সাইবার সিকিউরিটির বিদ্যমান সক্ষমতা স্মার্ট বাংলাদেশ
সাইবার সিকিউরিটির বিদ্যমান সক্ষমতা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যাপকভিত্তিক ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে হঠাৎ করে বিপুল ডিজিটাল কর্মকাণ্ড অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে। তিনি স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর হতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে
সভাপতি সভার বিষয়বস্তু ও উপস্থাপিত তথ্যাদির আলোকে ‘জিরো ডিজিটাল ডিভাইড ও সর্বজনীন সংযোগ’ নিশ্চিতকরণে করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত আহ্বান করেন। এ প্রেক্ষিতে সভায় উপস্থিত সদস্যগণ নিম্নরূপ মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ আহমেদুল কবির জানান যে, সর্বজনীন সংযোগ নিশ্চিত করতে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংযোগ প্রদানের প্রয়োজন হবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক জানান যে, আইএসপিএবি গ্রাহক পর্যায়ে Last Mile Solutions/সংযোগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে Nationwide Telecommunication Transmission Network (NTTN) দেশব্যাপী ক্যাবল সংযোগ দিয়ে থাকে। বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনা করে বর্তমান NTTN-এর সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। তাই এ সংখ্যা বাস্তবতার নিরিখে বৃদ্ধি করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিভাগীয় পর্যায়ে NTTN লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে।
ইন্টারনেট ক্যাবল দেশব্যাপী আন্ডারগ্রাউন্ড না ওভারহেড হবে- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত থাকা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ঢাকার ধানমণ্ডিতে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগের পাইলটিং সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত পাইলটিংয়ের ফলাফলের আলোকে দেশব্যাপী তা বাস্তবায়ন করা হলে ঝুলন্ত ক্যাবলের দৃষ্টিকটু উপস্থিতি দূর করা সম্ভব হবে।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে ক্যাবল কাটার বিড়ম্বনা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা সম্ভব না হলে সর্বজনীন, মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা দুরূহ হবে। এ প্রসঙ্গে এ বিভাগের সচিব আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগের বিষয়ে আইএসপিএবি হতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিলের অনুরোধ করেন।
এছাড়া অপঃরাব Sharing চালু করা হলে ক্যাবলের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে মর্মে আইএসপিএবির সভাপতি জানান। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশ (এমটব) এর মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার সভাকে জানান যে, কানেক্টিভিটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মৌলিক স্তম্ভ। এটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম। তাই কানেক্টিভিটি সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অপঃরাব Sharin কার্যক্রম গ্রহণ করে তা স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
NTTN-এর ক্ষেত্রে Role Out Obligation মানতে বাধ্য করে অথবা নতুন NTTN অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তারবিহীন সংযোগ প্রদানে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (MNO) প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশব্যাপী গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভবপর হবে।
তিনি সংযোগের ক্ষেত্রে ঝধভব Passage ও Cyber Security-এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া ক্যাবল, ট্রান্সমিশন ও ডাটার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া তিনি Base Transceiver Station (BTS) ফাইবারাইজেশন ও অপঃরাব Sharing-এর প্রস্তাব করেন।
৩.৪ টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান যে, সাইবার সিকিউরিটির বিদ্যমান সক্ষমতা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ব্যাপকভিত্তিক ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে হঠাৎ করে বিপুল ডিজিটাল কর্মকা- অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।
তিনি স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর হতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এ বিভাগের সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, ঊহফ টংবৎ-কে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ঝপরবহপব, Technology, Engineering, Mathematics (STEM) শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
৩.৫ যুগ্মসচিব (টেলিকম) জানান যে, বিটিআরসি কর্তৃক টেলিকম অপারেটরদের লাইসেন্স নবায়নের সময় Role Out Obligation যাচাই করে দেখা হলে ইন্টারনেট সংযোগ বিস্তার সহজ হবে। Role Out Obligation পূরণে ব্যর্থ হলে, সরকার প্রয়োজনে আইএসপি সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। সভাপতি বলেন যে, বিটিআরসির বিদ্যমান জনবল দিয়ে Role Out Obligation পূরণ ও গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টি যাচাই করার সক্ষমতা নেই। বিটিআরসিকে এ বিষয়ে জোর দিতে হবে।
