
ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ
ফিলিস্তিন, ভারত ও রোহিঙ্গা মুসলিমসহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষে সংহতি জানিয়েছে দেশের সুন্নিপন্থি কয়েকটি ইসলামী দল ও সংগঠন। আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ রাজধানীতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংহতি সমাবেশের জন্য অনুমতি পেলেও ভোর থেকেই মানুষ জমায়েত হতে শুরু করে। সমাবেশে অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষের জমায়েত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। ইসরাইলের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। বক্তারা বলেন, যতদিন প্রাণ থাকবে, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করব না।
বক্তারা বলেন, ইসরাইলের আধিপত্য এখন আর শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ নয়; দক্ষিণ এশিয়াতেও এর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। ভারতের মোদি সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরাইলি ধাঁচের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় মুসলিমবিরোধী ও অসাংবিধানিক ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে। বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিক হিসেবে ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো ইমানি দায়িত্ব এবং ভবিষ্যতেও এ দায়িত্ব পালনে পিছপা হবেন না।
সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, পতিত স্বৈরাচারী সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্যবসা করেছে, কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান করেনি। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার আন্তর্জাতিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মভূমিতে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এই সমাবেশ থেকে ড. ইউনূসকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
মাজারে হামলা প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে দেশে অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা সুস্পষ্টভাবে জুলুম ও অমানবিক। বক্তারা সতর্ক করেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো মাজারে হামলা হয়, তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করা হবে। একইসঙ্গে ভারতে মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে হামলা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমাবেশ থেকে আয়োজকরা ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন। যার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; ইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে যত হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকা- ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল বাতিল ঘোষণা করতে হবে; ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যত হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া সমাবেশ থেকে তিনটি অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো ইসরাইল ও ভারতসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখব; পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগসহ সকল প্রকার দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখব এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যে কোনো সময় যে কোনো মূল্যে আমরা ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকব, ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশ শেষে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সংহতি সমাবেশ শেষ হয়। আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের সভাপতি ও মুসুরি খোলা দরবার শরীফের পীর শাহ্ হাসানুজ্জামান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন ইসলামী বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আরিফ, আয়োজক কমিটির উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, আনম মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী, অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আযহারী প্রমুখ।