
ছবিঃ সংগৃহীত
সম্প্রতি বেসরকারি টিভি চ্যানেল 'চ্যানেল ২৪'-এর নিয়মিত আয়োজন 'মুক্তবাক' অনুষ্ঠানে ‘কাশ্মীর থেকে মিয়ানমার: সংকটের শেষ কোথায়?’ শীর্ষক টকশোতে অংশ নিয়ে বিশিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার বলেন, ভারত পৃথিবীর হিন্দুদের নেতা হতে চায়।
আশরাফ কায়সার বলেন, “বিজেপি সরকার, নরেন্দ্র মোদি এবং অজিত দোভাল—এই লোকগুলো ধর্মীয় বিষ ছড়িয়ে রাজনীতি করেন, ক্ষমতায় থাকেন এবং ভবিষ্যতেও ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন। ভারতের পৃথিবীর কাছে বলার মতো একটাই গল্প—বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন। কারণ ভারত পৃথিবীর হিন্দুদের নেতা হতে চায়। হিন্দু স্বার্থ যেখানে আছে, সেখানে সে রিয়াল হোক বা আনরিয়াল—কোথাও যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে সেখানেও সমস্যা তৈরি করে, যাতে করে রাজনৈতিকভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তারা লাভবান হতে পারে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেমন নির্বাচনের সময় কাজে লাগে, তেমনি পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গল্পটা বলতে সুবিধা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতে মুসলমানদের ওপর যা করা হচ্ছে, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো এখনো প্রকাশ্যে বলছে না। ধরুন, ওয়াকফ আইন যেটা করা হয়েছে—আপনি কি পারবেন কোনো মন্দিরের শেয়ারহোল্ডার বা বিচার-বিবেচনার জায়গায় একজন মুসলমানকে রাখতে? কিন্তু ভারতে নতুন ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, মুসলমানদের ওয়াকফ স্টেটগুলোতে হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। এটা পুরোপুরি করা হয়েছে মুসলিমদের অর্থনৈতিক ভিত্তি ভেঙে ফেলার জন্য। নির্বাচনের আগে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় মোদি ও তার দল এসে বলেন—আমরা জিতলে মুসলমানদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে, বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে। নির্বাচনের পরে অবশ্য এসব নিয়ে তারা আর বেশি কথা বলে না। আমরা দেখেছি, অমিত শাহ এসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের একটি নাজুক সময় পার করছি। সরকারটি এখন অন্তর্বর্তীকালীন, কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। আমাদের জন্য দুটি ডিস্টার্বিং ফোর্স রয়েছে—একটি হলো ভারত নিজেই, তার প্রপাগান্ডা এবং কূটনৈতিক তৎপরতা; অন্যটি হলো পলাতক রাজনৈতিক শক্তি, যারা মূলত ভারতে অবস্থান করছেন। এই দুই শক্তিকে নজরে রাখতে হবে। যখন আমরা মিয়ানমার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো কিংবা পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনার বিষয়ে অবস্থান নেবো—তখন আমাদের ভাবতে হবে। কারণ যুদ্ধ কেবল সামরিক কারণে হয় না, রাজনৈতিক কারণেই হয়।”
তিনি আরও বলেন, “৫৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এবারই প্রথম ভারতের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা বলেছি, সেখানে মুসলমানদের ওপর কেমন আচরণ করা হচ্ছে। এটি আমাদের অব্যাহতভাবে বলতে হবে। কারণ ভারতে ২০-২২ কোটি মুসলমান রয়েছে—তাদের ব্যাপারে আমরা শুধু মুসলমান বলে নয়, প্রতিবেশী হিসেবে বলবো। কিন্তু ভারত তো সে আচরণ করছে না। বরং তারা পশ্চিমা বিশ্বকে বলছে—বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা তাদের চিন্তার বিষয়। সুতরাং আমাদেরও পাল্টা চাপ প্রয়োগ করতে হবে এবং সেই চাপ বজায় রাখতে হবে।”
ইমরান