ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

মতামত

মতামত বিভাগের সব খবর

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা, বাংলাদেশ কি নিরাপদ? 

ভূস্বর্গ কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা, বাংলাদেশ কি নিরাপদ? 

সম্প্রতি ভারতের উগ্রপন্থীরা ভূস্বর্গক্ষেত কাশ্মীরে পেহেলগাম এ হামলা চালায়। সর্বশেষ আমার জানা মতে ২৬ জন ভারতীয় ও একজন ইতালির পর্যটককে জঙ্গিরা হত্যা করে। ভারতীয় কিছু সূত্র জানাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিনজন বাঙালি যুবকও রয়েছেন। মুসলিম বলেও নাকি নিস্তার মেলে নাই। এ নিয়ে ভারতীয় জনতা খুব উত্তেজিত, তারা দেরি না করে বদলা নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সফর দ্রুত শেষ করে শুক্রবার রাতে ফেরেন। রাষ্ট্রপতি তার সফর কাটসার্ট করে দেশে ফেরেন। ফিরেছেন অর্থমন্ত্রীও। ভারতের মানুষ চাচ্ছে প্রতিশোধ। কাকে আক্রমণ করতে হবে? এই হত্যাকারীদের যারা পাঠিয়েছে, অর্থাৎ তাদের দৃষ্টিতে পাকিস্তানকে তারা বুঝিয়েছেন।

হুমকিতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা

হুমকিতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা

উপমহাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তান বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগাঁর জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র  বৈসারণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় প্রায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। সবাই ভারতীয়। একজন নেপালি পর্যটক। সর্বশেষ, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের ৪১ জন সেনা নিহত হন। ওই হামলার পর পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় দুই দেশই পরস্পরের প্রতি অভিযোগের  তীর নিক্ষেপ করেছে। কাশ্মীরে যখনই কিছু হয় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। আবার বেলুচিস্তানে কিছু হলে পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করে। উভয় ক্ষেত্রেই তারা পাল্টাপাল্টি কিছু ব্যবস্থা নেয়। এখন কথা হচ্ছে, এই পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা কোথায় গড়াতে পারে? ভারতীয় জনগণের মধ্যে হাইপ সৃষ্টি হয়েছে, মিডিয়াও বড় আকারে হাইপ তুলেছে বলে ভারত সরকারকে কিছু একটা করতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘হামলাকারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। যারা এই নীলনক্সা সাজিয়েছিল, তাদের কল্পনাতীত পরিণতি ভোগ করতে হবে। সন্ত্রাসীদের যত সামান্য ভূমিকাই থাকুক না কেন, এখনই সময় এসেছে তা ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার। ১৪০ কোটি ভারতীয়র ইচ্ছাশক্তি এই সন্ত্রাসীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে।’ ভারত প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও রয়েছে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, হাইকমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে আনা এবং সব পাকিস্তানির ভিসা বাতিল করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকের দেওয়া সব সার্ক ভিসা বাতিল করেছে পাকিস্তান। এই ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। অবশ্য শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির। এ ছাড়া ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তাঁদের দেশটি ছাড়তে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মকর্তা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে ভারতের অনুরূপ সিদ্ধান্ত দিয়েছে পাকিস্তান। সিন্ধু পানি চুক্তি প্রসঙ্গে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পরিমাণ পানি পাবে তার প্রবাহ থামানো কিংবা অন্যদিকে নেওয়ার যেকোনো চেষ্টা হবে যুদ্ধের শামিল। পাকিস্তান বলেছে, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া একটি বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, এককভাবে এই চুক্তি স্থগিতের কোনো বিধান নেই। পানি পাকিস্তানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়, যা দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করে। যেকোনো মূল্যে এই পানি পাওয়ার বিষয়টি রক্ষা করা হবে।’ সিন্ধু  নদীর পানির প্রবাহ রক্ষায় পূর্ণ শক্তি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারতের পক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের পক্ষে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সিন্ধু পানি চুক্তিতে  স্বাক্ষর করেছিলেন। এ চুক্তির আওতায় সিন্ধু, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, ঝিলাম, ইরাবতী ও বিপাশা নদীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ করায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে ভারত। পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এক নোটিসে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশটির আকাশসীমা ভারতীয়-নিবন্ধিত বেসামরিক এবং সামরিক বিমানের জন্য বন্ধ থাকবে। এমনকি ভারতীয় সংস্থাগুলোর ভাড়া নেওয়া বিমানগুলোও পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতিদিন ১০০টির বেশি ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে। পাকিস্তানি আকাশসীমা বন্ধের ফলে ভারতীয় বিমানগুলোকে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হবে। ফলে, প্রতিদিন ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। পাকিস্তান ভারতের পদক্ষেপকে বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যায়িত করেছে এবং বলেছে, এর মাধ্যমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসমূহ আন্তর্জাতিক আইন ও বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের অধিকার প্রয়োগ করবে এবং তা শুধু সিমলা চুক্তি স্থগিতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইসলামাবাদ বলেছে, ভারত পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া ও আন্তঃসীমান্ত হত্যা বন্ধ না করা পর্যন্ত এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ মেনে না চলা পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় সব চুক্তি স্থগিত থাকবে। কাশ্মীরে হামলা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে মোদি সরকার। সন্ত্রাসীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সব দল। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে ভারত সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। কাশ্মীরে হামলার পর ভারত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে দেশটিতে নিযুক্ত ২০টি দেশের কূটনীতিকদের অবহিত করেছে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে উভয় পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি।  ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে দিল্লি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। এতে বলা হয়, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে পর্যটকের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে এই মন্তব্য করেছেন পিপিপি প্রধান। ভারতের অভিযোগ, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার মদদদাতা পাকিস্তান। যদিও বারবার দিল্লির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। এই নিকৃষ্ট হামলার নিন্দা জানিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের  প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দুই  দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। এর আগে সিন্ধুর পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দেন বিলাওয়াল। সুক্কুরে এক জনসমাবেশে তিনি বলেছেন, সিন্ধু আমাদের এবং আমাদেরই থাকবে। হয় এর ভিতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে, নয়তো ভারতীয়দের রক্ত। দুই দেশের রাজনীতিবিদরাই উত্তেজনাকর বক্তব্য দিচ্ছেন, যা কোনো দেশের ভবিষ্যতের জন্যই কল্যাণকর নয়। ভৌগোলিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের তিন দিকে ভারতের বিশাল সীমান্ত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে তার কী প্রভাব পড়বে? সতর্কতার জন্য বাংলাদেশের করণীয় কী- এমন হাজারো প্রশ্ন দেশের নাগরিকদের মাঝে। বাংলাদেশকে অবশ্যই সর্তক অবস্থানে থাকতে হবে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা পুরো অঞ্চলেই পড়বে। পাক-ভারত উত্তেজনার কারণে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরেকটু জটিল হলো। দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো ঘটনার প্রভাব প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপর পড়ে এবং নাগরিকদের মধ্যেও এর নানাবিধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ কঠিন বাস্তবতায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে কবি, দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিকার অর্থে দায়িত্বশীল না। এখানে ধর্মীয় জাতিবাদী গোষ্ঠীগুলোরও কোনো ভূরাজনৈতিক কম্প্রিহেনসিভ দৃষ্টিভঙ্গি নেই। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষে কাজ করতে কীভাবে কথা বলতে হয়, কোনো ভাষায় বলতে হয় এটা নিয়ে সত্যিকার অর্থে তারা সচেতন নয়। সব মিলিয়ে আমি চিন্তিত যে, কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে। আমাদের আরও অনেক বেশি বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, সহনশীলতা ও সংবেদনশীলতা দরকার।’ ‘সঠিক তথ্য যেহেতু এখনো পরিষ্কার নয়, আমরা যেন প্রোপাগান্ডায় বিভক্ত বা বিভ্রান্ত না হই। নিরীহ-নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করার মধ্যে কোনো গৌরব নেই। এটার মধ্যে ইসলামের কোনো গৌরব বা মহিমা নেই। এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছে এবং আমরা এর নিন্দা জানাই। সবমিলিয়ে জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা পড়েছি। আমাদের ঠান্ডা মাথায় সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

