দেশের বাইরের বাংলাদেশীদের মনোজগতের বেশির ভাগই দখল করে আছে দেশের রাজনীতি
দেশের বাইরের বাংলাদেশীদের মনোজগতের বেশির ভাগই দখল করে আছে দেশের রাজনীতি। সংস্কৃতি চালিকাশক্তি হওয়ার পরও রাজনীতি আমাদের পিছু ছাড়ে না। এর দায় মেটাতে গিয়ে বিদেশে বাঙালিকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি ঈর্ষা হিংসা বা হানাহানির বড় এক কারণ এই দলপ্রীতি। দল থাক বা না থাক রাজনীতি আছে। আর সে কারণেই চলছে ধারাবাহিক কোন্দলপর্ব।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার মূল দল আওয়ামী লীগ। বিদেশে আওয়ামী লীগের শাখা বা শক্তি মজবুত। আজকাল অধৈর্য আর মাত্রাহীনতা তাদেরও গ্রাস করছে। বিদেশে বা বিশ্বের দেশে দেশে প্রগতিশীল দেশপ্রেমী মানুষই দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখছে। এমনই কিছু তরুণ-তরুণী, যারা দেশ থেকে পড়াশোনা করার জন্য এদেশে এসেছে তাদের আবেগ আর চিন্তা আমাদের মুগ্ধ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় মেধা আর তারুণ্যকে লালন করেন। তাঁর চোখে যারা মেধাবী, তারাই এক সময় দল ও দেশের কাজে লেগে যায়। এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার সময়। যদি এই যাত্রা সংহত করা না যায়, তাহলে লাভের গুড় পিঁপড়া খাবে।
লাভের দিকটা ধরে রাখতে হলে দেশে-বিদেশে নির্বাচনের আগ নিজেদের সংযত ও সংহত করা আবশ্যক। যেসব তরুণ-তরুণীর কথা বলছিলাম তারা মেধার পাশাপাশি শ্রমেও বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। খাটুনি ছাড়াও এদের অন্তরে যে দেশপ্রেম তার তুলনা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে- তারা কি রাজনীতি বিমুখ? বলব হ্যাঁ। তাহলে প্রবাসে রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল করেন কারা? সেটাই নিশ্চয়-ই বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। মাঝ বয়সী বা বয়সী মানুষেরা রাজনীতি করবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু জায়গা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টাও মাথায় থাকা উচিত। সে কারণেই নবীন প্রজন্মের নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে।
তাহলে সরকারি দল ও ভিশনেরই লাভ। স্মার্ট বাংলাদেশ কোনো কথার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন তাই করে দেখান। এখন তিনি উন্নয়নের ধারায় যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার জন্য তারুণ্যের অংশগ্রহণ জরুরি। কারণ তারা আধুনিক উদ্যোগী ও মেধাবী। যে মেধায় ঝলসে উঠতে পারে দেশের মঙ্গল সাধন।
এটা সবাই জানি ভারতীয়রা এ কাজে কতটা পারদর্শী। তাদের উদাহরণ টানি এই কারণে যে, তারা সফল।
উপমহাদেশের ভারতীয় এবং সিংহলিজরা আমাদের উদাহরণ হতে পারে। অধুনা নেপালিরা এসেও চমক দেখাচ্ছে। রিটেল স্টোরগুলো থেকে সেবা খাতে নেপালিদের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। তাদের মূল শক্তি অবিতর্কিত দেশপ্রেম। অবিতর্কিত বললাম এই কারণে, নেপালিরা দেশের রাজনীতি বা রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে প্রবাসে মাথা ঘামায় না। অথচ ঠিকই দেশের রাজনীতি আমদানির কাজটি করে যাচ্ছে। কিভাবে? তারা সুনির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে সেখানে বসবাস করার পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তুলছে। এটা নিশ্চিত, একদিন এসব জায়গা থেকেই তারা অস্ট্রেলিয়ার সংসদে যাবে, মন্ত্রী-মিনিস্টার হবে। ভারতীয়রা সে কাজে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। আর আমরা কি করছি?
