ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

চলমান গ্যাস সংকট

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ৩০ জুন ২০২৪; আপডেট: ২২:০২, ৩০ জুন ২০২৪

চলমান গ্যাস সংকট

.

ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মাসাধিককাল বন্ধ রয়েছে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) একটি টার্মিনাল। এটি মেরামত হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে আসতে কমপক্ষে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ লেগে যাবে। টার্মিনাল বন্ধ থাকায় এর মধ্যে দুই কার্গো এলএনজি ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফলে, চাহিদার তুলনায় অন্তত ৫শ’ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। শিল্পে গ্যাস না পাওয়ায় বিপর্যস্ত বিভিন্ন শিল্প খাত। এর ভেতর গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিমুখী পোশাক খাত। দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে ডায়িং ও নিটিং মিলগুলো। যা গ্যাস মিলছে তা দিয়ে কোনোমতে ফিনিশিং কারখানাগুলো চালু রেখে অর্ডারকৃত পোশাকগুলো তৈরি করা হচ্ছে। গ্যাসের সমাধান চেয়ে দফায় দফায় সরকারি সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। উৎপাদন চালু রাখতে এলপিজি ও সিএনজি সিলিন্ডার দিয়ে কোনো মতে কাজ সারছেন উদ্যোক্তারা। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন নি¤œমুখী। গত দুই বছর ধরে স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতির দিকে রয়েছে। এর ফলে, চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় আমদানিকৃত এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। গ্যাসের অভাবে কাক্সিক্ষত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় ঢাকার বাইরে নিয়মিত বিরতিতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। এতে বিদ্যুৎনির্ভর স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর উৎপাদনও স্বাভাবিকের তুলনায় কমেছে বহুলাংশে।

বিশ্বের অন্যান্য বদ্বীপ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের মতো এ রকম ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক গঠনে গড়ে ওঠা অঞ্চল গ্যাসসম্পদে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার কথা। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত গ্যাস জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নেও একই মতপ্রকাশিত হয়েছে। এসব গবেষণা উপাত্ত বিবেচনায় নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার বাস্তবতা এতকাল প্রায় অনুপস্থিত ছিল। দেরিতে হলেও সরকার গ্যাস অনুসন্ধানে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ৪৬টি কূপে খনন ও গ্যাস অনুসন্ধান চলছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ৫টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। সমুদ্রও মহামূল্যবান সম্পদে ভরপুর। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বশেষ উৎকর্ষ কাজে লাগিয়ে তা আহরণ ও উত্তোলনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। দেশে এখন পর্যন্ত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ২০২১ সালে। বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন শাহবাজপুরের টবগী-১ কূপ। ১৯৯৫ সালে এ গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারাকে চলমান রাখতে গ্যাস ও কয়লার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাসসম্পদ ও কয়লাসম্পদ মাটির নিচে সঞ্চিত রয়েছে। এগুলো উত্তোলন করে নিজস্ব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হলে জ্বালানি আমদানিনির্ভরশীলতা কমবে, সেটি বলাই বাহুল্য। নতুন গ্যাসক্ষেত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের অগভীর ও গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান চালানোর আবশ্যকতা রয়েছে। আমরা মনে করি, গ্যাসের এই সংকট সাময়িক। যা কাটতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে।

×