মানবতাবাদী ও সম্প্রীতির প্রবক্তা পোপ ফ্রান্সিস

মানবতাবাদী ও সম্প্রীতির প্রবক্তা পোপ ফ্রান্সিস

সদ্যপ্রয়াত বিশ্বের একশত বিশ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানের প্রধান ধর্মগুরু এবং ভাটিকান সিটি রাষ্ট্রের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত এক মহামানব। পোপ হিসেবে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী একজন নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি অতি সাধারণ জীবন যাপন করেছেন, বিলাসিতা থেকে দূরে থেকেছেন এবং অসামান্য বাণী রেখেছেন, কাজ করেছেন এবং অবিস্মরণীয় জীবন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে ক্যাথলিক মণ্ডলী (চার্চ) এবং ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে বের করে এনে উদার করে তুলতে নানামুখী সংস্কার চালু করেছেন। ধর্মীয় আইন ও নীতির বড় কোনো পরিবর্তন না করেও দয়া, ক্ষমা ও ভালোবাসার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি চার্চকে বিশ্বের একটি ‘ফিল্ড হাসপাতালে’ পরিণত করার কথা বলেছেন, যেখানে নানা প্রকার সংঘাতে আহত মানুষ সেবা পেতে ও সুস্থতা লাভ করতে পারবে। তিনি বলতেন, ‘ক্যাথলিক চার্চ হলো দরিদ্রদের দ্বারা এবং দরিদ্রদের জন্য।’ তিনি দরিদ্র, অবহেলিত, নির্যাতিত, শরণার্থী, অভিবাসী এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অসহায় মানুষের অধিকার রক্ষার সোচ্চার ছিলেন তিনি। ‘আমার জনগণ দরিদ্র এবং আমি তাদেরই একজন’- একথা তিনি বহুবার বলেছেন। ক্যাথলিক চার্চকে তিনি ‘ইউরোপকেন্দ্রিক চার্চ’ থেকে সরিয়ে এক ‘সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন’ চার্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাথে সাক্ষাৎকালে তাদের ‘ঈশ্বরের উপস্থিতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাকে নতুন করে বিশ্ব নজরে নিয়ে আসেন। খ্রিস্টধর্মের একজন গুরু হয়েও তার বারো বছরের পোপীয় শাসনামলে পোপ ফ্রান্সিস জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে সর্বজনপ্রিয়, মানবতাবাদী, উদার, সম্প্রীতির অগ্রদূত ও শান্তিকামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। বিগত ২১ এপ্রিল বার্ধক্যজনিত নানাবিধ জটিলতায় ভুগে ৮৮ বছর বয়সে এ মহাপুরুষ পরলোক গমন করেছেন। তাঁর এ মহাপ্রয়াণ গোটা বিশ্বকে শোকসাগরে ভাসিয়েছে। কারণ তিনি তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে বিশ্ব বিবেককে স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। পোপ ফ্রান্সিস তাই কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা শ্রেণির নন, বিশ্বের সকল মানুষের নেতা, আদর্শ এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। বিগত ২৬ এপ্রিল ভাটিকানের বিখ্যাত সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বিশ্বের প্রায় একশত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজা ও প্রতিনিধি, বিভিন্ন ধর্ম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাসহ আড়াই লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। একবিংশ শতাব্দীতে আর কোনো বিশ্ব নেতা বা ধর্মগুরুর প্রয়াণে মানুষের এত আবেগ ও শ্রদ্ধার বহির্প্রকাশ দেখা যায়নি। খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম হলেও অসাধারণ কর্মগুণে পোপ ফ্রান্সিস বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেসে এক ইতালীয় অভিবাসী পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা-মার দেওয়া নাম হোর্হে মারিও বেরগোগলিও। তাঁদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বেরগোগলিও সবার বড়। নিজ শহরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেষ করে তিনি রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ (কেমিক্যাল সায়েন্টিস্ট) হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কিছুদিন তিনি হাত খরচের জন্য নাইট ক্লাবের বাউন্সার হিসেবে কাজ করেন। সে সময় আর্জেন্টিনায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুরাবস্থা চলছিল। তিনি প্রায়ই রাস্তাঘাটে এবং বস্তিতে দরিদ্র মানুষের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতেন। সেই থেকে তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার কথা ভাবতে শুরু করেন। মূলত সেই ভাবনা থেকেই তিনি ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ধর্মসংঘ সোসাইটি অব জিসাস (যীশু সংঘ বা জেজুইট) -এ যোগদান করেন। জেজুইট সম্প্রদায় বিশ্বজুড়ে তাদের শিক্ষাসেবা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং সামাজিক কার্যক্রম তথা দরিদ্র ও নিপীড়িতের জন্য কাছের জন্য সুখ্যাত। প্রায় বারো বছর প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনা শেষ করে ১৩ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে যাজক পদে অভিষেক লাভ করেন। যাজক ও পালক হিসেবে বিভিন্ন ভূমিকা ছাড়াও তিনি ১৯৭৩-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় যীশু সংঘের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি বুয়েন্স এইরেসের সহকারী বিশপ এবং ১৯৯৮ সালে আর্চবিশপের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০১ সালে প্রয়াত পোপ ২য় জন পল তাঁকে সম্মানসূচক কার্ডিনাল পদে মনোনীত করেন। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তিনি ২৬৬তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন। পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের প্রথম পোপ, জেজুইট সম্প্রদায় থেকে প্রথম পোপ এবং ১,৩০০ বছরের মধ্যে ইউরোপ মহাদেশের বাইরে থেকে প্রথম পোপ। শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার প্রসারে পোপ ফ্রান্সিস বিশেষভাবে কাজ করেছেন। তিনি তাঁর পোপীয় শাসনামলে ৬৮টি দেশ সফর করেছেন এবং এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই হলো অন্য ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত, এমনকি ইরাক ও বাইরাইনের মতো দেশ যেখানে আগে কোনো পোপ পা রাখেননি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বৌদ্ধ অধ্যুষিত শ্রীলংকা, থাইল্যাণ্ড, জাপান, মঙ্গোলিয়া এবং মুসলিম অধ্যুষিত জর্দান, ফিলিস্তিন আলবেনিয়া, তুরস্ক, বসনিয়া, মিশর, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাইরাইন, আজারবাইজান, মরক্কো, কাজাখস্থান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। হিন্দু অধ্যুষিত ভারত সফরের ইচ্ছা ছিল প্রবল। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোর চাপে সে দেশের সরকার তাঁকে যথাসময়ে আমন্ত্রণ জানাতে পারেনি। ফলে তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। সকল দেশে এবং ভাটিকানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের আপনজনের মতো বুকে টেনে নিতে দেখা গেছে। তিনি পাশ্চাত্যে প্রবল ‘ইসলামবিদ্বেষী’ মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং একই সঙ্গে ধর্মের নামে সকল প্রকার বিদ্বেষ ও সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনসহ সকল প্রকার যুদ্ধ, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। পোপ ফ্রান্সিস হলেন সর্বাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভ্রমণ করা পোপ। তিনি তাঁর সফরে প্রধান প্রধান ধর্মের নেতা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভাইয়ের মতো আলিঙ্গন করেছেন। তিনি যেমন খ্রিস্টানদের চার্চ পরিদর্শন করেছেন, তেমনি বৌদ্ধ মন্দির ও মসজিদও পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মধ্যে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে মনে করতেন বিশ্ব শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে ধর্মের জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে তিনি আবুধাবি সফরকালে মিশরের বিখ্যাত আল-আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আবু তাইবের সাথে যৌথভাবে ‘ডকুমেন্ট অন হিউম্যান ফ্র্যাটার্নিটি ফর ওর্য়াল্ড পিস এ্যান্ড লিভিং টুগেদার’ স্বাক্ষর করেন। ‘আবুধাবি ঘোষনা’ নামে পরিচিত এ ডকুমেন্টটিকে বিশ্ব শান্তি স্থাপনে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার এক মহৎ ও উৎকৃষ্ট ইশতেহার হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২০ সালে তিনি ‘ফ্রাতেল্নি তুত্তি’ (Fratelli Tutti) বা ‘আমরা সকলে ভাই-বোন’ নামে যে প্রৈরিতিক পত্র লেখেন সেখানে আবুধাবি ঘোষণার অনেক কিছু স্থান পেয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, সেই ডকুমেন্টের ভিত্তি শুধু কূটনীতি নয়, বরং সংলাপ এবং পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি, যা সকলের জন্য ভালো, তা থেকে নির্গত হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের একজন চিরস্মরণীয় এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রকৃতির নিয়মে তিনি তাঁর মহৎ জীবনকে সাঙ্গ করে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর মহান জীবনাদর্শ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য পালনীয়। আর তা হতে পারে আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ব আরও বেশি সুন্দর, বাসযোগ্য এবং মানবিক করে তোলার চাবিকাঠি। লেখক : সাংবাদিক এশিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ইউসিএ নিউজ (UCA News)-এ বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত

