সম্পাদকীয়
রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় শত বছরের পুরনো ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করা হয় চলতি মাসের শুরুতে। পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় সে কর্মসূচি স্থগিত করা হয় প্রতিপক্ষ স্বার্থান্বেষীদের প্রতিরোধে। সময়ের ব্যবধানে অনেক পুকুর ও জলাশয় হারিয়ে গেছে রাজধানী থেকে। অনেকেই এগুলো নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভরাট করেছে। জলাভূমিগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের টিকে থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। নগরায়ণের চাপে একের পর এক জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ভরাট করা বেআইনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি-আধাসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর বা জলাধার ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন অমান্য করে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। বেআইনিভাবে দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। একইসঙ্গে চলছে বৃক্ষ নিধন। ফলে, রাজধানীতে বাড়ছে তাপমাত্রা।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) পরিচালিত ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন : বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় ২৮ বছরের ব্যবধানে জলাভূমি এসে ঠেকেছে মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশে এবং সবুজ এলাকা ৭ দশমিক ৯ শতাংশে। প্রায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকা শহরে ১৯৯৫ সালে জলাধার ও জলাভূমি ছিল নগরীর মোট আয়তনের ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ। সবুজ এলাকার পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
সে সময় ৪৩ দশমিক ৭২ শতাংশ এলাকা নির্মাণের আওতায় এসেছিল, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। নিয়ম না মেনে খেলার মাঠ দখল করে ক্লাব, বিপণিবিতান, হাটবাজারসহ নানা স্থাপনা এবং জলাভূমি ভরাট করে প্রতিনিয়ত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করায় গাছপালাসহ সবুজ ও জলাভূমি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। একটি আদর্শ শহরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি এবং ১৫ শতাংশ সবুজ থাকাটা প্রয়োজন। দুই দশকে জলাশয়ের ৭০ ভাগ উধাও। রাজধানী এখন কংক্রিটের রাজত্ব।
ঢাকায় প্রতি সাড়ে ১২ হাজার জনে দুই একর খেলার মাঠ ও এক একর পার্ক থাকার প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান জনসংখ্যা বিবেচনায় ৩৭ হাজার ৯০০ জনে এক একর মাঠ বা পার্ক রয়েছে। একটা শহরে জনপ্রতি গ্রিন স্পেস থাকা দরকার ৯ দশমিক ৩ মিটার। সেখানে দিল্লি ও করাচিতে আছে ৫ মিটার করে। আর ঢাকায় আছে মাত্র ৩। এমন অবস্থা চলতে থাকলে (রাজধানী) বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠবেÑ এটাই সবার প্রত্যাশা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুবিধাভোগী ও ক্ষমতাসীনদের পরিবেশ বিপন্ন করার মতো গর্হিত কাজকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না।