ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

চালু হচ্ছে অচল ৭ বিমানবন্দর, বদলে যাবে ভূ-রাজনীতির কৌশল!

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২২:৪২, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

চালু হচ্ছে অচল ৭ বিমানবন্দর, বদলে যাবে ভূ-রাজনীতির কৌশল!

ছবি: সংগৃহীত

দেশের সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর মধ্যে আলোচিত লালমনিরহাট ও শমশেরনগর বিমানবন্দরও রয়েছে। তবে প্রথমেই চালু হতে যাচ্ছে বগুড়া বিমানবন্দর। বিমানবন্দরগুলো সচল হলে দেশের পর্যটন ও অর্থনীতির বিকাশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।

পর্যটন খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো, যাত্রী সংখ্যা বাড়ানো, সড়ক ও রেলপথের চাপ কমানো এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে চাঙ্গা করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক। বর্তমানে দেশের সাতটি বিমানবন্দর পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে—বগুড়া, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজারের শমশেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা ও তেজগাঁও। এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই মাসেই বগুড়া বিমানবন্দর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ চলছে পুরোদমে।

লালমনিরহাট ও শমশেরনগর বিমানবন্দর সচল করার লক্ষ্যে চার সদস্যের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অন্য বিমানবন্দরগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মনজুর কোভিদ ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, "যে বিমানবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ হবে, সেটিই আগে সচল করা হবে। সেই অনুযায়ী বগুড়া বিমানবন্দরই প্রথম চালু হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে।"

লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর জন্য বিমান বাহিনীর সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার প্রক্রিয়া চলছে। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশদের নির্মিত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রানওয়ে বিশিষ্ট এ বিমানবন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো সম্পন্ন বিমানবন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সর্বশেষ ব্যবহৃত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং ভারতের পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। কিছু সংস্কার করলেই এটি পূর্ণ কার্যকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের 'চিকেনস নেক' এর নিকটবর্তী হওয়ায় লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু হলে কৌশলগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হবে। অতীতে ভারতের আপত্তির আশঙ্কায় বিমানবন্দরটি চালু হয়নি, তবে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে এবার আর বাধা আসবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত শমশেরনগর বিমানবন্দর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত হয়। ১৯৭৫ সালে সেখানে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে একটি প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। বিমানবন্দরটি চালু হলে প্রবাসী বাংলাদেশি ও পর্যটকদের জন্য যোগাযোগ সহজতর হবে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলমের মতে, শমশেরনগর বিমানবন্দরটি চালু হলে তা নেপাল ও ভুটানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ জোরদার করবে এবং এটি একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।

পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ দেশের আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/FDjSAj_sHwI?si=eTlpGhZn56RkJMih

এম.কে.

×