ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশ হবে গাজা, ভারত হবে ইসরায়েল, শুভেন্দুর বক্তব্যের পাল্টা জবাব

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৯:০৯, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ হবে গাজা, ভারত হবে ইসরায়েল, শুভেন্দুর বক্তব্যের পাল্টা জবাব

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একজন বিজেপি নেতা সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, "বাংলাদেশ গাজা হয়ে যাবে।" এই মন্তব্য ঘিরে বাংলাদেশে উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বাস্তবতা হলো, আমাদের হাতে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। তবে কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।”

এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) ড. মনিরুল ইসলাম আখন্দ বলেন, “এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কৌশল। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী ধারণকারী দেশ। আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখি। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং প্রশিক্ষিত। ভারতের মতো একটি দেশের জন্য বাংলাদেশে সরাসরি আক্রমণ চালানো মোটেও সহজ হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের সীমান্তজুড়ে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে—পাকিস্তান, চীন, সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোসহ নানা জায়গায় তাদের সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বাংলাদেশে হামলা চালাতে হলে ভারতের প্রয়োজন হবে অন্তত ৬ থেকে ৮ লক্ষ সেনাসদস্য, যা তাদের পক্ষে বাস্তবসম্মত নয়।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে ‘ইনফরমেশন ওয়ার’ বা তথ্য-যুদ্ধ, কূটনৈতিক যুদ্ধ, এমনকি অর্থনৈতিক যুদ্ধের কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের আসন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসভা নির্বাচন সামনে রেখে বিজেপি তাদের অবস্থান আরও মজবুত করতে চাচ্ছে এবং এ ধরনের মন্তব্য সে প্রচেষ্টারই অংশ।

বাংলাদেশের এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরণের বক্তব্য ভারতীয় জনতার চোখে দেশপ্রেমিক ভাবমূর্তি গড়তে সাহায্য করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিজেপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে চাচ্ছে, এবং এ জন্য তারা সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলোকে ব্যবহার করছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে কোনো বাহ্যিক হুমকি নেই। আমরা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিকে নজর দিচ্ছি। তবে প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন উসকানিমূলক বক্তব্য আমাদের কানে নেয়ার কিছু নেই।”

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে কংগ্রেস ও অন্যান্য প্রগতিশীল শক্তিগুলো এই জাতীয় মন্তব্যের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারছে না, কারণ এখনকার জাতীয়তাবাদী আবহে বিরোধিতা করলে জনপ্রিয়তা হারানোর শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। বিজেপি অত্যন্ত কৌশলে একটি জাতীয় ঐক্যের ছক তৈরি করছে, যেখানে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ‘শত্রু’ ভাবমূর্তি দাঁড় করিয়ে তারা রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে।

তথ্যসূত্রঃ https://youtu.be/-fyrzkQHlPI?si=-125wrbbEiLQX-kx

মারিয়া

×