দৈনন্দিন কাজে ড্রোনের ব্যবহার

দৈনন্দিন কাজে ড্রোনের ব্যবহার

যুদ্ধ ও সামরিক কাজের জন্য ড্রোনের প্রচলন শুরু হলেও বর্তমানে দৈনন্দিন অনেক কাজে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখযোগ্য হলো পণ্য ডেলিভারি, কৃষি কাজ, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। ফসলের বৃদ্ধির পর্যায়, ফসলের স্বাস্থ্য এবং মাটির বৈচিত্র্য সম্পর্কে চমৎকার তথ্য প্রদান করে এবং ফলন অপ্টিমাইজেশনে, ফসল উৎপাদন, সুনির্দিষ্ট ফসল পর্যবেক্ষণ, ম্যাপিংয়ে, সার ও কীটনাশক প্রয়োগে কৃষি ড্রোনগুলো বেশ সহায়ক। ডেলিভারি ড্রোন ব্যবহার করে দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে প্যাকেজ, খাবার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সরাসরি বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত ও চালকবিহীন উড়ন্ত যান ড্রোন ভবিষ্যতে আমাদের জীবনযাত্রায় আরও বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে। ঝুঁকিপূর্ণ অনেক কাজকর্মও অনায়াসে করে দিতে পারবে ড্রোন বা রোবটযান। বিভিন্ন শিল্পকারখানার উৎপাদন থেকে শুরু করে সেবামূলক কাজেও ড্রোন মানুষের সঙ্গী এখন। খনি ও রেল খাতের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ড্রোন ব্যবহারের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। পরিবেশ রক্ষা এবং অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কাজেও ভবিষ্যতে ড্রোন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ মানুষের ফরমায়েশ অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিসপত্র ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারটি বাস্তবে ঘটার জন্য অপেক্ষার দিন শেষ। সামরিক কর্মকাণ্ডের বাইরে ড্রোন ব্যবহারের বিভিন্ন খবর ২০১৪ সাল থেকে সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ড্রোনের ব্যবহার নিয়ে নানা সম্ভাবনার কথাও প্রচার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ড্রোন প্রযুক্তিতে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। ড্রোন ব্যবহারের সুযোগ দিতে ফ্রান্সে ২০১২ সালে ইতিবাচক আইন প্রণয়ন করেছে। আর সে কারণেই দেশটিতে ড্রোন প্রযুক্তির বিশেষ সমৃদ্ধি ঘটছে এবং রেডবার্ডের মতো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানও ড্রোন তৈরির কাজে যুক্ত হচ্ছে। এ খাতে বর্তমানে দেশটিতে প্রায় দশ হাজার লোক কাজ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে এখনো কিছুটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়ে গেছে। আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কোনো বাধা নয়। তবে আইনি সীমাবদ্ধতা আছে। ড্রোন ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে এখনো দেশটিতে অনেক গবেষণা ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশেও ড্রোন তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন একটি কোম্পানি ‘স্কাই বিজ’ এই ড্রোন তৈরি করবে। এর জন্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ‘স্কাই বিজ’ এবং বছরে প্রায় ৭ হাজার ৩১৪টি ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা আছে। এসব ড্রোন মূলত বিদেশে রপ্তানি করা হবে এবং প্রতি বছর ১৬৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ড্রোন রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে তাদের। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি অগ্নিনির্বাপণের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রোটারি উইং ইউএভি তৈরি করবে। একই সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং ও সার্ভিলেন্স উপযোগী ভার্টিক্যাল টেক-অফ ও ল্যান্ডিং ড্রোন বানানো হবে। তবে বেসামরিক কাজ যেমন কীটনাশক স্প্রে, অগ্নিনির্বাপণ, ডেলিভারি সার্ভিস এবং ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় ড্রোন ব্যবহার করা হবে। আরও খুশির খবর হচ্ছে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইতোমধ্যেই দেশের একদল তরুণ তৈরি করেছে ড্রোন, যা ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে ১০ কেজি খাবার সরবরাহ করতে পারে। এর উড্ডয়নকাল ১ ঘণ্টা এবং ভূমি থেকেই দুই কিলোমিটার ওপর দিয়ে সে যাতায়াত করতে পারে। এর মানে হচ্ছে ঢাকা থেকে পার্শ্ববর্তী শহর যেমন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীতে এই ড্রোন দিয়ে ফুড ডেলিভারি করতে পারবে অনায়াসে। সম্প্রতি ঢাকার একটি রেস্টুরেন্ট এই সার্ভিস চালু করেছে। এর আগে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথম ড্রোন তৈরি করে। সম্প্রতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (সিইউবি) শিক্ষার্থী তৈরি করেন ‘ওয়াটার ড্রোন’, যা ২ কিলোমিটার পরিসীমা পর্যন্ত ৭ কেজি ভার বহন করতে সক্ষম। কুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের মধ্যে কোথায় গোলযোগ হচ্ছে কিংবা দুর্যোগকবলিত দুর্গম অঞ্চলের সচিত্র তথ্য দ্রুততম সময়ে পেতে উদ্ভাবন করেছে মনুষ্যবিহীন স্বয়ংক্রিয় উড়ন্ত যান ‘অটোনোমাস ড্রোন’। ফলে এ ড্রোন সীমান্তের চোরাচালান নজরদারিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি দুর্গম অঞ্চলে জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে সহায়ক হতে পারে। কখন কোথায় যেতে হবে তা গুগল ম্যাপের সহায়তায় নির্দিষ্ট করে দিলেই ড্রোনটি সুনির্দিষ্ট পথ পরিভ্রমণ করে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসে। এ ড্রোন দিয়ে জরুরি পণ্য পরিবহনও সম্ভব। