ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

বিশ্বের বৃহৎ ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলা

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ১৬:০২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বিশ্বের বৃহৎ ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলা

.

বাংলাদেশে বইমেলাটি, মানে অমর একুশে বইমেলা এখন চলছে। প্রাণের মেলা ঘিরে বাঙালির আবেগ-উচ্ছ্বাস বরাবরের মতোই দিগন্তছোঁয়া। পৃথিবীর অন্য দেশেও বইমেলা হয়। তারাও তখন বই নিয়ে আলাদাভাবে মেতে ওঠে। আর অন্য সব দেশ, সকল ভাষাভাষী মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস কৌতূহল যেখানে গিয়ে এক হয়ে যায়, যেখানে গিয়ে বড় দোলাটি দেয় সে আয়োজনটির নাম ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলা। ইউরোপের দেশ জার্মানির ফ্র্যাংকফুর্ট শহরে প্রতিবছর অক্টোবরে এই মেলার আয়োজন করা হয়। ওদের, মানে, জার্মানদের ভাষায় আয়োজনটিকে বলা হয় ফ্র্যাংকফুর্টার বুচমেসে।বুচমেসেঅর্থ বইমেলা। ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য যেমন বহু বছরের পুরনো, তেমনি আছে বর্তমানকে প্রভাবিত করার বিপুল ক্ষমতা। মাত্র পাঁচ দিনের আয়োজন গোটা দুনিয়াকে মোটামুটি এক করে ফেলে! নামের সঙ্গেআন্তর্জাতিকশব্দটি যোগ করা না হলেও, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বইমেলা হিসেবে স্বীকৃত। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে গত বছর ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলায় অংশগ্রহণের বিরল সুযোগ হয়েছিল আমার। কারণেবিরলবলছি যে, এর আগে বাংলাদেশ থেকে পেশাদার কোনো সাংবাদিক ইভেন্টটি কভার করতে যাননি। সে যাই হোক, ফিরি মেলার আলোচনায়।

একটু পেছন থেকে বললে, অন্তত ৫০০ বছর আগে ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক শুরু ১৯৪৯ সালে। ওই বছরের ১৮ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ফ্র্যাংকফুর্টের পাউল গির্জায় অনুষ্ঠিত হয় মেলা। এতে ২০৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের  ৮৪৪টি বই প্রদর্শন করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭৫ বার মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আরও অনেক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি অংশগ্রহণের দিক থেকে আয়োজনটিকে এখন বই-সংশ্লিষ্টদের অলিম্পিক জ্ঞান করা হয়। গত বছর ১৮ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চলা মেলায় যোগ দিয়েছিল লাখ ১৫ হাজার মানুষ। তাদের বেশিরভাগই বাইরের দেশের। আয়োজকদের দেওয়া তথ্য মতে, ১৩০ দেশের মানুষ মেলায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সুনির্দিষ্টভাবে এমন অনেক তথ্যই আয়োজকরা ডিজিটালি সংগ্রহ সংরক্ষণ করে থাকেন। একুশের বইমেলায় কত লোকের আগমন ঘটে, বলতে পারবে কেউ? ফ্র্যাংকফুর্ট মেলার আয়োজকরা আয়োজনটিতে কারা আসছেন, মেলাটির চরিত্র কী হবে, কোন্ থিমের ওপর জোর দেওয়া হবে, এসব আগে থেকে ঠিক করে রাখেন। নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের হাতেই।

