সম্পাদকীয়
মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্য নিয়ে ২৫ নভেম্বর শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ১৫ দিনের পক্ষ শেষ হবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন।’ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ বাংলাদেশ এবং এলসিজিওয়েজের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে পক্ষটি। একবিংশ শতাব্দীর এ সময়েও প্রতি তিনজন নারীর একজন কোনো না কোনো ভাবে শিকার হন সহিংসতার।
যাদের অধিকাংশই লোকলজ্জার ভয়ে আইনের আশ্রয় থেকে বিরত থাকেন। শারীরিক সহিংসতা বা মারধরের শিকার কখনো কখনো নিজ পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। অনেক নারী বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেয় বা নিতে বাধ্য। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা যৌন হয়রানির কারণে মেয়েরা নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে। আত্মীয়স্বজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থানে নারী ও কিশোরী হরহামেশা হয়রানি এবং নির্যাতনের মুখোমুখি হন।
বর্তমানে অনলাইনেও নারীর সঙ্গে নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই নারীরা অশ্লীল, ক্ষতিকর, যৌনতামূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পেয়ে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে এমন সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে আরও সজাগ হতে হবে। কিশোর-কিশোরীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু তারা জানে না কোথায় কী ভাবে সহায়তা পেতে হয়। এ কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিভাবে সহজে সাহায্য পাওয়া যায়, তা প্রচার করতে হবে।
বর্তমানে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সর্বক্ষেত্রে রয়েছে নারীর পদচারণা। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত নারী। গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠা করে তৈরি হয়েছে বহু নারী উদ্যোক্তা। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের মান বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো ফায়ারফাইটার পদে ১৫ নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নারী এগিয়ে যাচ্ছে তার আপন শক্তি, মেধা ও মননে। এরপরও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বহু নারী। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১০ মাসে নারী নির্যাতনের ১ হাজার ২১৮টি খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এসব ঘটনার ৪১ শতাংশ ধর্ষণের ও ৩৬ শতাংশ পারিবারিক নির্যাতনের। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। তাদের পদচারণা মসৃণ না হলে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সহিংসতা প্রতিরোধে শুধু বিনিয়োগই যথেষ্ট নয়, নারী-পুরুষ সবারই পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশের উন্নয়নে নারীর অবদান পুরুষের থেকে কম নয়। তাই নারীকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নারী নির্যাতনের মামলার বিচার কাজও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। তাহলেই কমে আসতে পারে নারী নির্যাতন-নিপীড়ন।