ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

 আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বাংলাদেশ

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

 আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বাংলাদেশ

.

জানুয়ারির ৩১ তারিখে ওয়াশিংটনস্থ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অনুকূলে . বিলিয়ন ডলার পরিমাণ কোমল ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। অনুমোদন অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি ঋণের ১ম কিস্তি ৪৪৭. মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের অনুকূলে অবমুক্ত করা হয়েছে। এই কিস্তি ১০ বছর প্রীতিকাল  (গ্রেস পিরিয়ড) সহ ২০ বছর ব্যাপ্তিতে পরিশোধনীয়। ঋণের বাকি অংশ ৪৫৯.১৮ মিলিয়ন ডলার করে কিস্তিতে অবমুক্ত করা হবে। অবমুক্ত সব ঋণাংশের ওপর বার্ষিক .% সুদ আরোপ করা হবে। ঋণের আরেক অংশ . বিলিয়ন ডলার ১০ বছরের প্রীতিকালসহ ২০ বছরে পরিশোধনীয়। ঋণের বাকি অংশ যথাক্রমে . এবং . বছরের প্রীতিকালসহ ১০ বছরে পরিশোধনীয়। পরিশোধন সীমার বিবেচনায় আইএমএফ প্রদত্ত প্রদানীয় এই ঋণ নিঃসন্দেহে কোমল। এর  আগে একমাত্র ভিয়েতনাম ছাড়া এত কম সুদ হারে এবং বেশিকালের জন্য আইএমএফ অন্য  কোনো দেশকে এই ধরনের ঋণ সহায়তা দেয়নি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা সংঘ হিসেবে শতাধিক সদস্য দেশের প্রতিনিধিত্বশীল সাংসদদের একটি বিশ্বসংসদীয় প্যানেল বিদ্যমান। এই সংসদীয় প্যানেলের পরিচালক পর্ষদে বাংলাদেশের সাংসদ হিসেবে আমিও একজন নির্বাচিত সদস্য। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের ভূমিকায় অন্যান্য উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশসমূহের প্রতিনিধিসহ কোভিড পরবর্তী সময়ে এই সব দেশে কোমল শর্তে সত্বর সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তাব যুক্তি উপস্থাপন করে এসেছি। বাংলাদেশকে প্রদত্ত উপরোক্ত কোমল ঋণ সহায়তা এই ক্ষেত্রে অনেকাংশে আমাদের সম্মিলিত প্রস্তাব সমর্থনের ফল বলে বলা যেতে পারে। ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পুনঃনির্মাণ উন্নয়নের জন্য যে আন্তর্জাতিক ব্যাংক (বিশ্বব্যাংক) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তার মধ্যে আইএমএফ সদস্য দেশসমূহের আপৎকালীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংরক্ষণ প্রসারণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এর বিপরীতে বিশ্বব্যাংকের কর্মপরিসর পরিব্যাপ্ত করা হয়েছিল উন্নয়নশীল আন্তঃদেশসমূহের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে অর্থায়ন পুনর্গঠন সহায়তার জন্য। যুগপ্রেক্ষিত প্রয়োজনের আলোকে এই সময়ে আইএমএফ অপেক্ষাকৃত মেয়াদি ঋণ সহায়তার মাধ্যমে বৈদেশিক দেনা পাওনার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল অনুন্নত দেশসমূহে ঋণ সহায়তা প্রসারিত করে এসেছে। কালক্রমে এই দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা যথাক্রমে ঋণ প্রত্যাশী দেশসমূহের কাঠামোগত পরিবর্তন উন্নয়নে বিস্তৃতিতর ভূমিকা রেখে এসেছে।

