
পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম
দেশবাসী যেন অন্যায় আবদার না করেন সেই অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, একটা অনুরোধ, আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, আমি অনেক সময় অন্যায় আবদারের মুখোমুখি হইÑ এই অমুককে বদলি করে দিন, অমুককে ছেড়ে দিন, অমুককে পদক দিনÑ এসব আবদারও আসে।
আইজিপি বলেন, বিধিবিধান মেনে পুলিশ পরিচালনা করার জন্য আমি বিনীত প্রার্থনা জানাই দেশবাসীর কাছে। আমি যেন বিধিবিধান মেনে চলতে পারি। আমার প্রতি অন্যায় আবদার যেন কম হয়, এটাই প্রার্থনা।
সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর ও পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা একে এম কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন। বাহারুল আলম জানান, ঢালাওভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, পুলিশ এখনো ‘স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি এটা গঠন করা হবে। সরকারকে আমরা আমাদের কথাগুলো জানাচ্ছি। সংস্কার হয়ে গেলে জনগণের সুবিধা হবে। তবে এখনো ঢালাওভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করে কেউ সুবিধা নিতে পারবে না। দেশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে করা মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।
কারণ ‘৫ আগস্টের পর একটি মহল হয়রানির উদ্দেশ্যে মূল আসামির সঙ্গে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে মামলায় আসামি করছে। এ বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। শুরু থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আমি নিজেও বলেছি এবং পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই নির্দেশ পেয়েছেন যে, কোনো নিরীহ মানুষকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, হয়রানি করা না হয়। তদন্তে শুধু যার বিরুদ্ধে দায়ভার পাওয়া যাবে, তার বেলাতেই আমরা ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট চাইব।
শিল্লী সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ও পরিবহনসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের শ্রেণিভুক্ত করে মিরপুর থানায় চার শতাধিক মানুষকে আসামি করা হয়েছে শুধু হয়রানি ও বাণিজ্য করার জন্য। এই মামলার চার্জশিটে নিশ্চয়ই দোষীরা ছাড়া বাকি সবাই বাদ যাবেন। তখন নিরীহ ভুক্তভোগীরা কিভাবে কার কাছ থেকে ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাবেÑ দৈনিক জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আমাদের শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়েছে। সবাই নিজের হাতে লিখে নিয়ে আসেন।
যখন একজন বাদী নিয়ে আসেন তখন সেটি আমাদের মামলা হিসেবে রুজু করতে হয়। তখন এটা সত্য না মিথ্যা যাচাই করার সুযোগ নেই। অভিযোগ যেটা দেয়, সেটা আমার নিতে হয়। এরপর তদন্তে গিয়ে আমি দেখি আসলে কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা। সত্য অংশটুকুই আমরা তদন্তে উঠিয়ে নিয়ে আদালতের কাছে পাঠাই। বলি, এই অপরাধটা হয়েছে। তবে আমি এটা নিশ্চিত করতে চাই মামলা হলেই গ্রেপ্তার নয়, হয়রানি নয়। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তেই বুঝতে পারে এ ধরনের মামলা কোন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
আমাদের কাছেও মাঝে মাঝে কিছু লোকজন এসে জানায় ঢালাও মামলার হয়রানি সম্পর্কে। আমি পুলিশকেও নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে এ ধরনের মামলা সম্পর্কে সতর্ক সজাগ থাকে। কাজেই আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি এ ধরনের মামলায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’। তবে গতানুগতিক বছরগুলোর মতো এবারের পুলিশ সপ্তাহে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকভাবে করা হচ্ছে না বলে জানান আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহ আনুষ্ঠানিক না করে, কার্যকর করতে চাই। তাই এবার পুলিশ সপ্তাহ অনাড়ম্বরভাবে করছি। যেখানে উৎসব-আনন্দ একদমই থাকছে না। পুলিশ সপ্তাহ আমরা আনুষ্ঠানিক না করে কার্যকর করতে চাচ্ছি।
এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য, ‘আমার পুলিশ আমার দেশ, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’। এই ভাবনাটি আমরা দেশবাসীর মনে সঞ্চারিত করতে চাই। তারা যেন বলতে পারেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের এই পুলিশ আমাদের। আনন্দ-উৎসব বাদ দিয়ে এবার অনেক বেশি কার্যকর সেশন করা, পেশাগত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা ও বিগত দিনের কর্মকা- খুঁজে বের করার বিষয়গুলো নিয়ে এই তিন দিন আমরা ব্যস্ত থাকব। সারাদেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, পুলিশ সুপারবৃন্দ আসবেন এবং সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবে।
আগামী দিনে কীভাবে আরও উন্নত পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে পারি। সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো থেকে কীভাবে নিজেদের উত্তরণ ঘটাব এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। মাঠ পর্যায়ে বর্তমান পরিস্থিতি সবার কাছ থেকে নেব, জানব এবং আগামী দিনে তারা কি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেটা শুনব।
আইজিপি বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহে আমরা নাগরিক সমাজের সঙ্গে একটি আলোচনা রেখেছি। যেখানে সাংবাদিক, সাহিত্যেক, শিক্ষক, গীতিকার, ক্রীড়াবিদ ও ছাত্র প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। পুলিশিংয়ের বিষয়ে তাদের ধারণা এবং অভিজ্ঞতা, ৫ আগস্টের আগের ও পরের ভুলত্রুটির বিষয়গুলো তাদের কাছ থেকে শুনব। পুলিশ সপ্তাহে সময়ে আমরা বরাবরের মতোই যারা প্রশংসনীয কাজ করেছেন তাদের পদকে ভূষিত করে থাকি। প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থেকে পদক প্রদানের জন্য সদয সম্মতি দিয়েছেন। তিনি নিজেই পদক প্রদান করবেন।
এক প্রশ্নের জবাকে বাহারুল আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল পুলিশের সংস্কার নিয়ে। রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন জায়গায় এই আলোচনাটি এসেছে। বলা হচ্ছে সংস্কার যখন হয না তখন এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে একই আলোচনা এসেছে। সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু এই আলোচনা যখন ঐকমত্য কমিশনের গেল তখন অন্যান্য সংস্কার কমিশন গেলেও পুলিশ সংস্কারের আলোচনা আর দেখা যাচ্ছে না।
পুলিশ সংস্কারের সর্বশেষ অবস্থা ও পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমরা খুব আশান্বিত ছিলাম যেহেতু পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম পুলিশের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ দেবেন।
‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমরাও কিছু সাজেশন দিয়েছিলাম একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন করা, সরাসরি নির্বাহী নিয়ন্ত্রণে না রেখে পুলিশকে কিছু অটোনমি বা স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার। পুলিশের এই পরামর্শের ভিত্তিতে নীতিগতভাবে একমত হলেও পুলিশ সংস্কার কমিশন সেটা এলাবরেট করেনি, কোনো কাঠামো দেয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে বলে মত দিয়েছে।
অর্থাৎ এক্সিকিউটিভ পর্যায়ে এসব বাস্তবায়ন হবে। যেমন থানায় একজন নারী পুলিশ সদস্য সব সময় থাকবে। যাতে করে নারী ও শিশু পুলিশি সেবা পান। পুলিশ যখন কাউকে গ্রেপ্তার করবে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে, সেটা স্বচ্ছ হতে হবে। এটা আসামির আইনজীবীর সামনে হতে হবে।