তবে আমরা যে ধরনের বইমেলা সাধারণত দেখে অভ্যস্ত, ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলা তার থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এখানে প্রকাশকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। মেলার আয়োজক জার্মান পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশন। এটি ঠিক বুকফেয়ার নয়, বুক ট্রেড ফেয়ার বা বই-বাণিজ্যমেলা। জার্মানির এএম মেইনে, যেখানে বাণিজ্যমেলাসহ সব ধরনের বড় আয়োজনগুলো করা হয়, সেই স্থায়ী অবকাঠামোতেই হয় বইমেলা। বাংলাদেশের মতো প্রতিবছর বাঁশ, ঢেউটিনের চালান নিয়ে খোলা মাঠে ঢুকতে হয় না। বানাতে হয় না ঘর বাড়ি। আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে সব। মেলায় একই দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ড বা প্যাভিলিয়ন নিয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করে। আবার সরকারিভাবে নেওয়াা ন্যাশনাল স্ট্যান্ড সংশ্লিষ্ট দেশের সমস্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে মেলায়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রকাশকরা ছাড়াও থাকেন তাদের এজেন্ট, গ্রন্থাগারিক, বাণিজ্যিক এবং পেশাদার সংঘ সমিতির কর্তাব্যক্তিরা। যোগ দেন সফটঅয়্যার, মাল্টিমিডিয়া, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, কনটেন্ট প্রভাইডাররা। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই সমবেত হন সবাই। জায়গাটিকে তারা আন্তর্জাতিক মিটিংপ্লেস হিসেবে ব্যবহার করেন। মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রথমত, বইয়ের স্বত্ব ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। বৈধ চুক্তির মাধ্যমে এক দেশের বই অনুবাদ আশ্রিত হয়ে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও এই প্রক্রিয়ায় বই আসে?- না, ভুলেও তা ভাবতে যাবেন না। এখানে অনুবাদের নামে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় চৌর্যবৃত্তি। ফ্র্যাংকফুর্টের মেলায় বিষয়টিকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। পাশাপাশি বই প্রকাশ, বইয়ের প্রচার, বিপণন এবং বাণিজ্যের সঙ্গে নিত্যনতুন যা কিছু যোগ হচ্ছে, সেসবের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান অংশগ্রহণকারীরা। চলে গুরুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান।

তাই বলে আয়োজনটি কিন্তু একতরফাভাবে ব্যবসায়ীদের নয়। তারা আয়োজক। অংশগ্রহণ বা ৎপরতার দিক থেকেও এগিয়ে। তথাপি মেলায় নিত্যদিন আলো ছড়ান পৃথিবী বিখ্যাত লেখক, কবি, অনুবাদক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, শিল্পী চলচ্চিত্র প্রযোজকসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষ বক্তৃতা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়। প্রশ্ন-উত্তর পর্ব, বাহাস ইত্যাদি চলে। সাধারণ পাঠক এবং দর্শনার্থীরা মেলায় যোগ দিতে পারেন শেষ দুই দিন। সব মিলিয়ে আয়োজনটি ঘিরে এমন এক জগতৈরি হয়, যেখানে একবারের জন্য হলেও ঢুঁ মারতে চান যে কোনো বইপ্রেমী মানুষ।

আমি মেলায় প্রথম পা রাখি উদ্বোধনী দিনে। হোটেল থেকে বের হয়ে যে মেট্রোতে চড়ে বসেছিলাম, সেটিই সরাসরি মেলায় পৌঁছে দিয়েছিল। ট্রেন থেকে নেমে যেখানে পা রেখেছি, সেখানেই এস্কেলেটর। এস্কেলেটরে করে ওপরে উঠতেই আবিষ্কার করলাম নিজেকে মেলার ভেতরে! এমন একটা এন্ট্রি সত্যি মনে রাখার মতো। আমাদের বইমেলারও কিন্তু সুযোগ ছিল এবার। বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্টরা চাইলে মেট্রোরেলে চড়ে আসা যাত্রীদের সরাসরি মেলায় ঢোকার ব্যবস্থা করে দিতে পারত। কিন্তু পথটি সামান্য ঘুরিয়ে দিয়ে তারা চমক থেকে পাঠকদের, আমি বলব, বঞ্চিত করেছেন।

