ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

কেমন হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২১:০০, ২০ জানুয়ারি ২০২৪

কেমন হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা

নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রাথমিকভাবে ৩১ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রাথমিকভাবে ৩১ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনেকে বাদ পড়েছেন, যুক্ত হয়েছেন অনেকে। টিকে গেছেন বেশ কয়েকজন। আপাতত মন্ত্রিসভা ৩১ সদস্যের হলেও শীঘ্রই বাড়তে পারে এর কলেবর। গত মন্ত্রিসভার সদস্য ছিল ৪৮ জন। এর মধ্যে মন্ত্রী ছিলেন ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন, উপমন্ত্রী ৩ জন। এবার মন্ত্রী ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। কোনো উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মন্ত্রিসভা ঘোষণা করার পর সর্বসাধারণের আলোচনার প্রথম বিষয়বস্তু ছিল ‘কেমন হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা।’

কেউ বলছেন ভালো হয়েছে, কেউ আবার ভিন্ন মত পোষণ করছেন। ব্যক্তি ধরে ধরে আলোচনাও হচ্ছে সবখানে। অতীতে যারা মন্ত্রী ছিলেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে ধারণা রয়েছে সবারই। নতুন যারা যুক্ত হয়েছেন, তাদের কর্মদক্ষতা কেমন হবে তা মূল্যায়নে অপেক্ষা করতে হবে কিছুদিন।   
গত মন্ত্রিসভা থেকে যারা বাদ পড়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। আরও বাদ পড়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবার নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। তারা হচ্ছেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে আরও বাদ পড়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

আগের মন্ত্রিসভার যারা টিকে গেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তাদের আগের মন্ত্রণালয়ই বহাল রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবার পেয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

দপ্তর পরিবর্তন করে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান এবং অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগেও মন্ত্রী ছিলেন। কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, পূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন, সংস্থাপন মন্ত্রী মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম (অব), রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৯৬ সালের সরকারে উপমন্ত্রী ছিলেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০১৪ সালের সরকারে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আগে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বন্দর ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক আগের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এবার তাদের দপ্তরও অপরিবর্তিত রয়েছে। শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোমেন রিমি, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) এবারই প্রথম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এবার মন্ত্রিসভায় এখন পর্যন্ত কোনো উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 
নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে আবদুস শহীদ ১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা সাত বারের সংসদ সদস্য। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে সরকারি দলের হুইপ, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলের চিফ হুইপ, ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত সরকারি দলের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত সংসদে তিনি সংসদের গুরুত্বপূর্ণ অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি ছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পালন করেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। অভিজ্ঞ সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সহযোগিতা নিলে তিনি সমৃদ্ধ হতে পারবেন। নির্মোহ দায়িত্ব পালনে তিনি হতে পারেন একজন সফল কৃষিমন্ত্রী। 
উবায়দুল মোক্তাদির দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। পরে ছিলেন সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা। ’৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ’১৪, ’১৮ এবং ’২৪ সালে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত সরকারের পূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কর্মদক্ষতা ছিল অনেকটাই ম্লান। এবার উবায়দুল মোক্তাদির হয়তো শক্ত হাতে হাল ধরতে পারবেন গুরুত্বপূর্ণ পূর্ত মন্ত্রণালয়ের।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। এবার নিয়ে তিনি দ্বিতীয় দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রিসভায় নতুন হলেও দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তিনি মন্ত্রণালয়ের গতি ফেরাতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আলোচিত সভাপতি। দীর্ঘ সময় ধরে এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেট আজকের অবস্থানে তুলে আনার পিছনে অবশ্যই তার সাংগঠনিক দক্ষতা কাজ করেছে। এ ছাড়া তিনি দেশের বড় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের পুত্র পাপন বড় হয়েছেন একটি রাজনৈতিক আবহে। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভালো নেতৃত্ব দেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। এই প্রতিষ্ঠানটি তিনি গড়েছেন নিজ হাতে এবং দাঁড় করিয়েছেন সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তিনি সভাপতি ছিলেন প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির। দীর্ঘদিন তিনি স্বাস্থ্য খাতটি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। সৎ, দক্ষ, কর্মঠ এবং উদ্যোগী মানুষ হিসেবে তিনি সকল লুটপাট, অনিয়ম দূর করে স্বাস্থ্য খাতের চেহারা বদলে দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান এই মন্ত্রণালয়ে অতীতে সাফল্য দেখিয়েছেন।

বিমানের সিডিউল বিপর্যয় রোধ করে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চান আকাশ পথের হাব হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর এই ভিশন বাস্তবায়ন হবে সাতবারের সংসদ সদস্য ফারুক খানের নতুন চ্যালেঞ্জ। 
বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দায় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশের অর্থ খাত। ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বিশৃঙ্খল ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ২০১৪-’১৯ সাল পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এবার নিয়ে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সফল কূটনীতিককে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকে। পেশাদার কূটনীতিক হলেও তার অতীত ছিল অর্থনীতির।

তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ’৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে দুই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ’৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। প্রতিবেশী ভারতে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে অর্থমন্ত্রী হিসেবে সাফল্য দেখিয়েছেন। আগামী সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী তাই অভিজ্ঞ মাহমুদ আলীকে বেছে নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সৎ, স্মার্ট, উচ্চ শিক্ষিত এবং দক্ষ এই রাজনীতিক উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক সচিব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পাঁচবারের সংসদ সদস্য, আন্তর্জাতিক ইন্টার পার্লামেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিরূপ বিশ্বে পরিবেশ মন্ত্রণালয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করবেন বলে সকলের প্রত্যাশা।

শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা। মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন স্বামীর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক পরিবেশ বেড়ে ওঠা রিমি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং সততা ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন দক্ষ মন্ত্রী হিসেবে তিনি পিতা-মাতার ঐতিহ্য ধরে রাখবেন বলেই সবার প্রত্যাশা।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত একজন মেধাবী উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গত এক যুগের বেশি রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। সুশিক্ষিত, উদ্যমী এবং পরিশ্রমী আরাফাত নতুন প্রজন্মের সফল মন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। 
পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা তিনবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইতোপূর্বে তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক।

তিনি স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, কৃষক লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠনের দীর্ঘদিনের সভাপতি, পাঁচবারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলীর কন্যা। অসুস্থতার কারণে রহমত আলী ২০১৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি। তার কন্যা রুমানা আলীকে টুসী সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করা হয়। এবার নির্বাচনে তিনি গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন। প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

পরে তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি সিলেটের আরেক নেতা ইমরান আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাজী মকবুল হোসেনের পুত্র। মেধাবী টিটু থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পিতার ব্যবসায় হাল ধরেন। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ টিটু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবার নিয়ে তিনি দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। দ্রব্যমূল্য, সিন্ডিকেটেড ব্যবসা, আন্তর্জাতিক মন্দায় অস্থিতিশীল বাজার ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার সামনে। সফল ব্যবসায়ী, তরুণ এবং উদ্যমী টিটু কতটা প্রধানমন্ত্রীর ভরসার স্থান রক্ষা করতে পারেন, এটিই এখন দেখার বিষয়।   
      
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×