ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

কী প্রয়োজন ছিল প্রত্যয়ের

ড. মো. আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৩০ জুন ২০২৪

কী প্রয়োজন ছিল প্রত্যয়ের

.

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা থেকে সরিয়েপ্রত্যয়নামক নতুন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করার দাবিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয় সে কথা বিবেচনা করে তিন মাস ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টি আকর্ষণমূলক, যেমন- বিবৃতি প্রদান, প্রতীকী অবস্থান, মানববন্ধন, স্বাক্ষর সংগ্রহ, স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদি কর্মসূচি পালন শেষে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তিনদিন অর্ধদিবস এবং একদিন পূর্ণদিবস কর্মসূচি পালন করেছেন। সকল কর্মসূচিতে কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি দিয়েছে। এই আন্দোলনটি একটি অপ্রয়োজনীয় আন্দোলন, যা শিক্ষকদের ওপর আরোপ করা হয়েছে। বিনা প্রয়োজনে মূল্যবান সময় এবং মেধার অপচয় হবে এতে। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন একটি নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এই জয়যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাস্তায় নামানোরপ্রত্যয়নিয়ে কারা এগিয়ে এলোবিষয়টি আলোচনা করার দাবি রাখে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন গত ১৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখ। সেদিন বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্যপ্রগতি’, সকর্মে নিযুক্তদের জন্যসুরক্ষাপ্রবাসী নাগরিকদের জন্যপ্রবাসীএবং নিম্নআয়ের মানুষের জন্যসমতাএই চারটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সরকারি চাকরিজীবী তারা পেনশন পান। কিন্তু যারা চাকরি করেন না, তারা তো পান না। কাজেই এটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নয়। যারা সরকারি বেতন পাবেন বা পেনশন পাবেন, তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য হবে না। তার বাইরে যে জনগোষ্ঠী- শুধু তাদের জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। যাতে করে তারাও একটু সম্মানজনকভাবে বাঁচতে পারেন।এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেন যে, সরকারি সুবিধার বাইরে যারা অবস্থান করছেন, তাদের সুরক্ষাবলয়ের অন্তর্ভুক্ত করাই সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মূল উদ্দেশ্য। এটি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত দূরদর্শী এবং জনকল্যাণকর একটি প্রকল্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ইতোমধ্যে তিনি সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশ এবং দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাতা বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের  একখ- জমির মালিকানাসহ একটি ঠিকানা করে দিয়েছেন।  শেখ হাসিনার মতো একজন মহান রাষ্ট্রনায়কই কেবল অনেকদূর পর্যন্ত দেখতে পান। সকল মানবিক উদ্যোগের কারণে তাঁর নেতৃত্ব আজ বিশ্বের কাছে অবাক বিস্ময়। 

সর্বশেষ, তাঁর চিন্তাপ্রসূত সর্বজনীন পেনশন স্কিমটিও সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তবে বরাবরের মতো বিএনপি এটির মধ্যেও সরকারেরদুর্নীতির দুরভিসন্ধিরগন্ধ খুঁজে পায়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পিছিয়ে থাকা অনেক মানুষ বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ দেখায়। তবে বিএনপির নেতিবাচক প্রচারণায় মানুষ খানিকটা বিভ্রান্ত হয়। একটি নতুন স্কিম বুঝতেও তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তাসেনসেটাইজেশননা করেই স্কুল শিক্ষকদের সর্বজনীন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত না হলে বেতন আটকে দেওয়ার মতো ঘোষণা দেওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তবে সকল বাধা অতিক্রম করে উন্নত রাষ্ট্রের কল্যাণকামী ধারণাসর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা কার্যকর হলে বাংলাদেশের সমাজে সমতা ন্যায় বিচারের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নের পথে অনেকখানি অগ্রগতি হবে। এই ব্যবস্থাই আগামীর বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন বাংলাদেশে পরিণত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেটি বাস্তবায়নেই সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের মনোযোগী হওয়া উচিত। সেটি না করে তারা আরও একটি নতুন স্কিমপ্রত্যয়নিয়ে হাজির হলেন, যা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মতো একটি মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