আমাদের মেলা শুরু হয় ঢিলেঢালাভাবে। কিন্তু ফ্র্যাংকফুর্টে যেদিন শুরু, সেদিন খুব সকালে গিয়ে দেখেছি, লোকে লোকারণ্য মেলা। এরপর প্রতিদিনই দেখেছি অভিন্ন চেহারা। বোঝার সুবিধার্থে বলি, ঢাকার আন্তর্জাতিক চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র যত বড়, তারচেয়েও বড় এবং কয়েকতলা বিশিষ্ট ছয়টি প্রদর্শনী হল নিয়ে ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলা। মাঝখানে খোলা মাঠ। কিছু খাবারের গাড়ি এখানে থাকে। তবে আমাদের মতো হাটবাজার বসানোর সুযোগ নেই। আলাদা আলাদা হলেও প্রতিটি হলঘরের দ্বিতীয় তলার করিডর একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত। অবাধ যাতায়াতের জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রদর্শনী হলের সব ফ্লোরে বুক স্ট্যান্ড প্যাভিলিয়ন। কিন্তু বিন্যাস এত পরিকল্পিত যে, নিজেরটি খুঁজে পেতে মোটেও বেগ পেতে হয় না। আমাদের বইমেলায় তেমনটি কেউ আশা করতে পারেন?

ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলার স্ট্যান্ড প্যাভিলিয়নগুলো খুব আকর্ষণীয় হয়। বিশেষ করে প্যাভিলিয়নগুলোতে একেক দেশ একেক ঐতিহ্য, একেক রুচির বহির্প্রকাশ ঘটায়। বইগুলোও আমাদের মেলার মতো একভাবে চোখের সামনে বিছিয়ে রাখা হয় না। ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। মেলার প্রতিটি প্যাভিলিয়ন বা স্ট্যান্ডে বসার ভালো ব্যবস্থা থাকে। একসঙ্গে একাধিক টেবিলে চলে মিটিং। সহজ করে বললে, কে কি কিনতে চান, বিক্রি করতে বা কোন্ ইস্যুতে একযোগে কাজ করতে চান, তা মিটিংয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হয়।

ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলায় মূল আয়োজনের বাইরেও আকর্ষণীয় অনেক ইভেন্ট থাকে। সব মিলিয়ে তাই এটিকে বলা যায় আন্তর্জাতিক মহাযজ্ঞ! আয়োজকরা বছরজুড়েই এই যজ্ঞের প্রস্তুতি নেন। এখন যখন লিখছি, ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখলাম ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলার নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মেলা শেষ করে দেশে ফেরার কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের -মেইল পেয়েছি। তারা জানতে চান, সাংবাদিক হিসেবে গত মেলাটি আমার কেমন লেগেছে? কী অভিজ্ঞতা? কোনো পরামর্শ আছে কিনা! তাদের আয়োজনটি কেন তাহলে বিশ্বসেরা হবে না? অথচ বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ অমর একুশে বইমেলা শেষ করে চলে যায় গভীর ঘুমে।

