ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

সম্পাদকীয়

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই দলের নেতৃত্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বিগত পনেরো বছর যাবৎ দেশ পরিচালনায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এটি একটি রেকর্ড। একই সঙ্গে এটাও বলা যায় যে, দেশে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়নও হয়েছে এই পনেরো বছরে। ফলে, এমন একটি দলের প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রাজনৈতিক দল নিজ বিবেচনাতেই প্রার্থী বাছাই করে থাকে। সেক্ষেত্রে সবার ওপরে স্থান দেওয়া হয় প্রার্থীর জনসম্পৃক্ততা ও আস্থার বিষয়টি।

এলাকাবাসীর কাছে অগ্রহণযোগ্য অথচ ধনসম্পদের বিচারে প্রভাবশালী- এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা নয়। এবারে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ কেমন প্রার্থী দিয়েছে, সেটি প্রার্থী তালিকার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে যে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যথাযথ যাচাই-বাছাই করেই দল প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে, তাতে কোনো সংশয় নেই। বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে অনেক বিষয় সামনে চলে আসে।
রবিবার দুটি আসন বাদে বাকি ২৯৮টি আসনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সংসদের ৩০০ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয় ৩ হাজার ৩৬২টি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীকে প্রার্থী না করার বিষয়টি। তিন প্রতিমন্ত্রীসহ ৭১ এমপিই বাদ পড়েছেন প্রার্থী তালিকা থেকে। দলে নতুন মুখ যেমন আসবে, তেমনি আগামীতে নতুনদেরও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তবে অভিজ্ঞতারও একটা মূল্য আছে বৈকি। অভিজ্ঞ পার্লামেনটারিয়ানদের তেমন কাউকেই দল প্রার্থী তালিকার বাইরে রাখতে চায় না, যদি সংশ্লিষ্ট এমপির ভূমিকা বিতর্কিত না হয়।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় কিছু চমক থাকলেও এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অভিজ্ঞ ও পুরনোদের ওপরেই দল বেশি ভরসা করেছে। প্রার্থী তালিকায় তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৮ জন নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এত কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় মনোনয়ন পাননি। কেন্দ্রীয় কমিটির সাতজন প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। ২৯৮ আসনে শতাধিক নতুন মুখ স্থান পেয়েছে।
সমাজ বদলে যাচ্ছে। আগে রাজনীতি ছিল শতভাগ রাজনীতিকদের হাতে। রাজনীতিবিদরাই সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পেতেন। এখন রাজনীতিতে আসছেন বিভিন্ন পেশাজীবীরাও। সংসদ সদস্য পদের মনোনয়ন লাভের মধ্য দিয়েও অনেকের রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটছে। খেলোয়াড়, চিত্রতারকার পাশাপাশি সাবেক সচিব, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা মনোনয়ন লাভ করেছেন। মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে ব্যবসায়ীরাও আছেন বেশ কয়েক জন। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী ও সংগীতশিল্পীও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন। সে বিচারে বলা যায়, সমাজের বিচিত্র শাখা ও স্তর থেকে উজ্জ্বল ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এমন সংস্কৃতিই চলে আসছে বিগত কয়েক বছরে। তবে এবার বিশেষভাবে এবং ইতিবাচকভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নারী প্রার্থীর বিষয়টি। নৌকা প্রতীক নিয়ে সরাসরি লড়বেন ২২ নারী। এটিও একটি রেকর্ড। প্রায় সমান সংখ্যক নারী-পুরুষের দেশে সংসদ সদস্য হিসেবে নারীর সংখ্যা পুরো আনুপাতিক হারে না হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক থাকাই বাঞ্ছনীয়। তবে ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে আসন বণ্টনের পরই চূড়ান্ত হবে বিষয়টি। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সাপেক্ষে দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ্যতম প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবে- এমনটাই প্রত্যাশা।

×