ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

মীর কাশেম কন্যা-নিজামীপুত্রের গুরুতর অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৫:২২, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

মীর কাশেম কন্যা-নিজামীপুত্রের গুরুতর অভিযোগ

জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলীর বিচারের নামে ফাঁসি দেয়ায় দলটির নেতাদের দায়ী এমন অভিযোগ তুলছে ওই নেতাদের পরিবারের সদস্যরা।

মীর কাসেম আলীর কন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতাদের রক্ষায় দলটির নেতারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছেন।

গেল শনিবার নিজের ফেসবুকে দেওয়া, শিল্পপতি হিসেবে পরিচিতি মীর কাসেম কন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম তার বলেন, পারিবারিকভাবে তারা আমাদের অনেক কাছের, বিশেষ করে তাহের চাচা, মীর কাসেম আলীর। কিন্তু জামায়াত দল হিসেবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছে তাদের নেতাদের (মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলীর) ফাঁসি আটকাতে। দিনের আলোর মতো যা আজ স্বচ্ছ। এটা তো সবাই একমত হবেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহিদি মর্যাদাই আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা এখন এবং আগামীতেও। এছাড়া আপনজনেরা তো শুধু ধোকা দিয়েছে।

তাহিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো লেখেন, জামায়াত আমাকে এমপি পদ অফার দিলেও আমি সারাজীবন এটা বলে যাব যে, নিজের হাতে হত্যা না করলেও আমাদের বাবাদের হত্যার পেছনে তারাও দায়ী। এটা আমার কাছে এক প্রকার ক্রাইম অব অমিশন। তিনি জামায়াতের বর্তমান নেতাদের উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘তারপরও আপনারা ভালো থাকেন, আমার বাবাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ভালো থাকুক’।

প্রসঙ্গত, ক্রাইম অব অমিশন: আইনি ভাষায়, ক্রিমিনাল অমিশন বা অপরাধমূলক অবহেলা বলতে এমন অপরাধকে বোঝায়, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আইনসম্মত কর্তব্য পালনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা না করে অপরাধ সংঘটিত হতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। অর্থাৎ আইনগতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তার ওপর অর্পিত আইনি কর্তব্য পালন না করে এবং তার ফলে অপরাধজনিত ক্ষতি ঘটে, তাহলে একে একটি পূর্ণাঙ্গ অপরাধের বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়।

এর আগে জামায়াতের সমালোচনা করে দলটির সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে মোহাম্মদ নাদিমুর রহমানও সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেন। নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি (২০০১-২০০৩) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (২০০৩-২০০৬) মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১১ মে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজামীপুত্র মোহাম্মদ নাদিমুর রহমান লেখেন, কথাগুলো শতভাগ সত্য এবং যৌক্তিক। আর জামায়াতের নীতি-আদর্শ থাকবেই বা কী করে? জামায়াতের যেই ছয় নেতার অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের এই ফাঁসি ঠেকাতে পারলেই না জামায়াতের নীতি-আদর্শ ঠিক থাকতো। উলটো ছোটজন বলেছিলেন- ‘তারা এখন জেলখানায় আরাম করুক আর আমরা এখন একটু খাই’। আর বড়টা তো পরে মুখ ফসকে বলেই ফেলেছিলেন- ‘তারা জেলখানায় পচে মরুক, আমরা আমাদের সংগঠন গোছাবো, না হলে আমাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বানিয়ে দেবে’। পরবর্তীতে তো আবার আরেকটা সলিমুদ্দীন না কলিমুদ্দীন কি নাম, এক বক্তৃতায় তো বললেনই- ‘আমরা যদি আইন না মানতাম তাহলে আপনারা আমাদের একটা নেতাকেও ফাঁসি দিতে পারতেন না’। আরে, ছাত্ররাও যদি আইন মানতো, তাহলে এই জালেম হাসিনা সরকারের পতন জীবনেও ঘটাইতে পারতো না।

নিযামী পুত্র আরো বলেন, বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কথা বলে কে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায় এটা পুরো ক্রিস্টাল ক্লিয়ার । এখন আবার শুরু করেছে সকালে এক কথা আর রাতে আরেক কথা বলা। আবার অন্যদিকে এক নেতার এক কথা আবার আরেক নেতার আরেক কথা। অর্থাৎ কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই।

স্ট্যাটাসে নিজামীপুত্র মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের আরেক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের জন্য নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে তিনি যেন দ্রুত মুক্তি পেয়ে জামায়াতের হাল ধরেন এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন নাদিমুর।

জামায়াতের শীর্ষ সাবেক দুই নেতার পুত্র ও কন্যার বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। তবে বেশির ভাগ নেটিজেন বলছেন, অধ্যাপক গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী, এটিএম আজহারুল ইসলামরা হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। সে কারণে তাদের প্রতি আওয়ামী লীগ বিক্ষুব্ধ ছিল। মূলত দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 

ফুয়াদ

আরো পড়ুন  

×