ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

প্রযুক্তির অপব্যবহার

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রযুক্তির অপব্যবহার

সম্পাদকীয়

পরীক্ষায় জালিয়াতি কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে চলমান সময়ে এসব নকলে প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। যাতে একাধিক জেলায় পরীক্ষা চলাকালীন নকল ধরা পড়ে। ১২৩ জন পরীক্ষার্থীসহ ২ জন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন বাইরে পাঠিয়ে দ্রুত সমাধান করে তা অসদুপায়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মতো অপকর্ম চলেছে।

পাশাপাশি এবার যে অভিনব পদ্ধতিতে নকল হয়েছে সেটি হলো- ব্যাংকের মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ডের অপব্যবহার। এসব কার্ডের মাধ্যমে সাধারণত টাকা তোলা হয়। কার্ডগুলোর মধ্যে যেসব চিপ থাকে, সেগুলোর সঙ্গে ডিভাইসকে সংযুক্ত করা হয়। আর পরিক্ষার্থীর কানে থাকে ছোট ব্লুটুথ। সেটির সাহায্যে মোবাইল ফোনের মতো কথা বলে উত্তর শুনে উত্তরপত্রে লেখা যায়। 
সংশ্লিষ্টদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, এবারের পরীক্ষা আগের চেয়ে স্বচ্ছ হয়েছে। যার ফলে জালিয়াতি করে পার পাওয়া যায়নি। তবে এই বক্তব্যের যথার্থতা কতটুকু, সেটিও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে মূল সমস্যা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতায়। প্রাথমিক শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পাস। এখন সেটি বাড়িয়ে ন্যূনতম স্নাতক করা হয়েছে। এতে করে পরীক্ষার্থীরা ভালো-মন্দ বোঝার মতো বয়স এবং পরিপক্ব মানসিকতা নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখানে তাদের মধ্যে নকল করার প্রবণতা থাকা নীতিহীনতার পরিচায়ক বৈকি। এর পেছনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।

শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার শুরু থেকেই শুধু পাঠ্যবইয়ের পড়া গলাধঃকরণের মাধ্যমে ভালো ফল করার মানসিকতা নিয়ে লেখাপড়া করে। স্বল্পসংখ্যক সচেতন অভিভাবক ছাড়া দেশের বেশিরভাগ অভিভাবকও শুধু ভালো ফলে বিশ্বাসী। সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে পাঠ্যবইয়ের পড়া মুখস্থ করার মাধ্যমে পরীক্ষায় ভালো ফলই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে পরিণত বয়সে এসেও তারা ছাঁচ থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয় না।
শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। যেখানে কারিগর নিজেই অন্যায় এবং অনৈতিকতায় পর্যুদস্ত, সেখানে তার কাছে নৈতিকতা আশা করা কতটুকু যৌক্তিক? সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এতে একজন শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য লেখাপড়া করে উত্তীর্ণ হতে হয়। সেখানে আরেকজন পরীক্ষার্থী কোনোরকম শ্রম ছাড়া শুধু অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে- এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি আরও কলুষিত হয়ে ওঠে যখন তাতে শিক্ষকের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের শিকড় থেকে সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক অসদুপায় অবলম্বন করে ধরা পড়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বাঞ্ছনীয়।

×