গত ১৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করেপ্রত্যয়নামক একটি নতুন স্কিম ঘোষণা করে। উল্লেখ্য, জুলাই ২০২৪ এবং তৎপরবর্তীতে যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগদান করবেন, তারা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর আগে নিযুক্তরা প্রচলিত ব্যবস্থাতেই পেনশন পাবেন। বর্তমান শিক্ষকরা তাহলে আন্দোলন করছেন কেন, সে প্রশ্ন এসে যায় স্বাভাবিক কারণেই। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলছেন, ব্যবস্থা  বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকর হলে মেধাবীরা আগামীতে শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। আন্দোলনটি আসলে শিক্ষাব্যবস্থা এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন। কেননা, ব্যবস্থায় যারা আসবেন, তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা থেকে অনেক সুবিধা কমে যাবে। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন তহবিলের জন্য কোনো অর্থ কর্তন করা হয় না। প্রত্যয় স্কিমে বেতন থেকে প্রতিমাসে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা হাজার টাকা কেটে নেওয়া হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় চাকরি শেষে এককালীন একটি মোটা অঙ্কের (বর্তমান সর্বোচ্চ স্কেলের চাকরিজীবীরা কোটি টাকার কাছাকাছি) টাকা এককালীন প্রাপ্ত হন। আর সর্বশেষ মূল বেতনের অর্ধেকের বিপরীতে মাসিক পেনশন পান।  চাকরি শেষে এই এককালীন অর্থ দিয়ে তারা নিজেদের একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই বা সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পেছনে খরচ করেন। প্রত্যয়ে এককালীন কোনো টাকা দেওয়া হবে না। মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় স্বামী/স্ত্রী/নমিনি আজীবন পেনশন পান, প্রত্যয়ে শুধু পেনশনার আজীবন পাবেন। তবে পেনশনার মারা গেলে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত নমিনিরা পাবেন।

আগামীতে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বেড়ে যাবে, সেটি বিবেচিত হয়নি। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশনাররা অর্জিত ছুটির বিপরীতে এককালীন টাকা পান, যা প্রত্যয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। আর প্রত্যয়ে অবসরের ধরা হয়েছে ৬০ বছর। বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ভাতা সম্পর্কে প্রত্যয়ে কিছু বলা নেই। এভাবে তুলনা করে দেখা যায়, প্রত্যয়ে বর্তমান ব্যবস্থা থেকে সুবিধা অনেক কমে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হলো সবাইকে যুক্ত করা, কাউকে বাদ দেওয়া নয়। প্রত্যয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে বাদ দিয়ে যাদের পেনশন সুবিধা নেই, তাদের কাতারে নিয়ে গেছেন। পেনশন নীতিতে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে বিদ্যমান সুবিধা বহাল রেখে সবাইকে এক সঙ্গে পরিবর্তনের আওতায় আনা উচিত। তা না করায় সন্দেহের যথেষ্ট কারণ থেকে যায়।

সে কারণে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। গত ২৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে শিক্ষক প্রতিনিধিগণ বিষয়টি উত্থাপন করলে সেটির ওপর সিনেট সদস্যগণ আলোচনা করেন। স্কিমটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বৈষম্যের শিকার হবেন এবং উচ্চশিক্ষাঙ্গনে সেটি নেতিবাচক প্রভাব রাখবে, তা সকলের বক্তব্যে উঠে আসে। আলোচনা শেষে স্কিমটি বাতিল চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে নির্বাচিত জন সংসদ সদস্যসহ বাংলাদেশের রাষ্ট্র সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এরকম একটি বডি যদি মনে করে কাজটি সঠিক হয়নি, তাহলে কারা মনে করে কাজটি সঠিক হয়েছে? এমনকি আমলাতন্ত্রের অনেকেই বিষয়টির সঙ্গে একমত নন। ঐতিহাসিকভাবে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত যে, রাষ্ট্রে সমাজের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়কে শক্র মনে করেছে এবং শিক্ষার স্বাধীনতা মুক্তচিন্তাকে দাবিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করেছে। ১৯৬১ সালে জেনারেল আইয়ুব খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে দমনপীড়ন চাপিয়ে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিলেন। ১৯৬৪ সালেই আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টোতে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানরূপে স্বীকৃতি দিতে হইবে।তিনি ১৯৭০ সালেও তাঁর নির্বাচনী ভাষণে শিক্ষার স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। অথচ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এত বড় একটি পরিবর্তন চাপিয়ে দেওয়া হলো, তা সত্যিই এক অদ্ভুত বিষয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বায়ত্তশাসনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। এই শিক্ষকরাই কিন্তু নিজেদের জীবন বিপন্ন করে সকল সংকটে প্রগতিশীল শক্তিকে জয়ী করেছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হত্যা করা হয়েছিল। অনেকের অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছিল। চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকায়। এদেশে সে সময় অনেকে চাকরি করে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করার পর সবাই যখন স্তম্ভিত হয়ে যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে তখন সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।

