ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

দুর্নীতিতে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১ জুলাই ২০২৪

দুর্নীতিতে কঠোর ব্যবস্থা

সম্পাদকীয়

দুর্নীতির বিস্তার এবং এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ নানা কারণে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে দেশের জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবু দুর্নীতি কমানো যাচ্ছে না। দিনে দিনে এটি যেন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে। সৃষ্টি করছে চরম অস্থিতিশীলতা। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্য। দুর্বল হয়ে পড়ছে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। অর্থনীতিতে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী দুষ্টক্ষত। সম্প্রতি দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি।

দুর্নীতিবাজ যেই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রেহাই নেই। যারাই দুর্নীতি করবে ধরব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার জন্য। বিভিন্ন দপ্তরে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথাও বলেন। 
দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব কোনো দেশের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। সরকার যেমন জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে, তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও একই নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় শুদ্ধাচার নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচার অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্নীতি এমনভাবে রোধ করা চাই, যেন মানুষ দুর্নীতি করতে চাইলেও তার সুযোগ না পায়।

এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সুফল বেশি পাওয়া সম্ভব। দেশে সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি। সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত জরুরি। যাতে যথার্থ ভুক্তভোগীর হাতে সরকারি সেবা ও অনুদান যথাসময়ে পৌঁছায়। প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে শুধু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, সততা ও দক্ষতাটাকে প্রাধান্য দিয়ে পদোন্নতি দেওয়া উচিত।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে নানা খাতে সমন্বিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। তবে কেবল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালালেই হবে না, সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেসব দুর্নীতি হচ্ছে, সেগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে দুর্নীতির শ্বেতপত্র জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করা চাই। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব দুর্নীতি দমন কমিশনে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।

জনগণের মধ্যেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা আবশ্যক। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের চেয়ে সামগ্রিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই দেশ ও মানুষের উন্নয়ন হবে ত্বরান্বিত। দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সকলের সদিচ্ছা ও সততার সঙ্গে কর্মসম্পাদন। সরকারের কঠোর পদক্ষেপে দুর্নীতি হ্রাস পেয়ে একসময় দেশ হবে দুর্নীতিমুক্তÑ এটাই প্রত্যাশা।

×