
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ঈদুল আজহায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর আসছে। সরকার তাদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় মূল বেতনের ২৫ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পান। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় এই ভাতা দ্বিগুণ হবে। এতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ২২৯ কোটি টাকা।
এই সিদ্ধান্ত সম্প্রতি 'বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির' সভায় গৃহীত হয়েছে। সভায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবে অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ঈদুল আজহায় থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮ জন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের এই আন্দোলন তীব্র হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়, যাতে উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ করা হয়। ১৫ এপ্রিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির সভায় এই প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়।
তবে নতুন করে ২২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ না দিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের অর্থ থেকে এই টাকা সংকুলানের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ থেকে অব্যয়িত ২২৯ কোটি টাকা সংস্থান করে উৎসব ভাতা হিসেবে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্তভাবে অর্থ বিভাগের সম্মতি চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে গত ২১ এপ্রিল অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারকে চিঠি দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। চিঠিতে তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আগামী ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ দেওয়ার জন্য অর্থ সচিবকে অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুকূলে নতুন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে নতুন করে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই টাকা অব্যয়িত থেকে যাবে, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়তি বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে।
এছাড়া এমপিওভুক্ত অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ সরকারিকরণ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ফলে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খাতে ১৭৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এই অর্থ আগামী ঈদুল আজহায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে তারা আরও দাবি করেছেন, ভবিষ্যতে তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কর্মচারীদের সমপর্যায়ে বৃদ্ধি করা হোক।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এই উৎসব ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলস্বরূপ। সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য একটি বড় স্বীকৃতি এবং উৎসাহের বিষয়।
শিহাব