ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঢাকার দিনরাত

প্রায় মহামারিসম হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু

প্রায় মহামারিসম হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। এমনটি হতে পারে সে আশঙ্কার কথা গণমাধ্যমে বারবার এসেছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার আগে যেসব দরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, সেগুলো করা হয়নি। ডেঙ্গু শুরু হয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে যেসব সক্রিয়তা কাম্য, সেখানেও ঘাটতি দেখা গেছে। এটা খুবই কষ্ট ও ক্ষোভের কথা যে, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৮০৪ জনের মৃত্যু হলো

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই সেটি মৃদু তাপপ্রবাহ। এখনকার প্রচণ্ড গরমের একটি বড় কারণ বৃষ্টি না থাকা বা একেবারেই কম থাকা। আবহাওয়া অফিস প্রতিদিন ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। শনিবার ২৪ ঘণ্টায় দেখা গেছে, ৪৪টির মধ্যে মাত্র ৩টি স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছে। ক’দিন ধরে বৃষ্টিহীন রাজধানীও। ঢাকার তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে। ভাদ্র মাস পেরিয়ে আশি^নে সাধারণত এত গরম থাকে না। ঢাকাবাসীর কষ্ট বাড়ছে।

ডেঙ্গুর শিকার ৮০০ মানুষ

প্রায় মহামারিসম হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। এমনটি হতে পারে সে আশঙ্কার কথা গণমাধ্যমে বারবার এসেছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার আগে যেসব দরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, সেগুলো করা হয়নি। ডেঙ্গু শুরু হয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে যেসব সক্রিয়তা কাম্য, সেখানেও ঘাটতি দেখা গেছে। এটা খুবই কষ্ট ও ক্ষোভের কথা যে, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৮০৪ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হলো ২১১ জনের। আমরা জানি, রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ার রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়।

রবিবার কলাম লেখার ফাঁকে ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে যে তথ্য পাই তাতে মনটা বিষণœ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জেলায় শিরায় দেওয়া স্যালাইনের সংকট চলছে। একাধিক সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চাহিদামতো স্যালাইন দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে স্যালাইন আমদানি শুরু করেছে সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্যালাইন উৎপাদন হয় না। শিরায় দেওয়া স্যালাইন উৎপাদন করে ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে স্যালাইন কেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। ইডিসিএল সেসব স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে। দিনরাত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করে গেলেও ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বাড়ায় স্যালাইনের সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের আশাই সম্বল, নিশ্চয়ই কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

প্রতিদিন প্রতিটি পরিবারে 
চাই যে তিনটি জিনিস

৩০টি জিনিস প্রতিদিন প্রতিটি পরিবারে প্রযোজন হলেও তালিকার শীর্ষে যে কয়েকটি পণ্য থাকবে তার ভেতর ডিম, আলু আর পেঁয়াজকে স্থান দিতেই হবে। এই তিন খাদ্যপণ্যের দাম বারবার বাড়তে থাকায় সরকারিভাবে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই দামের চেয়ে বেশি দামে মানুষ বাধ্য হচ্ছেন পণ্য তিনটি কিনতে।
সরকার প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকায় বেঁধে দিলেও ক্ষুদ্র দোকানির কাছে বেশি দামে কিনতে গিয়ে ক্রেতারা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। বিক্রেতাদের যুক্তিও শুনতে হয় গণমাধ্যমকে। কেন সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না, সেই ব্যাখ্যা দোকানিরা এভাবে দিচ্ছেন : ডিমের আড়ত থেকে প্রতি শ’ ডিম কিনছি ১ হাজার ১৪০ টাকায়। প্রতি ডিমের পাইকারি দাম পড়েছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। এর সঙ্গে গাড়িভাড়া যোগ হবে। ডিম নষ্ট থাকে, ভেঙে যায়, সেই খরচও ধরতে হবে। দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও ডিমের প্যাকেজিং খরচও আছে। সব মিলিয়ে প্রতি ডিমে খরচ আসে ১২ টাকার ওপর। তাহলে কিভাবে তারা ডিম ১২ টাকায় বেচবেন? 
ঢাকার তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির প্রেসিডেন্টের ভাষ্য : খামারিদের উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা না করে এভাবে ডিমের দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো মানে হয় না।
সরকার অন্য আরও দুটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছেÑ পেঁয়াজ ও আলু। এ দুটি পণ্যও সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরায় প্রতি কেজি আলুর সরকার নির্ধারিত দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। কিন্তু বাজারে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ এক কেজি আলুতে অন্তত ১৪ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। অর্থাৎ বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি। আর আমদানি করা পেঁয়াজের খুচরা দাম পড়ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে অভিযান হচ্ছে। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী এটাকে ‘সমস্যার গোড়ায় হাত না দিয়ে আগা ধরে টানাটানি’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, সরবরাহব্যবস্থার ওপরের দিকে দাম না কমালে খুচরা বাজারে দাম কমানো সম্ভব নয়। 

আরেকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড 

বর্ষা মৌসুমেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচা মার্কেটের (কৃষি মার্কেট) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বলে দেয় রাজধানীর মার্কেটগুলো অগ্নিদুর্ঘটনার দিক থেকে কতটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় সূত্রপাত হওয়া আগুন ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রায় পাঁচ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে আড়াই শ দোকান হয় পুড়ে যায়, না হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কয়েক শ’ ব্যবসায়ী তাঁদের জীবিকার সম্বল হারান। আর সব অগ্নিকাণ্ডের পরই যেমন বেরিয়ে আসে মার্কেট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সীমাহীন ফিরিস্তি, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটও তার ব্যতিক্রম নয়।

প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বাস্তবে অগ্নিকাণ্ড কিংবা অন্য যেকোনো দুর্ঘটনার অজস্র কারণ মার্কেটটিতে বিদ্যমান ছিল। একতলা টিনের ছাউনির মার্কেটটিতে উত্তর সিটি করপোরেশন কাগজে-কলমে বরাদ্দ দেয় ৩১৭টি দোকান। কিন্তু বাস্তবে মার্কেটটিতে দোকান ছিল ৫০০-এর বেশি। এর বাইরেও দোকানমালিক ও ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দোকানের সিলিংয়ের ওপর গুদাম নির্মাণ করেছিলেন, যেগুলো তাঁরা অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিতেন। মার্কেটটিতে আগুন নেভানোর কোনো উপকরণ কিংবা পানির উৎস ছিল না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ছয় মাস আগে কৃষি মার্কেটকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলে দেয় রাজধানীবাসী অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকির ক্ষেত্রে কতটা জরুরি অবস্থার মুখে রয়েছেন। শুধু অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি নয়; ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে, এ রকম মার্কেটও দিব্যি চালু রয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট ১৫ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও ব্যবসায়ীরা সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

দারুণ ঝকঝকে ধানমণ্ডি লেক

ধানমন্ডি লেকের একটা আলাদা পরিচিতি আছে। যদিও বর্তমানে এটির বিপন্ন দশা। লেকের বিভিন্ন অংশে জমে থাকে ময়লা-আবর্জনা। লেকের পাড়ে ও পানিতেও থাকে খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, কাপ ও পলিথিনের ব্যাগসহ বিভিন্ন বর্জ্য। লেকের বিভিন্ন অংশের রেস্তোরাঁয় নির্ধারিত জায়গার বাইরে পেতে রাখা হয় চেয়ার-টেবিল। ময়লা-আবর্জনা আর যত্রতত্র চেয়ার-টেবিলের কারণে থাকে না হাঁটার পরিবেশ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরে ধানম-ি লেকে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে হঠাৎ করেই বদলে যায় রাজধানীর এই লেকের চিত্র। লেকটির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে লেকটিকে ঘষেমেজে ঝকঝকে করা হয়। এ কাজ করতে টানা দুই দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রায় ২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেছেন। 
লেকের হাঁটার রাস্তায় অনেক জায়গায় সিমেন্ট-বালুর আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রসরোবরের মঞ্চের খুঁটিগুলোতে দেওয়া হয়েছে রং। কিছু দূর পরপর হাঁটাপথের দুপাশে থাকা প্লাস্টিকের ময়লা ফেলার বিনগুলোও পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে যেন অন্য এক ধানম-ি লেক।

