ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২০:০১, ২৮ জুন ২০২৪

কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

.

মঙ্গলবার বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় জেলা কারাগারের সেলের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কয়েদি সিনেমা স্টাইলে পালানোর স্বল্প সময়ের মধ্যে শহরের চাষীবাজার এলাকা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় কয়েদিরা পালানোর উদ্যোগ নেয়। কারাগারের নিকটবর্তী করতোয়া নদীর তীর ধরে আসামিরা পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেশি দূর না যেতেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। পুলিশও শহরজুড়ে সতর্ক পাহারা বসায়। ফলে, কারাগারের অদূরে ভোরবেলা স্থানীয় জনতার হাতেই ধরা পড়েন তারা।

কারা কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে জেলা কারাগার থেকে ফাঁসির ন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কিভাবে পালাতে সক্ষম হলো তা নিয়ে নানা রহস্য এবং কারাগার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুই কারারক্ষীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়াও চলছে। গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটিও। সেইসঙ্গে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় মৃত্যুদ- যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত কয়েদি, জঙ্গি মামলায় অভিযুক্তসহঝুঁকিপূর্ণআসামিদের বৃহস্পতিবার থেকে অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে।

কারাগার থেকে বন্দি পলায়নের ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে তা নয়। ইতোপূর্বে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি পালিয়েছিল। কারাগার থেকে বন্দি পলায়ন ছাড়াও জঙ্গি কিংবা দুর্ধর্ষ কয়েদিদের সঙ্গে বাইরের দুষ্কৃতকারীদের যোগাযোগের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেশের কারাগারগুলোয় মাদক সেবনসহ নানারকম নেতিবাচক সংবাদ উঠে আসে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মাদক ব্যবসা নিয়ে কোনো কোনো কারাগারে খুন-জখমের ঘটনাও ঘটছে। এতে কারাগারের নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশ নিয়েও হয়ে থাকে নানা সমালোচনা। কেননা, কারাগার হলো অপরাধীদের সংশোধনাগার। এখানে যারা বন্দি থাকেন, হোক ন্ডি বা বিচারাধীন, তাদের এমন পরিবেশে রাখা প্রয়োজন, যেখানে নিজেদের সংশোধন করার সুযোগ তৈরি হয়। কারাগার থেকে আসামি আনা-নেওয়ার বিষয়েও নেওয়া চাই বিশেষ সতর্কতা। ময়মনসিংহে পুলিশ হত্যা করে প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।

কারাগার থেকে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির পলায়নের দৃশ্য সিনেমার পর্দায় স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বাস্তবে অস্বাভাবিক, বিস্ময়কর উদ্বেগজনক। এমন ঘটনায় দেশের কারা ব্যবস্থাপনার দুর্বল চিত্রই প্রকাশ পায়। কারাগারে বন্দিদের বিষয়ে চলনবিধিসহ সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। দায়িত্বশীল কারও অবহেলা কিংবা উদাসীনতায় এর ব্যত্যয় ঘটতে পারে না। এজন্য কারানিরাপত্তায় যা যা করণীয় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। কারাগারে মাদক দ্রব্যের প্রবেশ, আসামিদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোও খতিয়ে দেখে নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ, এগুলো কারা নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। সর্বোপরি কারাগারের নিরাপত্তায় অবহেলায় সংশ্লিষ্টদের সাময়িক বরখাস্ত বিভাগীয় মামলা দায়েরের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ না রেখে, আরও গভীরে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

×