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যও আগাম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারবে। এদিকে চীনা ড্রোন বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এবারের বাংলা নববর্ষে সংসদ ভবন চত্বরে এক ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো’র আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম দ্রুত গতিতে রূপান্তর হচ্ছে যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী পরিবহন পদ্ধতিতে আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা প্রদর্শন করে। উচ্চগতি এবং কম ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবহার এবং পরিবেশগত সুবিধা তৈরি করে ড্রোনগুলো প্রচলিত সরবরাহ ব্যবস্থার একটি শক্তিশালী প্রতিস্থাপন হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি ‘টিওয়াইআই ডেলিভারি ড্রোন’ প্যাকেজ পাঠানোর জন্য খুবই দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য করে ডিজাইন করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে এবং সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এতে আধুনিক নেভিগেশন ও অটোমেশন পদ্ধতি ব্যবহার  করা হয়েছে। টিওয়াইআই ডেলিভারি ড্রোনটি বড় বহন ক্ষমতা পরিচালনা করতে সক্ষম, যা গ্রামীণ  এবং শহর উভয়ের জন্যই উপযুক্ত। ড্রোন পরিচালনার প্রধান সুবিধা হলো এর গতিভিত্তিক যোগাযোগহীন ডেলিভারি পরিষেবা, যা বিশেষ করে দুর্গম এবং জরুরি অঞ্চলে ভালোভাবে কাজ করে। কোভিড-১৯ মহামারী ড্রোন ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়েছে, যার ফলে বাজারসদাই এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি ওষুধ পাঠানোর জন্য ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ড্রোন ডেলিভারি বাজার উচ্চ গতিতে প্রসারিত হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে  যে ড্রোন এক সময় শুধু যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে ব্যবহার হতো, তা এখন পদাতিক এবং আর্টিলারির পাশাপাশি দুই পক্ষের (রাশিয়া ও ইউক্রেন) জন্য একটি কেন্দ্রীয় উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) জোটের পূর্ব সীমান্তে ‘ড্রোন ওয়াল’ নামে পরিচিত একটি অত্যাধুনিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে, যার আওতায় নরওয়ে থেকে পোল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে মোতায়েন করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত হাজারো ড্রোন। মূলত রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন মোকাবিলা এবং জোটভুক্ত দেশগুলোর নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য। যাহোক, ড্রোনের ব্যবহার বেশ সম্ভাবনাময় হলেও তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। ফ্রান্সের একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর দিয়ে সম্প্রতি একাধিক ড্রোন উড়ে যায়। আর ড্রোনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যাত্রীবাহী দুটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এতে ড্রোন নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাপকহারে ড্রোন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। ড্রোনের অবাধ ব্যবহারের কারণে মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকির যে আশঙ্কা রয়েছে সে ব্যাপারেও সচেতনতা জরুরি। তবে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিশ্বব্যাপী ডেলিভারি কার্যক্রমে ড্রোন ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এটাই সত্য। আমাজন, গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজে ড্রোনকে কার্যকর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করার চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে এসব আধুনিকতায় মানুষের জীবনযাপন সহজ হলেও দিন দিন মানুষ যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে, যা মানব কল্যাণের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়।

৭০ ভিআইপি পাচারকারী

৭০ ভিআইপি পাচারকারী

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৭০ ভিআইপিকে চিহ্নিত করেছে, যারা দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে বিনিয়োগ করেছে দুবাইতে। সংস্থাটি পাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চেয়েছে। উল্লেখ্য, দুদক তার অনুসন্ধানের প্রয়োজনে যে কোনো নথিপত্র তলব করতে পারে এবং দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। পাচারকারীরা এ বিপুল সম্পত্তি কিনেছে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাচার করে। গোল্ডেন ভিসায় সম্পদ গড়েছেন ৪৫৯ বাংলাদেশী। বিগত আওয়ামী শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বছরে গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি- সে হিসেবে মোট ২৮ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির কাছ থেকে এহেন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, আর্থিক খাতের অসাধু রাঘববোয়াল ব্যবসায়ী, আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এ পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। দেশের সম্পদ পাচার চক্রে জড়িত বৃহৎ দশটি ব্যবসায়ী গ্রুপও জড়িত। এসব গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের অধীনে যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যকে নির্মোহ চিত্তে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সামনে আগাতে হবে। উপসাগরীয় দেশগুলোয় পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পদ কেনার বিষয়টির তথ্য তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ। ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য লুকিয়ে ৪৫৯ জন বাংলাদেশী ৩১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে দুবাইয়ে মোট ৯৭২টি আবাসন সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব সম্পদের মধ্যে ৬৪টি অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনায় এবং ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। যেখানে ১০০টি ভিলা এবং কমপক্ষে ৫টি ভবনের মালিক বাংলাদেশী। চার থেকে পাঁচজন বাংলাদেশী প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। অবশ্য প্রতিবেদনে কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বিগত দেড় দশকের বেশি সময়ে দেশের সম্পদের একটি বিশাল অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। দেশের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ চলে যাওয়াকে বলে পুঁজি পাচার। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশ থেকে পুঁজি পাচার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থপাচার ঠেকাতে ৭টি সংস্থা- সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আমরা আশা করব, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।

