সম্পাদকীয়
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আগামী বছরের জানুয়ারিতেই পাচ্ছে ইউনিক আইডি কার্ড বা অভিন্ন পরিচয়পত্র। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থী পাবে এই কার্ড। তবে সবার তথ্য এখনো না পাওয়ায় একসঙ্গে কার্ড দেওয়া সম্ভব হবে না। নির্বাচিত কিছু উপজেলার ছাত্রছাত্রী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই কার্ড হাতে পাবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য একস্থানে রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ইউনিক আইডি।
ইউনিক আইডি অনেকটা ভোটার আইডি কার্ডের মতো দেখতে হবে। ইউনিক আইডিতে ডিজিটালভাবে শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। আইডিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা একটি রোল নম্বর দেওয়া হবে। এই রোল নম্বরটি ছাত্রজীবনে প্রত্যেক ক্লাসে ব্যবহার করতে হবে এবং সবসময় একই থাকবে। এজন্য আইসিটি শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট অনেককে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
একজন শিক্ষার্থীর সব ধরনের সেবা, যেমন বই প্রাপ্তি থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, রেজিস্ট্রেশন, বৃত্তি, উপবৃত্তির অর্থসংগ্রহ অর্থাৎ যত ধরনের নাগরিক সেবা আছে সবই দেওয়া হবে এই আইডির মাধ্যমে। ১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সব ধরনের সেবা ইউনিক আইডির মাধ্যমে পাবে। যখন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন ইউনিক আইডিই রূপান্তর করা হবে জাতীয় পরিচয়পত্রে।
এই আইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোথায় লেখাপড়া করছে, ঝরে পড়ল কি না অথবা তারা কোন্ লেভেলে পড়াশোনা করছে, চাকরি পেল কি না ইত্যাদি তথ্য জানা যাবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউনিক আইডিতে ধর্মীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে অপশন ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য উল্লেখ করার পাশাপাশি ‘নট এ বিলিভার’ ও ‘রিফিউজ টু ডিসক্লোজ’ অপশন রাখা হয়েছে। এছাড়াও জেন্ডার সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইতোপূর্বে ‘লিঙ্গ’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও এবার ‘জেন্ডার’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। অপশন হিসেবে পুরুষ ও নারীর পাশাপাশি ‘অন্যান্য’ যুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাক্ষেত্রে এক অন্যান্য নজির সৃষ্টি করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডির কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানী থেকে গ্রামগঞ্জে পরিকল্পনাটি সফল করতে কাজ চলছে একযোগে। ইউনিক আইডি চালু হলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের অপচয়ও কম হবে। যেমন- অনেক সময় শতভাগ সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে বই ছাপানো হয়। এতে অনেক অর্থের অপচয় হয়।
ইউনিক আইডি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের হাতে থাকার ফলে বাড়তি বই ছাপানোয় টাকার অপচয় কমবে। ইউনিক আইডি চালুর ফলে বিলুপ্ত হবে প্রচলিত রোল নম্বর ব্যবস্থার। রোল নম্বরের কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা। ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হলে তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে- এমনটিই প্রত্যাশা। কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এর সুফল পাবেন। উপকৃত হবে দেশ, জাতি ও সমাজ।