
ছবিঃ সংগৃহীত
রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত একটি বক্তব্য—"বিএনপির কোনো রাজনীতি নেই"—নিয়ে ফের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে বহু বছর ধরে ঘুরেফিরে বলা এই মন্তব্যকে এক প্রকার রাজনৈতিক কৌতুক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষক ফাহাম আব্দুস সালাম। তাঁর মতে, এই কথাটি প্রথম বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই রেটরিক আরও বিস্তৃত হয়েছে।
আব্দুস সালাম বলেন, “৮০’র দশকে মানুষ যেমন সালসা খেয়ে জাদু আশার দিকে তাকিয়ে থাকত, ঠিক তেমনিভাবে এই ‘রাজনীতি নেই’ কথাটা শুনে একটা মানসিক প্রশান্তি খোঁজে কিছু মানুষ।” তিনি এটিকে তুলনা করেন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ব্রাজিলীয় ফুটবল ভক্তদের সেই একরোখা কটাক্ষের সাথে, যেখান থেকে একধরনের আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ ঘটে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপিকে "রাজনৈতিক দল নয়" বলে দাগিয়ে দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় চাপে থাকা সত্ত্বেও দলটি জনসমর্থন ধরে রেখেছে। প্রশ্ন তোলেন, যদি বিএনপির রাজনীতি না-ই থাকে, তাহলে এত বছর ধরে তারা জনগণের মনে জায়গা করে আছে কীভাবে?
সালামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিএনপি মূলত এক ধরনের "এন্টি-আওয়ামী লীগ এবং এন্টি-ইন্ডিয়া" প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যা বাংলাদেশের জনমনে বিশেষ একটি আবেগের প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর মতে, দেশের প্রায় ৭০% জনগণ কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী এবং ৯০% পর্যন্ত ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। সেই মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে বিএনপি একটি স্থায়ী রাজনৈতিক স্থান তৈরি করে ফেলেছে, যা ইসলামপন্থীরা বা নতুন দলগুলো করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ ভাবেন যে শুধুমাত্র ইসলামপন্থী রেটরিক দিয়ে বিএনপিকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব, তাহলে সেটা হবে মারাত্মক ভুল।” তাঁর ভাষায়, এমন একটি দল বানালেও তারা গওসিয়া মার্কেটের এক কোণায় দাঁড়িয়ে মানুষ গোনার মতো অবস্থা হবে—ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকেও বিএনপির অবস্থান ব্যতিক্রমী। সালামের বিশ্লেষণে, বিএনপি কখনোই কোনো রেটরিক বা আদর্শিক অবস্থানে ‘ওভারকমিট’ করে না। তাদের রাজনৈতিক ভাষ্য (ন্যারেটিভ) মাঝারি ডানপন্থার মধ্যে থেকে যায়, এবং তারা এতটাই ফ্লেক্সিবল যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দলের অবস্থানকেও সহজে আপন করে নিতে পারে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “বিএনপি বলতে পারে আমি ৭১-এর পক্ষেও, আবার ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষেও। কিন্তু ইসলামি আইন প্রয়োগে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।” এই দ্বৈত অবস্থান অনেকের কাছে স্ববিরোধী মনে হলেও, ভোটের রাজনীতিতে এটি কার্যকর বলেই মনে করছেন তিনি।
বিএনপির এই "মধ্যপন্থী কিন্তু নমনীয়" অবস্থানকেই তিনি তাদের রাজনীতির প্রকৃত শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর মতে, এই ধরণের স্ট্যান্সই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মানসিকতার প্রতিফলন। যারা চায় একটু ভালো থাকা—কোনো আদর্শিক লড়াই নয়, বরং স্থিতি ও স্বস্তি।
শেষ পর্যন্ত সালামের বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা উঠে আসে: “বিএনপিকে আপনি রাজনীতির মাঠে হারাতে পারবেন না, কারণ এই ধরণের মধ্যপন্থী বাস্তববাদী রাজনীতিই ভবিষ্যতের বাংলাদেশে টিকে থাকবে।”
তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/1DnqJCo2Rg/
মারিয়া