বাংলাদেশের অনুকূলে প্রদত্ত প্রতিশ্রুত উপরোক্ত ঋণ আইএমএফ থেকে দেওয়া অন্যান্য ঋণের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদানে প্রত্যাশী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রযোজিত করতে এগিয়ে এসেছে (দ্রষ্টব্য : রবার্ট ক্যাসেল সহযোগীরা, সাহায্য ফলপ্রসূ হয় কি? (অক্সফোর্ড) গত শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে আইএমএফ ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র মাঝারি অর্থ ব্যবস্থার দেশসমূহের ওপর স্বল্পমেয়াদী বিদেশী দেনা-পাওনার সমতার বাইরে মেয়াদি উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক অনুমোদিত আলোচনাধীন এই ঋণ আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রাপ্ত ১৩তম ঋণ। এই ঋণের আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ২০২৩ সালের এই পরিমাণ ঋণ অনুমোদন প্রমাণ করেছে যে, এই দেশের অর্থব্যবস্থা মজবুত ভিত্তির ওপর গ্রন্থিত এবং এই অর্থব্যবস্থার মৌল অবস্থান অন্যান্য দেশ থেকে উত্তম (দ্রষ্টব্য- দি ডেইলি স্টার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩) উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সময়ের বহুপাক্ষিক প্রয়োজনের বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে প্রদানীয় . বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা হিসেবে আগামী বছরে বাংলাদেশ অন্যান্য দিপাক্ষিক বহুপাক্ষিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে . বিলিয়ন ডলার বিশ্বব্যাংক থেকে, বিলিয়ন ডলার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে এবং .১২ বিলিয়ন ডলার জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) এবং এশিয়ান অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক  (বেইজিং) থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে বলে প্রত্যাশিত।

ঋণ চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক স্থিরীকৃত বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থব্যবস্থায় মূলত ২টি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমটি হলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষিত তহবিলের পরিমাণ সবসময় সন্তোষজনক ভাবে রক্ষা করা বা সমকালীন পর্যায়ে বস্তুনিষ্ঠু ভাব সংরক্ষণ করা। আর দ্বিতীয়টি হলো সরকারের বাজেটের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি কমানো। এর সঙ্গে ৭টি নীতি বা পরিবর্তনকে ২০২৪ থেকে ২৬ পর্যন্ত সরকারের ওপর আরোপিত শর্ত পালন বা পূরণ করার দায়িত্ব বা প্রতিশ্রুতি হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। এগুলো হলো- () পেট্রোলিয়াম বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি পরিহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য পরিবর্তনের সূত্র অনুসরণ, () জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেট বিক্রয়ের পরিমাণ হ্রাসকরণ, () সরকারের ৬০% লেনদেন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে সম্পন্নকরণ, () প্রকৃত সুদভিত্তিক মুদ্রানীতি অনুসরণ অর্থাৎ সুদ কাঠামোর বৈষম্যমূলক শ্রেণি বা ক্ষেত্র সহায়কী সুদহার বর্জন করণ, () রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহের প্রকৃত রাজস্ব ঝুঁকি প্রকাশকরণ, () ব্যাংক ব্যবস্থার বিপদসংকুল সম্পদাদির বিবরণ গোপন না করণ এবং () দেউলিয়াত্ব, ঋণ আমানত দর কষাকষির দলিলাদি বিষয়ক সমকালীন আইনসমূহের সংশোধন। অবশ্য পালনীয় প্রথম পদক্ষেপ অনুযায়ী দেশের আন্তর্জাতিক বা অবাধে রূপান্তরীয় মুদ্রার সংরক্ষণ বিষয়ক শর্ত, যা পূরণে ২০২৩ এর মার্চে ন্যূনপক্ষে ২২. বিলিয়ন ডলার, জুনে ২৪. বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৫. বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬. বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ সংশোধিত হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে।