অতিষ্ঠ জনজীবন

অতিষ্ঠ জনজীবন

চৈত্র মাস থেকে সারা দেশে বইতে শুরু করেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আবহওয়াবিদরা বলছেন, এবারেও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যে নতুন বছরের বৈশাখের মাঝামাঝি অতিবাহিত হলেও চৈত্র-বৈশাখের চিরাচরিত ঐতিহ্য কালবৈশাখী, বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাতের দেখা নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বজ্রঝড় ও বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া গেলেও তা যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত নয়। আমের গুটি, কাঁঠালের মুচি, লিচুর কুঁড়ি শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে খরায়। কৃষক ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় বোরো ধান আগাম কেটে নিলেও সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ গরমে ও আর্দ্রতায়। ফলে স্বভাবতই বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। তবে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত গ্যাস, কয়লা, জ্বালানি সংকটসহ দফায় দফায় এলএনজি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেড়েছে লোডশেডিং। তবে আশা ও আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা। শনিবার মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে লোডশেডিং এবারও কমানো যাবে না। তবে সীমিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। চলতি গ্রীষ্মে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর জন্য আমদানি করা হচ্ছে অতিরিক্ত এলএনজি। কিছু প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়েছে ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামও কম। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়বে না। সে অবস্থায় লোডশেডিং থাকবে সহনীয় মাত্রায়। একদিকে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে দফায় দফায় যখন তখন লোডশেডিং প্রতিনিয়ত অতিষ্ঠ ও অসুস্থ করে তুলছে জনজীবনকে। খুব শীঘ্রই বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আশু বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও নেই। তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। গ্রামগঞ্জের দুরবস্থাও সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে মধ্যরাতেও উপদ্রব বেড়ে যায় লোডশেডিংয়ের। কেননা, তখন বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অথচ উৎপাদন কম হয়। বর্তমানে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে আরও অন্তত কিছু দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। জনগণকে বলা হয়েছে ধৈর্য ধারণের। প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য যথাযথ প্রস্তুতির অভাব এবং অদক্ষতার দায় দেশের জনসাধারণকে বহন করতে হবে কেন? অভ্যন্তরীণ মজুত থেকেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনুরূপ হয়েছে কয়লার ক্ষেত্রেও। এমতাবস্থায় পরিবেশবিদরা যাই বলুক না কেন, দিনাজপুরের দীঘিপাড়া খনি থেকে অবিলম্বে কয়লা উত্তোলন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এর জরুরি ব্যবহার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা। কেননা ইতোমধ্যে ব্যাহত হয়েছে কলকারখানার উৎপাদনও। বারবার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় যন্ত্রপাতিসহ রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিও। এলএনজিসহ জ্বালানি আমদানিতে প্রয়োজন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যাপ্ত ডলার না দেওয়ায় গ্যাস-কয়লা-এলএনজিসহ অন্যবিধ জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না নিয়মিত। সে অবস্থায় বিদ্যুৎ সমস্যায় আশু সমাধানে দেশীয় কয়লাখনির মজুত ব্যবহার এবং গ্যাসকূপ খননের বিকল্প নেই।

দেশের উন্নয়নে মেধাসম্পদের গুরুত্ব

দেশের উন্নয়নে মেধাসম্পদের গুরুত্ব

মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি সভ্যতার অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। জন্মগত প্রতিভা যখন সচেতন চর্চা ও প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তরিত হয়, তখন তা মেধাসম্পদ নামে পরিচিত। যেমন- কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ তার কাব্যপ্রতিভার একটি অমর সৃষ্টি, যা মেধাসম্পদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সম্পদ ব্যক্তির সৃজনশীলতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, যা হস্তান্তরযোগ্য নয়। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ বা একজন তরুণ সঙ্গীতশিল্পীর নতুন গান- এসবই মেধাসম্পদের উদাহরণ। এই সম্পদ কপিরাইট, পেটেন্ট এবং ট্রেডমার্কের মতো আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, যা স্রষ্টাকে তাঁর সৃষ্টির ওপর নৈতিক ও আর্থিক অধিকার প্রদান করে। মেধাসম্পদ শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মেধাসম্পদের সুরক্ষা ও প্রচার জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই পথে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা মোকাবিলা করে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো সম্ভব। মেধাসম্পদ হলো মানুষের মনন থেকে উদ্ভূত সেই সম্পদ, যা সাহিত্য, সঙ্গীত, প্রযুক্তি, শিল্প নকশা বা ট্রেডমার্কের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এটি কোনো সাধারণ সম্পত্তি নয়, কারণ এর উৎস ব্যক্তির সৃজনশীলতা। বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থা (ডওচঙ) এই অধিকারগুলোকে বিশ্বব্যাপী প্রচার ও সুরক্ষার জন্য কাজ করে। ২০২৫ সালের বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আইপি এবং সঙ্গীত: মেধাসম্পদের তাল অনুভব করুন’ সঙ্গীতের সৃজনশীলতার সঙ্গে মেধাসম্পদের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরে। এটি বোঝায় যে সঙ্গীতের প্রতিটি সুর, গানের কথা বা রচনা একটি মেধাসম্পদ, যা কপিরাইটের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা উচিত। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সঙ্গীত ঐতিহ্য- রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, লোকসঙ্গীত বা আধুনিক পপ- এই প্রতিপাদ্যের আলোকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল

সড়ক দুর্ঘটনা দেশের এক নিত্যনৈমিত্তিক নিদারুণ যন্ত্রণা। কত মানুষের জীবন বিপন্ন হয় তাও নিতান্ত দুর্বিষহ বাতাবরণ। শুধু একজন ব্যক্তির জীবনহানিই নয়, বরং পুরো পরিবারের ওপর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দুরবস্থা। বিপর্যস্ত পরিবার পড়ে যায় চিরস্থায়ী দুর্ভোগ, দুর্যোগের কঠিন যাত্রাপথে। যার হিসাব মেলানো আর এক রুদ্ধতার বেষ্টনী। তবুও থামানো যাচ্ছে না এমন নৃশংস লোমহর্ষক অঘটন। পরিবেশ পরিস্থিতিও নির্মম পেষণ বলাই যায়। নিয়মিত পথ দুর্ঘটনার তথ্য-উপাত্তে উঠে আসছে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার অপদৃশ্য। আমরা ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের ক্রান্তিকালীন সময় অতিক্রম করছি। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী মার্চ মাসেই ৫৯৩ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৬১২ জনের। নিত্য নতুন অবকাঠামোর সুরম্য লীলা নিকেতনে দেশটি এখন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের যাত্রা পথ পাড়ি দিচ্ছে। পাশে থাকছে হরেক বিপরীত স্রোতের জ্বালাময়ী আখ্যান। গোটা মার্চ মাসের পথ দুর্ঘটনায় আহত ১২৪৬ জনের অনেকেই কর্মক্ষমতা হারানো ছাড়া বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে দুর্বিষহ কাল অতিক্রম করা অস্বস্তিকর। সার্বিক দেশের জন্যও কোনো মঙ্গলবার্তা বয়ে আনে না। সড়ক দুর্ঘটনায় এগিয়ে থাকে ছোট্ট যন্ত্রযান মোটরবাইক। সড়কের যাত্রী কিংবা পথচারীরা জানেন কিভাবে এই ছোট্ট যানটি কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে। আর দুর্ঘটনায় চিহ্নিত জায়গাটি হলো রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক পথে। আর নদী-নালা-খাল এই নিয়ে বরিশালÑ সেখানে হয়েছে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা। কারণ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বরিশালে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমই হলো লঞ্চ কিংবা স্টিমার। নদী কিংবা সমুদ্রপথের যাত্রা নিরাপদই শুধু নয় তার চেয়ে বেশি আরামদায়ক স্বস্তিকর। সমুদ্র ও নদী পরিবেষ্টিত আবহমান বাংলার চিরস্থায়ী যাত্রী পারাপারের অভাবনীয় মাধ্যম স্টিমার এবং লঞ্চ। যেখানে কোনো পথের ক্লান্তি নেই। যানজটের আশঙ্কা থাকেই না। আহারেও থাকে এক স্বস্তিকর পরিবেশ। তবে উন্নয়ন অবকাঠামোর ক্রমাগত বিস্তারে এমন নদি সমুদ্র বিহার আগের মতো আর নেই। সময় স্বল্পতায় দূর-দূরান্তের বাস, ট্রেন কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি বহরে দেশের এক স্থান থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত কিংবা ভ্রমণ সত্যিই দেশের কর্মচাঞ্চল্যের আর এক যাত্রায় শামিল হচ্ছেন সিংহভাগ মানুষ। তার ওপর বহুমুখী পদ্মা আর যমুনা সেতুর আধুনিক মাত্রার যে নব সংযোজন তাও যাত্রাপথের নবতর সৃষ্টি বলাই যায়। সেখানে আবার অন্য মাত্রার বিপত্তি। নদীর নাব্যতা আর পানি কমে যাওয়াও নাকি হরেক অব্যবস্থাপনার শিকার। নদী ভরাট করে বিভিন্ন বহুতল ভবন কিংবা কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। নদীমাতৃক আবহমান বাংলার ভিন্নমাত্রার কর্মযোগই বটে। তবে পথ দুর্ঘটনায় ব্যক্তি আর পরিবারের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসা সেটা কোনো সহনীয় বিষয় নয়। যে মানুষটি চলে যান তার স্মৃতিকাতরতায় পুরো পরিবারকে যে মাত্রায় বিপন্ন্নতার শিকার হতে হয় তাও বিষণ্নতার দগ্ধ পরিবেশ। গণমাধ্যমের খবরে দৃশ্যমান হয় রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যদি এমন অসহনীয় দুর্বিপাকের সম্মুখ সমরে পরে যায় তা হলে পথেই মৃত্যু ঠেকানোই মুশকিল। কারণ হিসেবে কত অব্যবস্থাপনা সামনে চলে আসে। সবার আগে দৃশ্যমান হয় সড়ক পরিবহন আইনকে তোয়াক্কা না করা। ট্রাফিক সিগন্যালকে মান্যতা না দেওয়া। তার ওপর আছে সামনের গাড়িকে টেক্কা দিয়ে আগে চলে যাওয়া। সড়কে কত কিলোতে গাড়ি চালাতে হবে তাও নির্ধারণ করা আছে নির্দিষ্ট আইনি বিধানে। বিভিন্নভাবে দায় ভাগ গিয়ে পড়ে অদক্ষ চালক ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থাপনার চরম গাফিলতি। হরেক কোম্পানির বৃহৎ যন্ত্রযানগুলো চালক, গতি নিয়ন্ত্রণ এবং সংশ্লিষ্ট আইনি নিয়ম রক্ষায় সুশৃঙ্খলভাবে কোনো কিছুই পরিস্থিতির আয়ত্বে থাকে না বলে তথ্য-উপাত্তে বারবারই নির্দেশিত হয়েছে। আবার সড়ক মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার হরেক দৃষ্টিকটু আলামতও সময়-অসময়ে প্রকাশ পাচ্ছে। ট্রাফিক আইন শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়-দায়িত্ব নয়। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন থাকবে চালকের দক্ষতা, আইনানুগ বিধি অনুসরণ করা এবং নিজের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আয়ত্বে আনা। সব দুর্ঘটনা কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা চালকের অদক্ষতা নয় বরং সংশ্লিষ্ট সড়কটির চারপাশও দুর্ঘটনাকে উসকে দেয় বলে বিভিন্নভাবে উঠে আসে। বিশেষ করে পথচারী পারাপারে। যার জন্য নির্দিষ্ট সঙ্কেতপূর্ণ জায়গা নির্ধারিত করা থাকে। যেখানে অনেক দায়বদ্ধতা থাকে পথচারীর ওপর। ফলে দুর্ঘটনার আলামত বিচার-বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয় পথচারীরা নিজেরাও জানে না সড়ক পরিবহন আইনের মূল নিয়মটি কি? অজ্ঞতা, উদাসীনতা, রাস্তা পারাপারে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হওয়া ও দুর্ঘটনাকে বিভিন্ন সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। সত্যিই অন্য এক অসহনীয় দুর্বিপাক। সচেতন সাবধানতাও বিশেষ জরুরি। অসতর্ক মুহূর্তে কত অরাজক ব্যবস্থাপনা মানুষের জীবনহানির কারণ হতে পারে তেমন ঘটনাও পরিস্থিতিকে সম্মুখ সমরে নিয়ে যায়। পথচারী যদি তার পাশের সেতুটি ব্যবহার না করে সময় বাঁচানোর জন্য সড়ককে বেছে নেয় সেটাও কোনোভাবেই গ্রহণীয় হয় না। সময়ের চাইতে জীবনের দাম অনেক বেশি। বারবার সতর্ক বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কমাতে শুধুমাত্র সড়ক পরিবহন আইনই যথেষ্ট নয়, আরও বিভিন্ন কার্যক্রমও ভাবনার মধ্যে জাগিয়ে রাখা নিতান্ত জরুরি। বলা হচ্ছে, দক্ষ প্রশিক্ষণ ও সনদপ্রাপ্ত চালকদের দিয়েই ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যান বাহন চালানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে। পথচারী যদি অসাবধান হন তা হলে সবার আগে নিজের জীবনটাই শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমরা যারা নিয়মিত রাস্তাঘাটে চলাচল করি দেখা যায় বিভিন্ন লাল-সবুজ সংকেতবাতি সেভাবে জ্বলে না। এর উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সংকেত চিহ্ন হয়তো বা অব্যবস্থাপনার শিকার। নতুবা লাল-সবুজ আলোটি জ্বালানোর অনুপযোগী কি না তাও খতিয়ে দেখা পরিস্থিতির ন্যায্যতা। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় সেখানে ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট নজরদারি অব্যাহত রাখাও দুঃসহ পরিস্থিতিকে কিছুটা হলেও সামলানো। সবচেয়ে প্রয়োজন যা তা হলো দক্ষ চালক সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইনটির যথাযথ প্রয়োগ। আর পথচারী সেতু ব্যবহার আর এক অবশ্য পালনীয় বিষয়। তবে সচেতন সাবধানতার বিকল্প অন্য কিছু নয়। দক্ষ চালক বিশেষ করে নৈশ কোচের হঠাৎ করে ঝিমুনির আবর্তে অসচেতন হয়ে গেলে পরিস্থিতি সামলানো বিপত্তির কবলে পড়ে যায়। কারণ যে কোনো যন্ত্রযানের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকে চালকের। ক্ষুদ্র কিংবা বৃহদাকার যাই হোক না কেন। আবার ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়াও পরিবহন আইনের আওতায় পড়েই না।

