবস্থায় ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসেন বিরাট কোহলি। তিনি যে বিশ্বের বিরল প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের একজন তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন এদিন। টি২০-এর গোটা আসরজুড়ে নিষ্প্রভ বিরাট কোহলি এদিন জ্বলে ওঠেন আপন মহিমায়।

ফাইনালে তিনি ঝলমলে ৭৬ রানের এক ইনিংস  খেলেন, যা শেষ পর্যন্ত ভারতকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের এক চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর উত্তরে দক্ষিণ আফ্রিকাও ঝলসে উঠে প্রায় বিজয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থকদের মধ্যে দেখা যায় ব্যাপক উল্লাসের প্রস্তুতি। শেষ পর্যন্ত তাতে ঘৃতাহুতি দেয় হার্দিক পান্ডিয়ার অসাধারণ এক ওভার। প্রতিমুহূর্তে রং বদলানো ম্যাচে ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। জয় ছিনিয়ে আনা ভারতীয় খেলোয়াড়রা বাঁধভাঙ্গা উল্লাস ও আনন্দাশ্রুতে লুটিয়ে পড়েন মাঠেই। ম্যাচসেরা পুরস্কার হাতে শিরোপা জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ আসর থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিরাট কোহলি। বলা যায়, এটিও একটি আনন্দঘন বিদায়।

আন্তর্জাতিক টি২০তে এটি তার ৩৮তম হাফ সেঞ্চুরি। ফাইনালে ভারত জিতেছে বটে, তাই বলে দক্ষিণ আফ্রিকাও হারেনি। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে মহান ক্রিকেটের। বিজয় যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো দিকে হেলে যেতে পারত। এ রকম এক শ্বাসরুদ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন টি২০ বিশ্ববাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য দুই দলের খেলোয়াড়দেরই আন্তরিক অভিনন্দন। বিশ্বের ক্রিকেটামোদীদের মধ্যে এই আনন্দ অমিলন থাকবে বহুদিন।

×