এই হিসাবে নিট রিজার্ভের অংকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্র্তৃক বিদেশী মুদ্রায় সৃষ্ট বিভিন্ন তহবিল, বিমানের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ পরিশোধন নিশ্চয়তার অঙ্ক, শ্রীলংকার সঙ্গে বিদ্যমান মুদ্রা এয়াজবদল, পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষকে ডলারে প্রদত্ত ঋণাংক এবং বাজার মূল্যের নিচের মূল্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত ঋণাংক বাদ যাবে। বলা প্রয়োজন, বৈদেশিক দেনা-পাওনার সমকালীন হিসাবে আইএমএফের উন্নত সদস্য দেশসমূহ যে প্রণালী কিংবা অন্তর্ভুক্তি নিয়ে হিসাব করে, বাংলাদেশকে তা অনুসরণ করতে হবে। অবশ্য অর্জনীয় দ্বিতীয় লক্ষ্য হবে গণঋণকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদ (বা জিডিপি) ৪২% ভাগে বা তার নিচে রক্ষা করে সমকালীন বাজেট ঘাটতি কমাতে হবে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ২২-২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রস অভ্যন্তরীণ উৎপাদের .% অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে, ২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জাতীয় সঞ্চয়ে সার্টিফিকেটের নিট বিক্রয় সরকারের নিট অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন সীমার / অংশের এর নিচে নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে এবং পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহারের অনুকূলে প্রদত্ত ভর্তুকি কমাতে হবে।

এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে ২০২৩ এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ব্যাংক কোম্পানি আইন আর্থিক কোম্পানি আইন ২০২০ সময়ানুগভাবে সংশোধনের জন্য সংসদে প্রস্তাব পেশ করতে হবে। আইএমএফের বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসৃত ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের তত্ত্বাবধান অপর্যাপ্ত প্রয়োজন অনুগামী শিথিল নিয়ন্ত্রণ দুষ্ট। ফলত জনগণের সঞ্চয়ের ঈপ্সিত নিরাপত্তা বিধান করতে অপর্যাপ্ত। এই অর্থ বছরের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তার আনুষ্ঠানিক মুদ্রার সংরক্ষিত তহবিল আন্তর্জাতিক বাজার নির্ধারিত বিনিময় হার অনুযায়ী হিসাব করবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদের (জিডিপি) ত্রৈমাসিক হিসেব প্রকাশ করবে ডিসেম্বরের মধ্যে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক ব্যাংক ব্যবস্থার বিপদ সংকুল সম্পদাদির বিবরণ প্রকাশ এবং তা সংশোধন বা নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তিভিত্তিক তত্ত্বাবধানের সারথি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। এই মাত্রা প্রকৃতির গ্রহণযোগ্যতা আইএমএফের সাম্প্রতিক সংস্কার প্রত্যাশা অনুগামী (দ্রষ্টব্য- ব্রেটন উডসের পরবর্তী ৫০ বছরে আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের ভবিষ্যৎ, জেমস কুকইন সারওয়ার লতিফ, সম্পাদক, আইএমএফ বিশ্বব্যাংক গ্রুপ, ১৯৯৫)

আইএমএফ কর্তৃক ঋণ প্রদানে আরোপিত এসব শর্ত আইএমএফের প্রথাগত স্বল্পকালীন ঋণ সহায়তার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি কোমল ঋণ সহায়তার স্বাগতীয় বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোটা দাগে এই ঋণ গ্রহণীয়। এরূপ গ্রহণযোগ্যতার অনুকূলে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী তাদের সমর্থন জনসম্মুখে ব্যক্ত করেছেন। এতদসত্ত্বেও এসব শর্তাদির ২টি সম্পর্কে যুগপ্রেক্ষিতে যথাপ্রয়োজন সংশোধনের প্রস্তাব রাখা যায়। এক, দেশের সরকারের বাজেট ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে আইএমএফ জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেট মারফত গণঋণ আহরণের মাত্রা কমানোর যে শর্ত দিয়েছে, তা সার্বিক উন্নয়নার্থে বিনিয়োগের জন্য জাতীয় সঞ্চয় বাড়ানোর পরিপন্থি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহযোগী বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানাদি কর্তৃক জাতীয় সঞ্চয় বাড়ানো এবং উন্নয়ন মেয়াদি বিস্তৃত করার সর্বস্বীকৃত বিধানের বিপরীতে আইএমএফ অবস্থান নিয়েছে বলা চলে। জাতীয় রাজস্ব, কর করবহির্ভূত উভয় উৎস থেকে আহরণীয় মাত্রার ওপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সঞ্চয় বাড়ানো স্তিমিত করা উন্নয়ন নীতির বিপরীতমুখী পদক্ষেপ বলে বিবেচনীয়। এই বিষয়টি বাংলাদেশের তরফ থেকে জোর দিয়ে বলা নিঃসন্দেহে কর্মানুগ হতো। দুই, ডলারের আন্তর্জাতিক মূল্য বহুলাংশে স্থিরীকৃত পরিবর্তিত হয় উন্নত দেশসমূহের বাণিজ্যিক আর্থিক কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে।

