ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক: আইন মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৪:০৬, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক: আইন মন্ত্রণালয়

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতীয় অনলাইন পোর্টাল ‘নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া’য় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে নিয়ে প্রকাশিত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারে আইন মন্ত্রণালয়। শুক্রবার রাতে পাঠানো এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্পর্কে একাধিক মিথ্যা, মানহানিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সেটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন, কাল্পনিক এবং সাংবাদিকতার নৈতিকতা পরিপন্থী।

বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল, ‘Bangladesh Legal Adviser Meets Top Lashkar-e-Taiba Operative Post Jammu & Kashmir Attack’। এতে দাবি করা হয়, কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল লস্কর-ই-তাইয়েবার একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া।

এছাড়া প্রতিবেদনে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ভুল পরিচয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে বৈধভাবে পরিচালিত আলেম ও ইসলামি সংগঠনগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতিবেদনে যাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হেফাজতে ইসলামের নেতা এবং কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে হাজার হাজার হেফাজত সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও সাজানো মামলার শিকার হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার ও আইনি সংস্কারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে হেফাজতের এই ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের আবেদন শুনতে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টার বৈঠক যেদিন হয়েছে বলে নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া দাবি করেছে, তার অন্তত তিন দিন আগেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলোচনা হয় শুধু আইনি প্রক্রিয়া ও মামলার তালিকা হস্তান্তর নিয়ে। বৈঠকের শেষে প্রতিনিধিদলের অনুরোধে একটি ছবি তোলা হয়, যা এমন সভায় প্রচলিত ও স্বাভাবিক রীতি।

আইন মন্ত্রণালয় জানায়, হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব বাংলাদেশের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণ করে এবং ঢাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাসগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করে। এসব কর্মকাণ্ড তাদের রাজনৈতিক বৈধতা ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততারই প্রতিফলন।

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অবস্থানও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ স্বাধীন মানবাধিকার সংগঠনগুলো পূর্ববর্তী সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও হেফাজতসহ বিরোধীদলীয় কর্মীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ করেছে এবং সমালোচনাও করেছে। এসব প্রতিবেদন প্রমাণ করে যে হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল, যা বর্তমান সরকারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

ভারতীয় গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তাঁর ফেসবুক পেজে ভারতের নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে ছিল একজন ভারতীয় নাগরিকের লেখা পোস্ট, যেখানে পেহেলগামের হামলার পর ভারতের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে সমালোচনা করা হয়। আসিফ নজরুল সেই পোস্টটি শেয়ার করে হামলার নিন্দা জানান। তবে বিভ্রান্তির আশঙ্কায় তিনি স্বেচ্ছায় পোস্টটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুছে ফেলেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়ার এ ধরনের প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও সত্যের পরিপন্থী। এতে বলা হয়, “আমরা সকল গণমাধ্যমকে অনুরোধ করছি, যেন তারা সংবাদ প্রকাশের আগে যথাযথ যাচাই করে এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নীতি অনুসরণ করে।”

বিবৃতিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/share/165tABBsiT/

 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×