
.
রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া। বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার।
রংপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি ও গাছপালা। জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, ও পীরগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঝোড়ো হাওয়ায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে রংপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঝড়ের তা-ব চলে। কয়েক মিনিটের ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে এই ক্ষতি হয়।
জানা গেছে, ঝোড়ো বাতাসে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ি ও গাছ-গাছালির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাত পৌনে ১১টার পর থেকে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। এতে কয়েকটি উপজেলায় শতাধিকের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।
এদিকে পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে অনেক সড়কে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন গাছ সরিয়ে নিতে কাজ করেন।
জানা গেছে, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝড়ে আহত শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের কারণে ভেঙে পড়েছে অনেকের মাথাগোঁজার ঠাঁই। গ্রামেগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের তার ছিঁড়ে পড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, ঝড় বৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই ফসলের ক্ষতি হয়। তবে এখনো পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় হঠাৎ ধুলো ঝড় শুরু হয়। এতে অস্বস্তিতে পড়ে নগরবাসী। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। কালবৈশাখী ঝড়ে নগরীর অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। কোথাও কোথাও ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়। এ সময় পুরো নগরী লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। তবে কয়েকদিন ধরে চলা দাবদাহের কারণে হাঁপিয়ে ওঠা রংপুর নগরীতে ফিরেছে প্রশান্তি। বৃষ্টিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন নগরবাসী।
এই ঝড়ে জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগের কারণে ঘরবাড়ি ও গাছ-গাছালির পাশাপাশি উড়ে গেছে হালকা স্থাপনা।
লালমনিরহাট ॥ পাঁচ উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের তা-ব ঘরবাড়ি, গাছপালা ও আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় ঝড় তা-ব চালায়।
কুড়িগ্রাম ॥ কালবৈশাখী ঝড়ে ল- ভ- হয়েছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। হঠাৎ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে একরের পর একর ধান ও ভুট্টাক্ষেত। ঝড়ে অসংখ্য বিদ্যুৎ পোল পড়ে যাওয়ার কারণে রাত সাড়ে ১০টা থেকে রবিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
কিশোরগঞ্জ ॥ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার ঝড়ে ফসল, বিশেষ করে ভুট্টা, ইরি বোরো ধান এবং শাক-সবজি তছনছ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও এলাকার বেশকিছু টিনের ঘর এবং কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে পড়ে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
বাগেরহাট ॥ কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠে থাকা উঠতি পাকা বোরো ধান-সহ আম, সবজি ক্ষেত ও পান বরজের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে জেলার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যান চলাচল বন্ধ থাকে। গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। রবিবার শেষ বিকেলের দিকে প্রচন্ড বজ্রপাতের সঙ্গে শিলা বৃষ্টিতে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সদর উপজেলার ডেমার কৃষক হালিম শেখ, সদরের ষাটগম্বুজ এলাকার মাহাবুব হোসেন, ফকিরহাট কাঠলতলা এলাকার কৃষক শেখ আলফাজ হোসেন বলেন, কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে পাকা ধানের পাশাপাশি পানের বরজ, আম, জাম, জামরুলসহ অধিকাংশ কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।’
জেলার কাড়াপাড়া, ডেমা, ষাটগম্বুজ, গোটাপাড়া, বেমরতা, বাইনতলাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কাঁচাঘর ও গাছগাছালি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্যানেল