ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা 

বিচারকাজে বিড়ম্বনা, সময় ও অর্থ ব্যয় কমানোই প্রধান লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

বিচারকাজে বিড়ম্বনা, সময় ও অর্থ ব্যয় কমানোই প্রধান লক্ষ্য

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিচারকাজে বিড়ম্বনা কমানো, সময় বাঁচানো ও অর্থ ব্যয় কমানো। এজন্য ইতোমধ্যেই আমরা বেশকিছু সংস্কারকাজ করেছি। এটা হয়তো খুব বেশি বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু যারা আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের বোঝার কথা। সংশোধনের কিছু উদাহরণ দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, দেওয়ানী কার্যবিধির যুগান্তকারী বেশকিছু সংশোধন করা হয়েছে যা উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি, উপদেষ্টা পরিষদের আগামী সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করবে।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।  
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট নোটিফিকেশনে আমাদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেনি। ওনারা নিজেরা গেজেট নোটিফিকেশন করেছেন। এখানে আমার বলার কিছু নেই। ইশরাককে মেয়র ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আমলের নির্বাচনকে লিগ্যালাইজ করা হলো কি না এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
গেজেট হবে কি না সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল- এ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ইশরাক হোসেনের গেজেট নোটিফিকেশন হবে কি না, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। নির্বাচন কমিশন তো আসলে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের মতামত জানার প্রয়োজন ছিল না (তাদের)। এজন্য তাদের সিদ্ধান্ত তাদের-ই নেওয়ার কথা। আমাদের কাছে যখন মতামত নিতে পাঠিয়েছিলেন তখন আমরা সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। 
ফৌজদারি কার্যবিধিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, যদি বিচার করার সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায় এবং ৪০ শতাংশ মামলা জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রধান সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়, তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য অনেক বড় একটা কাজ করা হবে। 
তিনি বলেন, দেশে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মামলা দায়ের হয়। আর জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ৩৫ হাজার মামলা। সংস্থাটিতে বছরে দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলে আদালতে মামলার চাপ কমপক্ষে ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবে। পারিবারিক মামলা, এনআই অ্যাক্টের মামলা, আপসযোগ্য ফৌজদারি মামলাসহ ছোট ছোট মামলাগুলো বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় পাঠানো সম্ভব হলে আদালতগুলোতে বিপুল সংখ্যক মামলাজট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে মাত্র একজন করে সহকারী/সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার বিচারক কাজ করছেন। কাজের গতি বাড়াতে এসব অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ ছাড়াও একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দেওয়া হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে আমরা এমন একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই, যেখানে অন্তত এক লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে সেখানে দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে। এটা করা সম্ভব হলে, বাংলাদেশে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য অনেক বড় সুবিধা তৈরি হবে। 
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন আইন উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রধান সংস্থার পরিচালক ( জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী।

×