ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

নতুন পাঠ্যক্রমে মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ৩০ জুন ২০২৪

নতুন পাঠ্যক্রমে মূল্যায়ন

.

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর  সৃজনশীল শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। যে কারণে ২০২৩ সাল থেকে দেশে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং পরীক্ষা তথা মূল্যায়ন পদ্ধতির সূচনা করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে প্রচলিত পদ্ধতির ত্রৈমাসিক, ষাণ¥াসিক বার্ষিক নিয়মিত কোনো পরীক্ষা না থাকায় শুরু থেকেই নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং শিক্ষকরা। এও সত্য যে, কোনো নতুন পদ্ধতি মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা চাপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। নতুন ধারার এই শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ্যক্রমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হোঁচট খাচ্ছেন শিক্ষার্থী শিক্ষকরা।

তদুপরি বছরের শুরুতে মাউসি এনসিটিবি নতুন পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস মূল্যায়ন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি। ইতোমধ্যে গত বছর থেকে ষষ্ঠ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন কারিকুলামে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। জুলাই তাদের ষাণ¥সিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হলেও কেমন প্রশ্ন হবে, কিভাবে উত্তর লিখতে হবেÑ ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় তা বোধগম্য হচ্ছে না শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। ফলে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতাশায় ভুগছেন। যত দ্রুত এই অচলাবস্থার অবসান হয়, ততই মঙ্গল।

সরকার ২০২৩ সাল থেকে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের সিলেবাস, পাঠদান পদ্ধতি মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক সমালোচনা তৈরি হয়েছে অভিভাবক, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিভিন্ন অংশীদারির কাছ থেকে অনেক সংস্কারমূলক পরামর্শও এসেছে। এসবের কিছু গ্রহণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে। দু-একটি বই প্রত্যাহারসহ পুনর্লিখিত পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমে দেশে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি নেই, যা অভিভাবক শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পরিবর্তে এসেছে মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে শ্রেণি কক্ষে সার্বিক পাঠ গ্রহণের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হবে এবং তদনুযায়ী নির্ধারিত হবে শিক্ষার্থীর অবস্থান। পরীক্ষা না থাকায় তারা বাড়িতেও পড়ালেখা করবে না বলে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মূল্যায়ন পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টার, গাইড বই গৃহশিক্ষকের পাঠদানকে নিরুৎসাহিত করা। প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মূল্যায়ন পদ্ধতি ইতিবাচক ফলপ্রসূ না হলে প্রয়োজনে সংস্কার করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তোলার ওপর। এর জন্য সবিশেষ জোর দেওয়া হবে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণসহ কর্মসংস্থানের ওপর। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট যত দক্ষতা আছে, সেসব নিয়ে আসা হবে নতুন কারিকুলামে। যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষাগ্রহণসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানো হতে পারে। তবে এর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকম-লী গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। তা না হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা কমবে না কিছুতেই।

×