জেনারেল জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনামলে এবং ২০০৭ সালের তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা জেল-জুলুম নির্যাতন উপেক্ষা করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিল। বর্তমানে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকরাই শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সকল শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধির সমন্বয়েই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন গঠিত। সকল সংগঠন শিক্ষককে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে কিনা, তা  ভেবে দেখা উচিত। কি কারণে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে, তা ভাবা দরকার। দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের সহায়তা নিয়ে বিএনপি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার অপচেষ্টাকালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। এর টেলিফোন সংলাপও ফাঁস হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে শেখ হাসিনার সরকারের পাশে ছিল। ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কলম ধরেছে, গণমাধ্যমে জনমত গঠন করেছে, রাস্তায় আন্দোলন করেছে।  বর্তমানে হঠাৎ করেই এই স্কিমটি চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রগতিশীল শক্তিকে হতাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্বিধাবিভক্ত করার কোনো অপচেষ্টা হচ্ছে কিনা, দেখা দরকার।

পর্যন্ত ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন। তারা কেউ মনে করেন না- যে স্কিমটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা সঠিক হয়েছে। অনেকে এও বলেছেন, আমলাতন্ত্রের মধ্যে কয়েকজন লোক অতি তৎপরতার মাধ্যমে সরকারকে খুশি করে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য বিপ্লবী অনেক তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন, যা বাস্তবতা বিবর্জিত। প্রজ্ঞাপনটি জারি করার পর সেটি এখন তাদের জন্যপ্রেস্টিজ ইস্যুহয়ে গেছে। অষ্টম বেতন স্কেল প্রবর্তনের সময় এমন এক ঘটনা ঘটেছিল, যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সমাধান হয়েছিল। প্রত্যয়কে ব্যালেন্স করার জন্য এখনসেবকস্কিম সামনে আনা হয়েছে। ধরনের বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিষয়টি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল। প্রশাসনে যারা আছেন, তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা যখন রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে আসীন হন, তখন শিক্ষকরা তাদের নিয়ে গর্ব করে। শিক্ষকরা তাদের কখনোই প্রতিপক্ষ মনে করেন না। অথচ আমলাতন্ত্রের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে উচ্চপদে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে শত্রু মনে করেন। যেমন মনে করতেন অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো। বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি সম্মান করতেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদায় উপনীত করতে চেয়েছিলেন। জাতির দুর্ভাগ্য তিনি আর আসতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাঁরহৃদয়ের বিশ্ববিদ্যালয়বলে গর্ববোধ করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাঁর শিক্ষকদের পাশে বসাতেন। বাঙালির সর্বকালের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব কেউ কখনো অর্জন করতে পারবে না। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার মতো জনসম্পৃক্ত এবং ক্ষমতাধর সরকারপ্রধানও বাংলাদেশে আর জন্ম হবে না। অথচ তাঁদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষা নেই না। বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। এখানে সকলেই আত্মীয়তার সূত্রে বাঁধা। কারা কোন্্ উদ্দেশ্যে কি করেন সেটা জানাজানি হয়ে যায়। যারা করেছেন তারা কী উদ্দেশ্যে করেছেন, তা হয়তো একদিন বের হয়ে আসবে। কিন্তু ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন অশান্ত না হয়, ঘোলাজলের মাছ শিকারিরা যেন সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে সকল পক্ষের দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করছি। ইগোর সমস্যায় না ভুগে প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে স্থগিত করে আলোচনার উদ্যোগ নিলে সব কূল রক্ষা পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক : অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম-মহাসচিব

[email protected] 

×