ঢাকার বাসযোগ্যতা

এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) বলে একটা কথা আছে আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে। জমি অনুপাতে ফ্লোরের মাপের একটা সামঞ্জস্য থাকে। ভবন কত উঁচু করা হবে, সেটিও বসবাসযোগ্যতার শর্ত। এফএআর এবং তলা বাড়ানো হলে বেশি লোকের জায়গা হয় বটে, কিন্তু বসবাসযোগ্যতা কমে যায়। বাস করা এবং বসবাসযোগ্যতা, এ দুটি বিষয় বিজ্ঞান ও সমাজসম্মতভাবে না বুঝলে জনঘনত্ব বাড়ে, ঘিঞ্জি হয়ে ওঠে পরিবেশ। ঢাকার বেশির ভাগ এলাকার সেই দশাই। 
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খানের দাবি, ড্যাপ সংশোধনের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের পরামর্শ না নিয়ে কেবল আবাসন ব্যবসায়ী এবং ইমারত নকশাকারী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও নষ্ট করায় ভূমিকা রাখবে। গত শনিবার ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ : আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। আইপিডি এ সভার আয়োজন করে।
ড্যাপ সংশোধনের প্রস্তাবনায় কী আছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রথমত, অন্তত তিন বছরের জন্য সরকারি ও বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আসছে। দ্বিতীয়ত, আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি আবাসন, বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণে আগ্রহীদের নাগরিক সুবিধা নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণের কারণে প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত দশমিক ৫ এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হবে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি পরিকল্পিত আবাসিক প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে ড্যাপে দেওয়া আছে। বৈশ্বিক মানের চেয়ে বেশি এফএআর দেওয়া আছে ড্যাপে। আমরা বলছিলাম, এফএআর আরও কমানোর জন্য। এখন বলা হচ্ছে সেখানেও বাড়ানো হবে।’

আলোকিত মানুষের প্রতিচ্ছবি

প্রাজ্ঞ প্রবীণেরা সমাজের বাতিঘর হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে জগতেরই নিয়মে তাঁরা বিদায় নেন। আফতাব উদ্দিন আহমেদ, যিনি শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের মেধা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এবং বাবা মায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতায় একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন, তিনি চলে গেলেন সম্প্রতি।।
রাজশাহী চারঘাট উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বাউশা। সেখানেই ১৯৩২ সালে তাঁর জন্ম। বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষা শেষ করে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানের বুয়েট)। ভর্তি হলেন। ১৯৫৬ সালে সাফল্যের সঙ্গে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেই পেশাজীবনে প্রবেশ করলেন। সাত বছর পরে বিয়ে করলেন জাকিয়া আহমেদ মেরিকে। পিডব্লিউডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অবসরে গেলেন ১৯৯১ সালে।

আফতাব উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন সুদর্শন পুরুষ,  ভালো  টেনিস খেলতেন, গান গাইতেন সুরেলা কণ্ঠে এবং তার দিন শুরু হতো রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে। প্রচুর পড়াশোনা করতেন। এক কথায় তিনি ছিলেন একজন আলোকিত জ্ঞানী মানুষ। বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেকে জড়িত করেছিলেন। এলাকার দুস্থ গরিব মানুষের মধ্যে চশমা বিতরণ, চক্ষু চিকিৎসা, গ্রামের যুব সমাজকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য নিজ বাড়িতে কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা, সাভারে হতদরিদ্র শিশুশ্রমে জড়িত বাচ্চাদের ঘরে ঘরে গিয়ে খুঁজে এনে নিজের জমিতে প্রতিষ্ঠিত ‘আলো  বিদ্যালয়ে’ পড়াশোনার ব্যবস্থা করাসহ নানাবিধ জনহিতৈষী কাজে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।

আফতাব উদ্দিন আহমেদের চার সন্তানের মধ্যে বড় কন্যা ডোনা সাব্রিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করে শিক্ষকতা পেশায় আছেন, ছোট মেয়ে তানজিনা লাবণ্য অ্যাপেক্স জুট মিলের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, বড় পুত্র আলফা আহমেদ বৈমানিক। আরেক পুত্র  করোনার সময় চলে গেছেন। আফতাব উদ্দিন আহমেদ পরিণত পরিপূর্ণ জীবন পেয়েছিলেন। ৯২ বছর বয়সে চলে গেলেন। অনাথের নাথ হয়ে রেখে গেলেন বিত্তবিচারের বাইরে মানুষকে ভালোবাসবার জীবনদর্শন।

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

[email protected]

×