ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

অপহরণের আড়াই মাসেও জবির সাবেক ছাত্র লিখনের সন্ধান মেলেনি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:০০, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

অপহরণের আড়াই মাসেও জবির সাবেক ছাত্র লিখনের সন্ধান মেলেনি

ছবি: জনকণ্ঠ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম লিখনকে অপহরণের আড়াই মাস পরেও সন্ধান মেলেনি। সন্তানকে ফিরে পেতে আহাজারি করছেন তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা।

রবিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখনের সন্ধান চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ লিখনের বাবা দুলাল হাওলাদার, মা রোজিনা বেগম, ভাই বাবু হাওলাদার এবং বোন মিতু আক্তার ও ফাতেমা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে বাবু হাওলাদার বলেন, “আমার ভাই সাইফুল ইসলাম লিখন (৩৩) প্রায় আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ। বাবা-মা ছেলে হারানোর শোকে পাগলপ্রায়। দীর্ঘ এই সময়টিতে আমাদের পরিবারে সুখ কী জিনিস, তা হারিয়ে গেছে। ঢাকার ওয়ারির চণ্ডীচরণ বোস স্ট্রিটে আমাদের বসবাস। স্থায়ী ঠিকানা মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি।”

তিনি বলেন, “ভাই সাইফুল ইসলাম লিখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। তাকে ব্যবসায়িক টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অপহরণ করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। জিডি ও অপহরণ মামলা করার ক্ষেত্রে আমরা মুন্সীগঞ্জ পুলিশের অসহযোগিতা পেয়েছি। এমনকি নানা ঘটনায় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমার ভাইয়ের অপহরণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার এবং প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ধারণা, লিখনকে পরিকল্পিতভাবে পরিচিত বন্ধুদের কাছে মুন্সিগঞ্জ সদরে গিয়ে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় অপহরণের মামলা দায়ের হয়েছে। এর আগে পুলিশ নানা অসহযোগিতা করেছে। মামলার আগে জিডি করা এবং মামলায় প্রকৃত আসামির নাম সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশ আমাদের হেনস্তা করেছে।”

লিখন নিখোঁজের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি জানান, “গত ৬ ফেব্রুয়ারি লিখন মাকে জানান, মুন্সিগঞ্জ যাবেন। বন্ধু সাদ্দাম তাকে দাওয়াত দিয়েছেন। দুপুরে একটি জন্মদিন এবং রাতে একটি মুসলমানি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। লিখন আরও জানান, আসার সময় সাদ্দামের সঙ্গে ব্যবসায়িক হিসাব করে আসবেন। ওই দিন আনুমানিক বেলা ১১টায় মুন্সিগঞ্জ যাবার উদ্দেশ্যে ওয়ারির বাসা থেকে বের হন।
আমি রাত ১১টা ১৪ মিনিটে লিখনকে ফোন করি, তিনি বাসায় আসবেন কিনা জানতে। কিন্তু তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাই এবং তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিতে গিয়ে দেখি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিএক্টিভেটেড। এ সময় আমি সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তিনি জানান, লিখন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “৭ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সদস্যসহ আমরা সাদ্দামের দেওয়া ঠিকানামতো মুন্সিগঞ্জ সদরে স্বপ্ন সুপার শপের বিল্ডিংয়ের নিচে যাই। সাদ্দামের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, দাওয়াত খেয়ে ঘোরাঘুরি করে একটি ফোন আসায় লিখন চলে গেছেন। আমরা সেখানে লিখনের বিষয়ে বিভিন্ন জনের কাছে খোঁজ নিই। এক সময় সাদ্দাম বলেন, আপনারা থানায় আসেন।
আমরা থানায় গিয়ে দেখি, সাদ্দাম একজন সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন। তার নাম সাদ্দাম মোল্লা। তখন আমি এসআই সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলি এবং জানতে চাই আমার ভাই লিখনের মোবাইল ফোন কোথায় বন্ধ হয়েছে। তখন এসআই সাদ্দাম জানান, লিখনের মোবাইল ফোন রাত ১১টা ২ মিনিটে মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকায় বন্ধ হয়েছে।”

তিনি জানান, “এ ব্যাপারে আমরা মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ৪৬১) করি ৭ ফেব্রুয়ারি। তবে জিডি করতে গিয়ে নানা অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। থানার ওসি, ওসি-তদন্ত এবং এসপিকে বিষয়টি অবগত করি। পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জ সদর আর্মি ক্যাম্প, র‌্যাব-১১ এবং র‌্যাব-১০ কেও জানানো হয়।

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে এসআই মকসুদুলকে দেওয়া হলেও পরে তাকে সরিয়ে এসআই সাদ্দাম মোল্লাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।”

তিনি আরও জানান, “৯ ফেব্রুয়ারি আরকে টাওয়ারের স্বপ্ন সুপার শপের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দেখি, ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট থেকে ৮টা ২ মিনিট পর্যন্ত লিখন স্বপ্নের গেটের সামনে ছিলেন। এসময় লিখন বন্ধু আশরাফুল ইসলাম স্বাগতমের মা ও তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে আশরাফুল ইসলামের মেয়ে কিছু কেনাকাটা করে বাসার গেটের দিকে গেলে লিখন আর সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় না।
পরে ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আশরাফুল ইসলাম স্বাগতম তার পরিবার নিয়ে বাড়ি তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। তাদের অনেকের মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।”

তিনি বলেন, “১৩ ফেব্রুয়ারি আমরা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা (নম্বর-১৭) দায়ের করি। অভিযোগ আছে, এসআই সাদ্দাম মোল্লা নিজে একটি অভিযোগপত্র লিখে আমাদের বাবার স্বাক্ষর নেন।”

এম.কে.

×