কমছে বাজেটের আকার বাড়ছে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

কমছে বাজেটের আকার বাড়ছে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের এ আকার চূড়ান্ত হলে স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বাজেটের আকার কমবে। এতদিন পর্যন্ত জুনের প্রথম বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার রেওয়াজ থাকলেও এবার ২ জুন সোমবার বাজেট ঘোষণা করা হবে। সংসদ কার্যকর না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তবে রেওয়াজ অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরদিন বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। রাজস্ব আহরণে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান কমে যাওয়ার কারণে আগামী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর আকার কমছে। এবার এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সূত্র মতে, বিগত সরকারের সময় নেওয়া বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া, বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামী অর্থবছর প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমবে। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এডিপির আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাড়ানো হচ্ছে বরাদ্দ। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এদিকে বাজেট ও এডিপি’র আকার কমলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এটি কমিয়ে সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্যের মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে অর্থবিভাগ।  বিগত ১৬ এপ্রিল অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত বাজেট পরিপত্র-২-এ সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাক্কলন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন তা মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কক অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলানযোগ্য হয়। অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রি-পক্ষীয় সভায় আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, ওই ব্যয়সীমাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং এ বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। এছাড়া সাধারণভাবে বাজেটে কোনো প্রকার থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না। পরিপত্রে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে চারটি নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ প্রথমত, মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যাতে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোতে বর্ণিত কৌশলগত উদ্দেশ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ‘রি-স্ট্রাটেজিসিং দ্য ইকোনমি অ্যান্ড মবিলাইজিং রিসোর্সেস ফর ইক্যুয়িটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক টাস্কফোর্স রিপোর্ট এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের নিজস্ব নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা এবং মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে সক্ষম হয়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারের মৌলিক নীতি নির্ধারণী দলিলগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দারিদ্র নিরসন, নারী ও শিশু উন্নয়ন, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় সহায়ক কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়াতে সক্ষম হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং নারী ও শিশু উন্নয়নে প্রদেয় সেবার মান ও পরিমাণ বাড়ে। তৃতীয়ত, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় বাড়ার সামঞ্জস্য রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়। চতুর্থত, মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের কৌশলগত ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। পরিপত্রে বলা হয়েছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) প্রাক্কলন/প্রক্ষেপন প্রণয়নে ত্রিপক্ষীয় সভায় নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রকল্পওয়ারি বরাদ্দ পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুনর্নির্ধারণ করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত মোট এডিপি ব্যয়সীমা কোনোভাবেই অতিক্রম করা যাবে না। প্রদত্ত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য (ডিপিএ/আরপিএ), নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি বাবদ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প সাহায্য, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি ব্যয় বিবেচনা করে প্রকল্পের প্রাক্কলন/প্রক্ষেপণ তৈরি করতে হবে। এ বাবদ ব্যয়সীমার অতিরিক্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে না। এছাড়া অননুমোদিত কোনো প্রকল্প বা স্কিমের জন্য কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না। অন্যদিকে অনুমোদিত সকল প্রকল্পের জন্য প্রক্ষেপণে বরাদ্দ রাখতে হবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিপি-তে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাব পরীক্ষা করে প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা নেবে পরিকল্পনা কমিশন। উন্নয়ন ব্যয়ের বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের যে প্রাক্কলন/প্রক্ষেপণ তৈরি করা হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রকল্প ঋণ/অনুদান ও পুনর্ভরণযোগ্য প্রকল্প ঋণ/অনুদানের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি অনুদানে পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বরাদ্দ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চলতি অর্থবছরের নিজস্ব আয় ও আয়ের উৎসসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রিপক্ষীয় সভায় সম্মত প্রাক্কলিত ও প্রক্ষেপিত আয় সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে দেখাতে হবে। নিজস্ব আয়ের অর্থ বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য ব্যয়সীমা/সরকারি অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করে এর ভিত্তিতে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়ন করতে হবে।