আগেই বলেছি আমাদের বিভাজন, বিশেষত পারস্পরিক কোন্দল আর ঈর্ষা প্রকট। বাঙালির মেধা বা ইচ্ছা শক্তি প্রবল হলেও এই কারণে আমরা এক পা এগোলে দুইপা পিছিয়ে পড়ি। অথচ এখনই সুবর্ণ সময়। দেশের অর্থনীতি কিছুটা নাজুক। আর যুদ্ধের কারণে করোনা পরবর্তী বাস্তবতায় জাতি অনেক বিষয়ে হতাশ। অথচ তাদের ভরসার জায়গাটা অনড়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, ততদিন সামনে এগোনোর পথ অবারিত। বঙ্গবন্ধু যেমন দুঃখ করে বলতেন, চাটার দল সব খেয়ে ফেলছে। আজও সে বাস্তবতা শেষ হয়নি।
এখন বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অভূতপূর্ব। এর বাইরে আছে দেশের প্রায় কোটি খানেক অ্যাম্বাসেডর। প্রতিটি বাংলাদেশী মূলত একেকজন দূত। আপনি বাইরে যত বিবাদ বা ভেদ দেখেন না কেন, দেশের প্রশ্নে সবাই একমত যে, আমরা এগোতে চাই। গণতন্ত্র সমঅধিকার হানাহানিবিহীন রাজনীতি চাওয়া বাংলাদেশীদের ভেতর যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আরও ঘনীভূত হতো, আমাদের ধারণা বাইরের জগতে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতাম। সবচেয়ে দুঃখজনক অসম্মান আর হিংসা প্রবণতা। এখনো বেশির ভাগ মানুষ এর বাইরে বলেই অগ্রযাত্রা বজায় আছে।
মেধা ও তারুণ্যÑএ দুয়ের ভেতর সম্পর্ক নিবিড় করার জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বিশ্বাস করি সিডনির নেতা নামে পরিচিতজনরা এক হলে তা সম্ভব। সবার আগে নিজেদের ভেতরকার সমস্যা নিরসন আর মতভেদ দূর করে সবাই মিলে চেষ্টা করলেই পথ খুলবে। একটা বড় আশার দিক হচ্ছে, নারী শক্তির এগিয়ে আসা। সিডনির বাংলাদেশী নারীদের জাগরণ ঘটেছে। দলে দলে নানা কাজে তাদের অংশগ্রহণ আর এগিয়ে আসায় নতুন গতি লাভ করেছে বাঙালি জনগোষ্ঠী। সংস্কৃতি থেকে রাজনীতি সব জায়গাতেই তাদের বিচরণ। তাদের ভেতর যে শক্তি আর সাহস, তা জ্বলে উঠতে পারলে বিরাট পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। সে প্রমাণ তারা নানাভাবেই দিয়ে চলেছে।
একক নারী শক্তি বিশাল মেলার আয়োজন করছে। দুই চারজন মিলে সংস্কৃতির দীপশিখা জ্বালিয়ে রেখেছে। কেউ কেউ এখন রাজনীতিতেও প্রবল হয়ে উঠছে। তাদের এই অংশগ্রহণ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের জন্য সত্যি গর্বের। আমরা ইতিহাসেই দেখি যে, নারী শক্তি বাংলাদেশে কি বিপ্লব বা পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সে দৃষ্টিকোণে আমরা একশ’ ভাগ আশাবাদী। অচিরেই এর ইতিবাচক ফল মিলবে হাতে হাতে।
বলছিলাম মেধার কথা। মেধা মূলত লালনের বিষয়। লালন পালন না করলে মেধা বিকশিত হতে পারে না। একসময় মনে হতো প্রবাসে বাংলা বাঙালি আর কতটা যেতে পারবে? এখন তা মনে করি না। বরং যা দেখছি তাতে এটা বলব আকাশ যদি সীমানা হয়, তাহলেও ছুঁতে পারে আমাদের নবীন প্রজন্ম। মেধা শ্রম আর শক্তির এই বাংলাদেশ যেন গণতন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের পাশে দাঁড়াতে পারে। এই কারণেই দেশপ্রেমিকদের শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করা আবশ্যক।