চরম হতাশার বিষয় হলো, ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও আমাদের কোনো পূর্ব পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি থাকে না। হ্যাঁ, অনেক বছর ধরে ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলায় অংশগ্রহণ করে আসছে বাংলাদেশ। সরকারিভাবে প্রতিবছর ন্যাশনাল স্ট্যান্ড নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের নামে নেওয়া স্ট্যান্ড বাংলাদেশের সমস্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করার কথা। দেশীয় প্রকাশনার খোঁজখবর দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান ব্যবসায়িক যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠার কথা। তেমন কিছুই সেখানে দেখিনি। বরং প্রথম দিন মেলা যখন লোকে লোকারণ্য, প্রতিটি স্ট্যান্ড প্যাভিলিয়নে যখন কৌতূহলী মানুষের উপচেপড়া ভিড়, গমগম করছে চারপাশ, তখন বিকেলের দিকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডে গিয়ে রীতিমতো আক্কেল গুড়ু অবস্থা হয়েছিল আমার। একটিমাত্র স্ট্যান্ড, মানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্ট্যান্ডটি তখনো শূন্য পড়ে আছে। এখানে বই বা টেবিল চেয়ার তো দূরের কথা, আয়োজকদের করে দেওয়া স্টেনলেস স্টিলের কাঠামোটি ছাড়া কিছু ছিল না। সরকারি কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের বিপুল টাকা খরচ করতে একদিন আগে ফ্র্যাংকফুর্টে পৌঁছলেও স্ট্যান্ড গোছানোর কাজটি তারা করেননি। তাদের সেদিন ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার। তখন ভদ্রভাষায় এক ধরনের তাচ্ছিল্যই করেছিলেন মেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট মারিফে বোক্স গ্রসিয়া। নিজের মোবাইল ফোনে মেলার এ্যাপ বের করে আমাকে বলছিলেন, দেখ, তোমাদের ন্যাশনাল স্ট্যান্ড সার্চ দিয়ে দেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো বইয়ের ক্যাটালগও নেই। প্রাথমিক সার্চেই যদি এমন শূন্য মনে হয়, তাহলে কেন কেউ দেশের স্ট্যান্ডে যাবে?

তবে বইমেলা সফল করতে শুধু যে আয়োজকরাই কাজ করবে, তা নয়। সমাজটাও তেমন হতে হয়। আমাদের আজকের সমাজে তো সবই এলোমেলো। পাঠাভ্যাস শিকেয় উঠেছে। বড় অংশটি স্থূল চর্চায় ব্যস্ত। অথচ জার্মানি ফ্রান্স ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে এখনো মানুষ বই পড়ে। মেট্রোতে কত যে দেখেছি, যাত্রী নীরবে বই পড়ছে। ফ্রান্সে এক নদীর ধারে দেখলাম, মিষ্টি রোদে বসে এক তরুণী মা তার কন্যা শিশুটিকে বই পড়ে শোনাচ্ছেন। এই বইয়ের মানুষরা, আমার পর্যবেক্ষণ, ফ্র্যাংকফুর্ট বুচমেসের মূল শক্তি। এই মানুষরাই টিকিট কেটে যায় বইমেলায়। আমাদের মেলায়ও অন্তত বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে টিকিট কেটে প্রবেশের ব্যবস্থা করা জরুরি। ফ্র্যাংকফুর্টে বক্তৃতা শুনতেও অর্থ খরচ করতে দেখেছি। শেষবার মেলায় বক্তৃতা করেছেন সময়ের তুমুল আলোচিত লেখক সালমান রুশদি।

তার বক্তৃতা অনুষ্ঠানের সব টিকিট অনেক আগেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বক্তৃতা শোনেন। কাজের ফাঁকে একদিন ফ্র্যাংকফুর্টের পুরনো শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন আবার বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মাঝে চোখে পড়ল ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে একটি সাইটস্ক্রিনে কী যেন দেখছে কিছু মানুষ। কাছে গিয়ে বুঝলাম, ভেতরের মিলনায়তনে বইমেলার একটি আলোচনা চলছে। আসন খালি নেই। তাই বাইরে দাঁড়িয়ে সরাসরি সম্প্রচার দেখছে তারা! উদ্বোধনী দিন দেখেছি, মেরাথন আলোচনা। সবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এমন নয়। কিন্তু হাজার হাজার শ্রোতা। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে দেখলাম না আমরা কবে এই ভালো অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে পারব? কবে জ্বলে উঠতে পারব বই পড়ার শক্তিতে? কবে অমর একুশে বইমেলাটিকে প্রকৃত অর্থে সার্থক করে তুলতে পারব? কবে ফ্র্যাংকফুর্ট বইমেলায় গিয়ে বেড়ানোর পরিবর্তে বাংলাদেশটাকে তুলে ধরতে পারব আমরা?- প্রশ্নগুলো অন্তত তুললাম। তোলাটা জরুরি হয়ে গেছে বলেই।

লেখক : সাংবাদিক

 

×