ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

বিলম্বিত বোধোদয়

প্রকাশিত: ২০:০০, ২৮ জুন ২০২৪

বিলম্বিত বোধোদয়

.

কোরবানির জন্য বায়নাকৃত ছাগলকান্ডে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ তার দুই স্ত্রী সন্তানদের বিষয়টি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশের পর মতিউর তার দুই স্ত্রী পাঁচ সন্তানের ব্যাংক হিসাব, এমএফএস হিসাব বিও হিসাবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লেনদেনের ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করা হয়েছে। বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও এনবিআরকে মতিউর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দুদকে প্রেরণের জন্য চিঠি দিয়েছে। এসব হিসাব থেকে আপাতত কেউ অর্থ তুলতে পারবেন না। মতিউর রহমান ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণসহ নানা চাঞ্চল্যকর ব্যক্তিগত তথ্যাদি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর মতিউর কর্মকান্ড পরিণত হয়েছে মুখরোচক আলোচনায়।

প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন পর্যন্ত বিষয়টি আড়ালে ছিল কেন কিভাবে? এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ আরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বোপরি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মতিউরের এত বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভব এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে আদৌ কিছু জানতে পারলেন না কেন? নাকি জেনেবুঝেও প্রায় সবাই একেবারেস্পিকটি নটঅর্থাৎ মৌনব্রত অবলম্বন করেছিলেন।ছাগলকা- থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার পর এখন সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। এনবিআরের কর বিভাগ মতিউর সম্পর্কিত তথ্যাদি দুদকে প্রেরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এনবিআরের বড় কর্তা হলেও ২০০৮ সাল থেকে শেয়ারবাজারে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন মতিউর। দুইভাবে তিনি শেয়ারবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এগুলো হলো- প্লেসমেন্ট বাণিজ্য এবং কারসাজির আগাম তথ্য জেনে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি করা।

সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুসারে ধরনের কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি অনৈতিক। আপাতত তাকে সাময়িকভাবে পদ থেকে অপসারণ করা হলেও চূড়ান্ত পরিণামে কি হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। মতিউরের অপকান্ড-অপকর্ম সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির দায় নেবে না এনবিআর। একই সঙ্গে অন্যদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন। দুদকও ইতোপূর্বে চারবার অব্যাহিত দিয়েছে মতিউরকে। বলতে হবে এসবই বড় বেশি বিলম্বিত বোধোদয়।

দেশে আয়কর প্রদানে বহু মানুষের অনীহা একটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। অনীহার জন্য দায়ী কিছুটা আয়কর ব্যবস্থা তথা এনবিআর। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিও কম দায়ী নয়। সুনাগরিকরাও আয়কর প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতিতে অস্বস্তি বোধ করেন। তবে এখন অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ফলে, আয়কর বাড়ানোর জন্য এনবিআর এবং আয়করদাতাদের মধ্যে আস্থা বিশ্বাসের সম্পর্ক জরুরি। কর প্রদান পদ্ধতি আরও সহজ এবং যুগোপযোগী হলে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে, দেশের উন্নতি সমৃদ্ধির জন্য যা হবে ইতিবাচক। তবে মতিউর রহমানের মতো আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ নীতি-নৈতিকতাবর্জিত পদস্থ কর্মকর্তার সরব উপস্থিতি এনবিআরের কর্মকা- প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।

×