এই সত্যের বিপরীতে কেবল বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত বাণিজ্যিকভাবে দুর্বল বা রপ্তানি বৃদ্ধিতে শ্লথ গতি বিশিষ্ট দেশকে তার বিনিময় হার কমিয়ে পুরো ক্ষয়ক্ষতি কাটানোর জন্য সেসব দেশের জনগণের স্বার্থের প্রতিকূলে তাদের রপ্তানি মূল্য কমিয়ে আমদানি মূল্য বাড়িয়ে পুরো দায়ভার চাপানো ফলপ্রসূ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজনকে অবজ্ঞা করে। এই যথার্থ চেতনাবোধ আইএমএফ বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণ চুক্তির এই ধরনের শর্ত আরোপনে দেখাতে সমর্থ হয়নি। তিন, ডলারের বাইরে ভারতীয় রুপী, চীনা ইউয়ান জাপানি ইয়েনকে ক্রমান্বয়ে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার বা অধিকতর ব্যবহারের পরিধি সৃষ্টি করা বা বাড়ানো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিনিময়ের প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল রপ্তানিকারী দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে কার্যকর বলে প্রতিভাত। এদিকে চুক্তিতে এই প্রক্রিয়ার পরিধি বাড়ানো জন্য কোনো নজর দেওয়া হয়নি। চার, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রসারণীয় বাণিজ্য, বিনিময় উন্নয়নের জন্য আইএমএফ কর্তৃক সংগত কারণেই তাদের ঋণ সহায়তামূলক কার্যাবলী বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমন্বিতকরণ যুক্তিসঙ্গত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের সাম্প্রতিক চুক্তি যতটুকু অগ্রসর হতে পারত, ততটুকু অগ্রসরমানতা দেখাতে পারেনি। ক্ষুদ্র শিল্প প্রসারণে, সামাজিক কল্যাণে, শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে আইএমএফ কর্তৃক আরোপিত শর্তাদি এই দেশের স্বার্থানুকূল হবে বলে নিশ্চিত করা মুশকিল। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে ক্ষেত্রে আইএমএফ কোনো প্রসারী পদক্ষেপ শর্ত হিসেবে নিরূপণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলা চলে। আইএমএফের সঙ্গে ঋণ সহায়তা চুক্তি পর্যালোচনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় এই তিন দিক থেকে বাংলাদেশকে অধিকতর সতর্ক যতœবান হতে হবে। আইএমএফের প্রধান কিস্টালিনা জিওরগিয়েভা তার সহযোগী গীতা গোপীনাথ  এবং বিশ্বব্যাংকের পদত্যাগী প্রধান ডেভিড মালপাসের উত্তরসূরি, প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রমিত জিলের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আগামী এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব সংসদীয় নেটওয়ার্ক থেকে আমরাও উন্নয়নশীল দেশসমূহের সংসদ সদস্য হিসেবে এই বিষয়ে আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আলোচনাধীন ঋণ চুক্তিটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সময়ে উল্লিখিত বিষয়গুলোর দিকে বাংলাদেশের তরফ থেকে যত্নশীল নজর দেওয়া এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মনোযোগ আকর্ষণ করা হবে কর্মানুগ।

লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী

 

×