কেবল সর্বজনীন সংযোগই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথেষ্ট নয়। এ জন্য Quality of Service নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে Centre of Excellence তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিটিআরসির নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু বিটিআরসিতে কোনো টেস্টিং ল্যাব নেই।
সেক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত কিংবা আমদানিকৃত টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির গুণগতমান যাচাই করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টেস্টিং ল্যাব থাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে টেলিযোগযোগ অধিদপ্তরে একটি সমীক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে।
৩.৬ টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন যে, গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিতে ফাইবার প্রয়োজন। গ্রামকে পর্যায়ক্রমে ৫এ বা ৬এ এর আওতায় আনতে হবে। ঘঞঞঘ অপারেটর বিশেষ করে বিটিসিএল যদি গঘঙ গুলোর সঙ্গে কাজ করে কোথায় কোথায় টাওয়ার বসাতে হবে তা নির্ধারণ করে নিতে পারে এবং ক্যাবল টাঙানোর পথে যত স্কুল, কলেজ বা গ্রোথ সেন্টারে যদি সংযোগ দেওয়া যায়, তাহলে একই বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।
এ ধরনের ক্যাবল সংযোগের ক্ষেত্রে বিটিসিএলের আর্থিক সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। তবে গঘঙ গুলো থেকে অগ্রিম নিয়ে বিটিসিএল হতে এ ধরনের সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। সভাপতি জানান, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। বর্তমানে প্রায় সকল উপজেলা পর্যায়ে সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এর পরবর্তী ধাপ হবে গ্রাম। গ্রাম থেকে বাড়ি বাড়ি সংযোগের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত সংযোগের পরিকল্পনা মধ্যমেয়াদি এবং বাড়ি বাড়ি সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে করা যায়।
৩.৭ বিটিআরসির কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরী জানান, Reinforcement Planning করা প্রয়োজন হবে। প্রতিটি ডিজিটাল ডিভাইসে সংযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে Resource Sharing-এর বিকল্প নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থায় Digital Literacy অন্তর্ভুক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য Human Resource ও Digital Resource-এর মধ্যে Interface বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তিনি Non-fungible Token (NFT), Artificial Intelligent (AI), Space Technology ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া সেমি কন্ডাক্টর উৎপাদন, Nano Technology-‡Z iƒcvš—i I Proper Networking Infrastructure Development-এর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
৩.৮ টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) নুরুল মাবুদ চৌধুরী জানান, রাস্তা মেরামত, সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির লাইন মেরামত ও সংস্কারের সময় বিপুল পরিমাণ ক্যাবল কাটা পড়ে। এক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। অন্যথায় সর্বজনীন সংযোগ নিশ্চিত করে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে।
বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর কয়েকটি হলো :
৪.১ উপকমিটির লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও দাখিলের জন্য দপ্তর/সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ নিয়ে কারিগরি উপকমিটি গঠন করতে হবে। গঠিত কারিগরি উপকমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য ক্ষেত্রসমূহের কার্যক্রমের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। উক্ত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নকারী এবং লক্ষ্যমাত্রা ও সময়সীমা উল্লেখ করতে হবে।
৪.২ জিরো ডিজিটাল ডিভাইড ও সর্বজনীন সংযোগ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সকল দপ্তর/সংস্থা হতে ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করতে উদ্দেশ্য, সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব/মতামত প্রেরণ করতে হবে।
৪.৩ উপকমিটির কার্যপরিধি সংশ্লিষ্ট করণীয় সম্পর্কে আইএসপিএবি, এমটব ও বাক্কো হতে লিখিত প্রস্তাব জরুরিভিত্তিতে এ বিভাগে দাখিল করতে হবে।
৪.৪ কানেক্টিভিটির বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যয় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
৪.৫ বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দিতে হবে এবং নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা ব্যবহার করতে হবে।
২ মার্চ ২০২৪
লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক
[email protected],ww w.bijoyekushe.net