ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

টিকিট কালোবাজারি যেভাবে রোধ করা সম্ভব

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন

প্রকাশিত: ১২:৩১, ৪ এপ্রিল ২০২৪

টিকিট কালোবাজারি যেভাবে রোধ করা সম্ভব

বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রেল টিকিটিংয়ে বেশ পরিবর্তন এসেছে। স্বচ্ছতার জন্য এখন অনলাইনেই বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। এমনকি গত বছরের মার্চ থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। কালোবাজারি বন্ধ তথা যিনি টিকিট কিনেছেন তিনিই ভ্রমণকারী কিনা, সেটি নিশ্চিত করতেই এ নিয়ম চালু করা হয়েছে। সাদা চোখে কেনার প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ মনে হলেও অবৈধ উপায়ে (বিশেষ করে কাউন্টার থেকে) টিকিট বিক্রি করা হয়। 

আমার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, টিকিট কালোবাজারি দু’ভাবে হয়– ১. রেলওয়ে বুকিং এজেন্টদের মাধ্যমে, যারা যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য তথ্য অবৈধভাবে ব্যবহার করে সিস্টেম থেকে টিকিট কিনে থাকে; ২. ‘বৈধ’ টিকিট ক্রেতাদের মাধ্যমে, যারা বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টিকিট কিনে থাকে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, রহিম তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একটি টিকিট কিনল। এবার সে চাইলেই টিকিটটি তার বন্ধু করিমের কাছে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। করিম কোনো ঝামেলা ছাড়াই টিকিট নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবে। কারণ রহিম বা করিমের মধ্যে কে ভ্রমণ করছে, সে বিষয়টি যাচাই করা হয় না। আসল ভ্রমণকারী কে, তা যাচাই করা ছাড়া ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। 

উন্নত বিশ্বে টিকিট কালোবাজারি হয় না। কারণ সেখানে যাত্রী ট্রেনে ওঠার আগে তাদের পরিচয়পত্র ঠিকভাবে যাচাই করে নেওয়া হয়। যদিও আমরা শুনে থাকি, বাংলাদেশ রেলে যাত্রীর টিকিট তার জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যাচাই করা হয়। কিন্তু নিয়মিত ট্রেন ভ্রমণ করা সত্ত্বেও ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনোদিন যাচাই করতে দেখিনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, যথেষ্ট লোকবলের অভাবে এই যাচাই প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কার্যকর করা যায় না। কিন্তু ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি রোধ করতে হলে এ সমস্যার অবশ্যই সমাধান করতে হবে।

ওটিপি ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমেও যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে অগ্রিম রেলের টিকিট বুকিং বন্ধ করা যায়। ওটিপি ব্যবস্থায় একটি কোড যাত্রীর নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে পাঠানো হয় এবং এর পর ওটিপি কোডটি যাত্রীকে সিস্টেমে প্রদান করে টিকিট কিনতে হয়। যেহেতু একজন যাত্রীর সাধারণত সীমিত সংখ্যক ফোন নম্বর থাকে, সে ক্ষেত্রে ওটিপি পদ্ধতির মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি কমানো সম্ভব। বর্তমানে শুধু অনলাইন টিকিটের জন্য ওটিপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কাউন্টার থেকে রেলের টিকিট কেনার প্রক্রিয়া (যেখান থেকে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ টিকিট কিনে থাকে) যতদিন ওটিপি পদ্ধতির আওতায় না  আসবে ততদিন পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।

আরেকটি বিষয় হলো, বুকিং এজেন্টদের সিস্টেম অপব্যবহার করে টিকিট কালোবাজারি। এই অপকর্ম রোধে কাউন্টারগুলোতে কারা টিকিট প্রিন্ট করছে, তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে আনা হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। সাধারণত ট্রেনের টিকিটে কোন কাউন্টার এজেন্ট কখন টিকিট ইস্যু করেছেন, সে তথ্য দেওয়া থাকে। কাজেই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, রেলসেবা অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা রেলস্টেশনের কাউন্টার ছাড়া টিকিট বিক্রি করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাষ্যমতে, শুধু তাদের বুকিং এজেন্টদের মাধ্যমে ই-টিকিট বুকিং করা যায়। তাই যদি হয়, তাহলে যেসব বুকিং এজেন্ট অবৈধভাবে রেলের টিকিট ইস্যু করে, তাদের কেন চিহ্নিত করা যায় না?

সহজ.কম রেল টিকিটিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ট্রেনের টিকিট আরও সহজলভ্য হয়েছে। যারা টিকিট পান তাদের চাইতে যারা টিকিট পান না, তাদের (যারা সংখ্যায়ও বেশি) অভিযোগই স্বাভাবিকভাবে বেশি শোনা যায়। তা ছাড়া বিগত বছরে যেসব যাত্রী ঈদে ট্রেন ভ্রমণ করেছেন, তাদের তথ্য বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে তারা স্বচ্ছতার সঙ্গে টিকিট ইস্যু করে– সেটি বোঝানোর চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে ট্রেনের আসনস্বল্পতাও গ্রাহকের ভোগান্তির বড় কারণ। ফলে শুধু টিকিটিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করলে সমস্যার আসল সমাধান আসবে না।

টিকিটিং পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যারা বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্টিগ্রেটেড টিকিটিং সিস্টেম পরিচালনা করে, তারা মূলত টিকিটিং ব্যবস্থা তদারক করে থাকে। এক কথায়, রেল টিকিটিং ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করে অনলাইন টিকিটিং পরিষেবা দেওয়াই তাদের মূল কাজ। তাদের পক্ষে কাউন্টার থেকে টিকিট ইস্যু করা সম্ভব নয়। তারা মূলত কারিগরি দিক এবং ই-টিকিটিং সিস্টেম তদারক করে। এমনকি টিকিট কেনার জন্য অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ছাড়া অন্য কোনোভাবে রেলসেবা অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে পেমেন্ট সম্পন্ন করা যায় না। 

লেখক: মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন: সভাপতি, টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।

আরএস/এম হাসান

×