ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

শিক্ষায় সেশনজট!

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৯ অক্টোবর ২০২০

শিক্ষায় সেশনজট!

করোনার মহাদুর্বিপাকে সারাবিশ্ব পর্যুদস্ত-দিশেহারা। উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো অনিশ্চয়তার কঠিন আবর্তে। স্থবিরতার এমন দুঃসময়ে জনজীবনেও নেমে এসেছে অসহনীয় সঙ্কট। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মূল্যবান চাহিদাগুলো বিপন্নতার শিকারে। এমন চিত্র পৃথিবীজুড়ে এবং অতি আবশ্যিকভাবে বাংলাদেশেও। অবরুদ্ধতার নির্মম জালে আটকানো খাতগুলো কবে তার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে ফিরে যাবে সেটা অনুমান করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও চলমান জীবনপ্রবাহে থেমে থাকার কোন সুযোগই নেই। নিয়মের কঠিন আবর্তে যাপিতজীবন বহমান রাখা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। সচল জীবনের আবশ্যকীয় গতিপ্রবাহ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হলেও সবক্ষেত্রে তা অবারিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে অতি প্রাসঙ্গিকতায় বিবেচনায় আনা যেতে পারে এই মুহূর্তে দেশের মেরুদ- শিক্ষার অচলাবস্থার করুণ চিত্র। সেই ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে স্থবিরতার দুঃসহ কবলে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, এমনকি উচ্চ শিক্ষায়ও পড়ে করোনা দুর্ভোগের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। কয়েক কোটি শিক্ষার্থী, শিশু থেকে উদীয়মান তরুণ-তরুণী তাদের মূল্যবান সময় কাটাচ্ছে ঘরে বসে অবসরে, যা কখনও হওয়ার কথা নয়। শিক্ষা মানুষের নাগরিক ও মৌলিক অধিকার। তাকে সর্বজনীন করাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা। সেখানে শিক্ষা বছর পার হতে চললেও অনিবার্য স্থবিরতা দৃশ্যমান। তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে অনলাইনভিত্তিক পাঠদান পদ্ধতি বাংলাদেশে আগে চালু করা হয়নি। ফলে এই কার্যক্রম টিভি কিংবা বেতারের মাধ্যমে অথবা সামাজিক যোগাযোগের সহায়তায় হতে পারে তেমন অভিজ্ঞতা উন্নত দেশগুলোতে থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে মূলত পরিচয় ঘটে করোনার আপৎকালীন। সঙ্গত কারণে উপস্থিত বিপর্যয় ঠেকাতে যে তাৎক্ষণিক কার্যক্রম শুরু হয় তাতে বিপাকে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই। ফলে এই প্রযুক্তিগত শিক্ষাদান কর্মসূচী একেবারেই সর্বজনীন হতে পারেনি। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রমও এক প্রকার স্থগিতই বলা যেতে পারে। বাতিল হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষাও। আর উচ্চশিক্ষাও তেমন অবরুদ্ধতার জাল থেকে বের হতে ব্যর্থ হয়। প্রথম দিকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন কার্যক্রমে পাঠদান পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হলেও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তেমন কর্মযোগে দূরে থেকে অনেকটা সময় নষ্ট করেছে। ‘সেশনজট’ নামক এক অনাকাক্সিক্ষত দায়ভার সরকারী উচ্চশিক্ষা পাদপীঠগুলোর সহযোগী ছিল বলাই যায়। আপাতত সে সঙ্কট কাটিয়ে শিক্ষা কর্মসূচীকে নিরবচ্ছিন্ন ধারায় অবারিত করতে সক্ষম হলেও বর্তমানে করোনা মহামারী তার ওপর পুনরায় ছোবল বসানোর আশঙ্কা ঘনীভূত করছে। শুধুই কি ‘সেশনজট’! শৃঙ্খলিত শিক্ষাজীবনের নিয়মমাফিক কার্যক্রমের অনাহূত ব্যবচ্ছেদ পুরো ব্যবস্থাপনাকে বিকল করার উপক্রম। সেশন জটের কবল থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা খুঁজছেন সংশ্লিষ্ট প্রাজ্ঞজনেরা। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ বিস্তার আর উন্নয়নের নিরন্তর গতিপ্রবাহে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে গেলে সার্বিক কার্যক্রমের যে বেহাল দশা দৃশ্যমান হবে তা কোনভাবেই কাম্য নয়।
×