বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছিল রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণের কাপড়েই। যে কাপড় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন, সেই কাপড় দিয়েই তাঁর কাফন কার্য হয়। সাদা জমিনের এ শাড়ি কাপড়ের লাল-কালো পাড় দুটি ছিঁড়ে তা কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জাতির পিতার লাশ হত্যার পর দিন ১৬ আগস্ট দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া নেয়া হয়। জানাজায় টুঙ্গিপাড়া, পাটগাতী ও পাঁচকাহনিয়া গ্রামের মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জন অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন। গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করতে চাইলেও দেওয়া হয়নি অনুমতি।
সোসাইটির নব নির্বাচিত সদস্যরা গত ৩ আগস্ট গণভবনে গেলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ও তার দাফনের প্রসঙ্গ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আবেগ আপ্লুত শেখ হাসিনা ওই সময় বলেন, ১৫ আগস্ট যারা মারা গেছেন- তাদের তো কাফন-দাফন কিছু হয়নি। কিন্তু আব্বার লাশটা যখন টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গেছে... আর্মি সোজা হেলিকপ্টারে করে সেখানে নিয়ে যায়। তারা কোনো মতে কবর খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েই চলে আসবে। কিন্তু তখন ওখানকার যে মাওলানা সাহেব এবং আমাদের কয়েকজন, তারা কিন্তু জোর করেছিলেন যে, না আমরা...। আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবসহ সবাই বলেন যে, আপনারা যদি মনে করেন, শহীদী মৃত্যু তাহলে ওইভাবেই দিতে পারেন। তবে মুসলমানের লাশ- এটা তো একটু কাফন-দাফন দিতে হবে।
সে সময় সব এলাকায় কারফিউ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব বন্ধ। টুঙ্গিপাড়ায় তখন কোনো দোকানও ছিল না। যেতে হতো সেই পাটগাতী বাজারে। তখন রেডক্রসের যে কাপড় তিনি (বঙ্গবন্ধু) সাধারণ মানুষদের বিলাতেন ওই কাপড় নিয়ে এসে তার পাড় ছিঁড়ে.. সেটাই কিন্তু তিনি নিয়ে (কবরে) গেছেন। আর কিছু নেননি মানুষের কাছ থেকে, আর কিছুই নেননি। সেই রেডক্রসের কাপড়েই ওনার কাফন... এটা হলো বাস্তবতা। আর আমাদের যারা (মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও তিন ভাইসহ অন্যরা) মারা গেছেন তাদের তো কিছুই করা হয়নি। যে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়েছে।
‘মানবতার কল্যাণের জন্য জাতির পিতা এ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর সেই রেডক্রসেরই এক টুকরো কাপড়কে কাফন বানিয়ে তাকে দাফন করা হয়েছিল।
জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা রেডক্রস স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সরকারের প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে। ১৯৮৮ সালে সরকার রেডক্রস সোসাইটির নাম ও প্রতীক পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করা হয় এবং প্রতীক রেডক্রসের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্ট (বাঁকা চাঁদ) হয়। মুসলিম দেশে এ সংগঠনটি রেডক্রিসেন্ট নামে পরিচিত।
এসআর