
ছবিঃ সংগৃহীত
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশ হয়ে একটি মানবিক করিডর (হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ) ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ। এই প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার, তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে। বুধবার এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, "নীতিগতভাবে আমরা সম্মত হয়েছি, কারণ এটি একটি মানবিক প্যাসেজ। তবে কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলি পূরণ হলে আমরা সহযোগিতা করব।"
জাতিসংঘের প্রস্তাবটি আলোচনায় আসে সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে। সফরের সময় রাখাইন রাজ্যে মানবিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তা পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে করিডর ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাখাইন প্রদেশে ক্রমাগত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবনতি হচ্ছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত বন্ধ থাকায় স্থানীয়দের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে এবং জরুরি সেবা ভেঙে পড়েছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রাখাইনবাসীর নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মানবিক করিডর ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। তারা মনে করেন, এই প্যাসেজ যেন রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মাত্রা না আনে এবং মিয়ানমারে পাচার বা অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া মানবিক সহায়তা যেন সত্যিকার অর্থে রাখাইন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে পৌঁছায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমান বলেন, “এই প্যাসেজের মাধ্যমে সহায়তা পৌঁছালেও, তা যেন শুধুমাত্র এনজিওকেন্দ্রিক না হয়। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থকে মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ আরাকান আর্মি বা তাতমাদাও (মিয়ানমার সামরিক বাহিনী) – কোনো পক্ষের রোষানলে না পড়ে।”
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই করিডর শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একমত হলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি এতে ঝুঁকিও রয়েছে। তাই বিষয়টিকে কেবল মানবিক নয়, দীর্ঘমেয়াদে ভূরাজনৈতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
মারিয়া