ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক

জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছর রাখার পক্ষে জামায়াত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছর রাখার পক্ষে জামায়াত

জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছর রাখার পক্ষে জামায়াত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চার বছর মেয়াদের প্রস্তাব দিলেও জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ আগের মতোই ৫ বছর রাখার পক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবে একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। 
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধান নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। দ্বি-কক্ষ সংসদের ব্যাপারে আমরা আমাদের সহমত কমিশনকে জানিয়েছি। এখন এর প্রকৃতি, গঠন নিয়ে আলোচনা করছি। সংস্কার প্রস্তাবে চার বছর মেয়াদি সংসদ ও রাষ্ট্রপতির কার্যকালীন সময়ের বিষয়ে আমরা কমিশনকে জানিয়েছি যে আমরা এখানে মেয়াদ পাঁচ বছরকে সমর্থন জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলমান থাকবে, কারণ গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অত্যন্ত গুরুত্বের ও মনোযোগের সঙ্গে বিষয়গুলো বিবেচনা করছে।
ডা. তাহের বলেন, দেশ ও জাতির জন্য যা যা কল্যাণকর তা বিবেচনা করে মত দিচ্ছি। এখানে ব্যক্তি বা দল আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। বাংলাদেশ, এদেশের মানুষ ও তাদের ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু আসলে স্বাধীন হয়েছি কি না সেটা সময় বলে দেবে। আমরা আশা করি এই যে নতুন পরিবর্তন হয়েছে, যে সুযোগ এসেছে সেটা অতীতের মতো আবার হারিয়ে যাবে না। সেজন্য আমাদের অনেক বেশি সাবধান হতে হবে, প্রয়োজনে খানিকটা কঠোর হতে হবে।
জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর অবদান নিঃসন্দেহে সবার স্মরণে থাকবে। 
তিনি জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, বিচারিক এবং বিচার-বহির্ভূতভাবে আপনাদের (জামায়াতে ইসলামী) নেতাকর্মীরা নিপীড়ন, অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তারপরও আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন, সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। সেজন্য আপনাদের প্রতি আমাদের সবার সমর্থন থাকছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত ১৬ বছর ধরে যখন ফ্যাসিবাদী শাসনের নিপীড়ন বাংলাদেশকে জর্জরিত করে ফেলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। 
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামে জামায়াতের অবদান নিঃসন্দেহে সবার স্মরণ থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ এবং জাতি নতুন করে আবার পুনর্গঠিত হবে, যখনই আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারব সেখানেও আপনাদের ভূমিকা থাকবে এটা আমরা আশা করি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় জামায়াতের কর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। নেতারা কারাগারে আটক থেকেছেন, লড়াই-সংগ্রামে উপস্থিত হয়েছেন।
আলী রীয়াজ বলেন, আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আছি। আমাদের এই সুযোগ যারা তৈরি করে দিয়েছেন, বীর শহীদরা, তাদের কাছে আমাদের ঋণ আছে। যাতে কোনো অবস্থাতেই এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়ে যায়। যেন এ সুযোগকে কেন্দ্র করে আমরা এমন এক বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি, যেখানে কোনো অবস্থাতেই কাউকে নিপীড়নের মুখে না পড়তে হয়, বিচার বা বিচার-বহির্ভূত ব্যবস্থার মধ্যে যেন তাকে মোকাবিলা করতে না হয়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমাদের যাত্রা।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার ফল। তারই অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন এবং তাগিদ রাজনৈতিক দল, জনসমাজ, ছাত্র, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এসেছে। সেই প্রক্রিয়ায় আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করায় আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
অপরদিকে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নুরুল ইসলাম বুলবুল, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং আইনজীবী শিশির মনির।

×