.
হন্তারক ব্যাধি ডেঙ্গু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের একদল গবেষক ডেঙ্গু প্রতিরোধে সক্ষম টিকা টিভি-০০৫ (টেট্রাভেলেন্ট)-এর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সহজভাবে সম্পন্ন করেছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর এই টিকার সফল প্রয়োগ শুরু হয়। গত তিন বছরে তাদের রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। এরপর তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পূর্ণ করা হবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সংশ্লিষ্ট গবেষক দল জানিয়েছেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সক্ষম টেট্রাভেলেন্ট ভ্যাকসিনের মতো কার্যকর একটি টিকা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু দেশের অভ্যন্তরে প্রায় মহামারির আকার ধারণ করেছে।
এটি এখন আর শুধু বর্ষাকাল নয়, পরিণত হয়েছে সারাবছরের আতঙ্কে। ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যান্সসেট ইনফেকশাস ডিডিজেস পত্রিকায় এই টিকা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে শুরু হবে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন। এটি ডেঙ্গুর ৪টি ধরনের বিরুদ্ধেই কার্যকর। উল্লেখ্য, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সক্ষম কয়েকটি টিকা আফ্রিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কোনো টিকা এতদিন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যা হোক, বাংলাদেশে উদ্ভাবিত টিকাটি কার্যকর প্রমাণিত হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে অগ্রসর হবে বলেই প্রত্যাশা। তবে টিকার দাম ও প্রাপ্যতা যেন সুলভ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনো দেখা যায়নি। তবে বাজারে টিকা না আসা পর্যন্ত এডিস মশা নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে আরও উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে। আপাতত এর কোনো বিকল্প নেই।
ডেঙ্গুতে এবার মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় এমনটি হতে পারে। এজন্য জ্বর হলেই অবহেলা না করে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। যে কোনো সংকটময় মুহূর্তে হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দেয়। ওষুধপত্রসহ সেলাইনের সংকটও আছে। তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হলেই নিতে হবে জ্বরে আক্রান্ত কোনো রোগী যেন অযতেœর শিকার না হয়। ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শহরে বেশি হলেও ঢাকার বাইরেও ঘটছে এডিস মশার বিস্তার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় ডেঙ্গুর মৌসুমও দীর্ঘ হচ্ছে।
ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোর ভবন, খোলা জায়গা, মাঠ, ফুলের টব, পানির পাম্প বা যেসব জায়গায় পানি জমে- এ রকম পাত্র, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার ট্রে, পানির ট্যাপের আশপাশের জায়গা, বাথরুম ও কমোড, গ্যারেজ, নির্মাণাধীন ভবন, লিফট ও সিড়ি, পরিত্যক্ত বস্তুসহ মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সিটি করপোরেশন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন যথাযথ হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে তদারকি প্রয়োজন। স্কাউটস, বিএনসিসির সদস্য এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।