গুরুত্ব দেওয়া হোক সবুজ অর্থায়নে

গুরুত্ব দেওয়া হোক সবুজ অর্থায়নে

সবুজ অর্থায়ন হলো এমন একটি ঋণ বা বিনিয়োগ যা পরিবেশবান্ধব কার্যকলাপকে সমর্থন করে। যেমন- পরিবেশবান্ধব পণ্য ও পরিষেবা কেনা বা পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা। পরিবেশবান্ধব হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জীবনধারা এবং ব্যবসায়িক পরিবর্তন করা ব্যয়বহুল হতে পারে। তাই সবুজ অর্থায়নে প্রায়ই এমন প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহনে স্যুইচ করার খরচ কমিয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই এটি মানুষ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশ- উভয়ের জন্য ভালো ক্রয় এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। সবুজ অর্থায়ন সত্যিকার অর্থে মূলধারায় সম্পূর্ণভাবে এবং কার্যকরভাবে প্রবেশ করাতে হবে। পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক পণ্য এবং পরিষেবার সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমরা আশা করতে পারি যে সবুজ বিকল্পগুলোতে ক্রয় এবং বিনিয়োগ আদর্শ হয়ে উঠবে। ব্যাংক ক্রমবর্ধমানভাবে বায়ু এবং সৌর খামারের মতো সবুজ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আরও সবুজ অর্থায়ন উপলব্ধ এবং অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলছে। ব্যবসাকে আরও সবুজ করে তুলতে সহায়তা করার জন্য নিজেরাই বিনিয়োগ করছে। তাই পরিবেশবান্ধব কার্যকলাপকে সমর্থন করার জন্য মানুষ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তরকে সমর্থন করার জন্য সবুজ অর্থায়নের গুরুত্ব জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে স্বীকৃত হয়েছে, যেখানে বিশ্বনেতারা গ্রহকে রক্ষা করার পরিকল্পনায় একমত হন। প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ২১ এ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রাক-শিল্প স্তরের তুলনায় বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে- বিশেষ করে ১.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে সম্মত হয়েছিল, যা খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ছিল। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আমরা এই লক্ষ্য অর্জনের পথে নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হলো কম কার্বন ভবিষ্যতের সমাধানের জন্য অর্থায়নের অভাব। জলবায়ু অর্থায়ন হলো সবুজ অর্থায়নের একটি উপসেট। এটি মূলত পাবলিক ফাইন্যান্সকে বোঝায়। অথবা যেখানে উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে অর্থায়ন প্রদান করে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করে। সবুজ অর্থায়ন একটি বিস্তৃত শব্দ, যা টেকসই পরিবেশগত লক্ষ্যকে সমর্থন করে এমন সমস্ত আর্থিক প্রবাহকে অন্তর্ভুক্ত করে। তিনটি ভিন্ন ধরনের সবুজ অর্থায়ন রয়েছে- সবুজ বন্ধক, সবুজ ঋণ, সবুজ ব্যাংক। সবুজ ব্যাংক গতানুগতিক ব্যাংকের মতোই কাজ করে। তবে তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য পাবলিক তহবিল নিয়োগ করে। ২০২০ সালের এক গবেষণা অনুসারে, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবুজ ব্যাংকের সংখ্যা এক থেকে বেড়ে ২০টিতে দাঁড়িয়েছে, যারা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা দেশের জলবায়ু ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জলবায়ু-নিরপেক্ষ অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য অর্থায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তহবিল আকর্ষণ করা প্রয়োজন, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি। যার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন যাদের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া সবুজ আর্থিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর একটি প্রতিশ্রুতিশীল দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক সুযোগ, যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবুজ অর্থায়ন বজায় রাখতে সক্ষম। অতএব সবুজ অর্থায়নের সুযোগ, নতুন শ্রেণিবিন্যাস এবং মান অন্বেষণ একটি কেন্দ্রীয় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কৌশলে সবুজ তহবিল অন্তর্ভুক্ত করে একাধিক সুবিধা উপভোগ করতে পারে। প্রথমত, সাম্প্রতিক বছরে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসের ওপর কার্যক্রমকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য তাদের একটি ভালো ভাবমূর্তি থাকতে পারে। যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকার, গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খ্যাতি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা উন্নত করতে সম্পর্ক উন্নত করতে অবদান রাখবে। পরিবেশগত ঝুঁকির বোঝাপড়া এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে এসব উন্নতি সম্ভব হয়েছে। এটি নতুন বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করতে পারে, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করতে পারে অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করার কারণে বাজারে পরিবর্তনের প্রতি স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে পারে। নতুন গ্রাহক পছন্দের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করে। উপযুক্ত মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে। আরেকটি সুযোগ হতে পারে পরিবেশগত ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পদের ভাগ হ্রাস করে পোর্টফোলিও ঝুঁকি বৈচিত্র্যকরণ করা, যা কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন নিয়মকানুনের (‘সবুজ’ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা) জন্য প্রস্তুত করতে পারে। সবুজ তহবিল নতুন গবেষণা এবং বিশ্লেষণের জন্য একটি সুযোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সূচক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ১৭০টি দেশের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। কারণ, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম। এছাড়াও বাংলাদেশ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কারণ, বর্তমান দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ শতাংশ। তা সত্ত্বেও দেশটি সম্প্রতি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। এর মূল লক্ষ্য হলো কৃষির টেকসই বৃদ্ধি, শিল্প প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ এবং এফডিআই আকর্ষণ করা। আর্থিক ব্যবস্থাকে সবুজ করা প্রবৃদ্ধির পথের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ পরিমাপের একটি নির্ধারক হবে। প্রধান খাতকে পরিবেশগতভাবে দায়ী উৎপাদনে সবুজ রূপান্তর নির্ভর করবে টেকসই অর্থায়নের দিকে বেসরকারি খাতের অর্থায়নকে কতটা সক্রিয়ভাবে পরিচালিত এবং তত্ত্বাবধান করে তার ওপর। ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি শেয়ার এবং বন্ড থেকে তহবিলকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে বেসরকারি খাতে সবুজ অর্থায়নকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে একটি মানসম্মত বিন্যাস বজায় রেখে সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রকাশ প্রকাশ করার জন্য একটি সাধারণ দিকনির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখলে বাজার সূচকের বিভিন্ন রেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। এভাবে বেসরকারি খাতের কোম্পানি তাদের বিনিয়োগের প্রভাবের জন্য দায়ী থাকবে। এটি সরাসরি সবুজ অর্থায়নের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করবে। কারণ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আরও উৎসাহিত হবে। নতুন শেয়ার ইস্যু করে এবং সবুজ বন্ড প্রবর্তন করে, বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের মাধ্যমে কম কার্বন প্রকল্পের ঝুঁকি কমাতে পারে। বাজার উদ্ভাবনের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর সবুজ অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। সবুজ এবং   টেকসই শিল্পের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির চাহিদা তৈরি করা সম্ভব, যা সবুজ অর্থায়নের দিকে পরিচালিত করে। সবুজ অর্থায়নের মাধ্যমে উৎপাদন শিল্পের জন্য প্রণোদনা প্রবর্তন করলে পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের উদ্দীপনা আসতে পারে, যা পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস করে। একটি সহায়ক আর্থিক ব্যবস্থা কেবল পরিবেশবান্ধব রূপান্তর গ্রহণ করে একটি টেকসই খাতের দিকে পরিচালিত করতে পারে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত নারী উদ্যোক্তাদের ওপর গুরুত্বারোপ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) সমর্থন করার জন্য ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। উদীয়মান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু আর্থিক উপকরণ চালু করেছে যেমন- ক্রেডিট হোলসেলিং, ঋণ গ্যারান্টি, উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তহবিল ব্যবহার এবং ছাড়মূলক তহবিল সরবরাহের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন ইত্যাদি। সামগ্রিক অর্থনীতিকে সবুজ করার জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত এই উদ্যোগ সহায়তামূলক অর্থায়ন প্রকল্পের অবদান নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এসএমই অর্থায়ন সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি অগ্রাধিকার খাতের একটি তালিকা চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন; পাটজাতপণ্য, চামড়াশিল্প, প্লাস্টিকশিল্প, কৃষিপণ্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। সবুজ অর্থায়নের সাফল্য সম্ভাব্য খাত অন্বেষণ, উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং কৌশল ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের জন্য, তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য খাতগুলো চিহ্নিতকরণ এবং মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে। তবে চিহ্নিত সম্ভাব্য ক্ষেত্র হলো- নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি, জ্বালানি দক্ষতা এবং  পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন। যদিও সবুজ ব্যাংকিং নীতি নির্দেশিকা ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে। তবু উন্নতি সীমিত হয়েছে, যা সবুজ অর্থায়নের ধীর প্রবৃদ্ধি থেকে স্পষ্ট। এছাড়াও সবুজ অর্থায়ন বৃদ্ধির জন্য মূলধন বাজার, শিল্প অংশীদার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সেক্টর স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সক্ষমতা বিকাশ প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ ব্যাংকিং নীতি-নির্দেশিকা মোট ঋণ পোর্টফোলিওর অনুপাত হিসেবে সরাসরি সবুজ অর্থায়নের জন্য ন্যূনতম ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আজ অবধি ৫০টি খাতকে সরাসরি সবুজ অর্থায়নের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরাসরি সবুজ অর্থায়ন পাওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত খাতগুলোতে সাধারণত অল্প পরিমাণে তহবিলের প্রয়োজন হয়। এই ৫০টি খাতে অসংখ্য মাঝারি ও বৃহৎ আকারের খাতে মোট ঋণের ৫ শতাংশ বিতরণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কঠিন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে প্রমাণ হয়েছে। সে অবস্থায় পরিবেশবান্ধব প্রকল্প এবং বিনিয়োগকে সমর্থন করে একটি টেকসই, কম কার্বন অর্থনীতি অর্জনের জন্য সবুজ অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে সহায়তা করে।

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার